Breaking News

পাঠকের মতামতঃ ছাত্র আন্দোলনে অনন্য নজির

সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখছেন AIDSO পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড মণিশংকর পট্টনায়ক

শিক্ষায় অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ চার জন ছাত্রীসহ ১৩ জনকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বয়স্ক মহিলা পুলিশ কর্মীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে জেলে পাঠিয়ে ন্যক্কারজনক নজির গড়ল কোচবিহারে। যখন অর্থাভাবে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার আঙিনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে ঠিক এই সময় এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক এবং এই ঘটনা সারা পিচমবঙ্গ সহ গোটা ছাত্র সমাজে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

শুরুটা হয়েছিল কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। এই কলেজে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার ফলে বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী ভর্তি-ফি সংগ্রহ করতে পারেননি। সেই কারণে কলেজের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ‘স্টুডেন্টস ইউনিটি’ গড়ে তুলে কর্তৃপক্ষের কাছে ফি মকুব করার দাবি জানাতে থাকে। ২৭ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত একটানা ১৯ দিন আন্দোলন চলে। কলেজ কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করে কালক্ষেপ করতে থাকে। ১৬ আগস্ট ভর্তি প্রক্রিয়ার শেষ দিন ভর্তি হতে না পারা অসহায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যক্ষের দপ্তরের সামনে ধর্নায় বসে। কিছুক্ষণ পরে তৃণমূলের বহিরাগত ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী লাঠিসোঁটা নিয়ে উপস্থিত হয়। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশ আক্রমণ নামিয়ে আনে। এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করে ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডিএসও এবং নেতৃত্ব দেয় সংগঠনের সদস্য কলেজ ছাত্র সুজয় বর্মন। তিনি পুলিশের আক্রমণে গুরুতরভাবে আহত হয়ে হলদিবাড়ি হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আট ঘন্টা সংজ্ঞাহীন ভাবে ছিলেন। পরদিন ১৭ আগস্ট কোচবিহার পুলিশ সুপার দপ্তরে ডিএসও-র পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দিতে গেলে পুলিশ চারজন ছাত্রীসহ ১৩ জনের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৭ থেকে ২৫।

আজ যে অসহায় দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার কথা বলতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে এবং জেলে যেতে হচ্ছে এই ঘটনায় মানুষ স্তম্ভিত। শিক্ষায় ফি বৃদ্ধির ঘটনা শুধু হলদিবাড়ি বা কোচবিহারের সমস্যা নয়, গোটা ছাত্র সমাজের। কিন্তু যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাগুলি ছাত্রদের উপর প্রশাসন দিয়েছে তা নগ্ন রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের ঘৃণ্য রূপ।

এ দেশের নবজাগরণের পথিকৃৎ রামমোহন বিদ্যাসাগর ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মনীষীরা গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রসারে সার্বজনীন শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে অবৈতনিক শিক্ষার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, জ্ঞানভাণ্ডার মানব সভ্যতার সম্পদ। এই জ্ঞানভাণ্ডারের উপর সমস্ত মানুষের অধিকার আছে, তা কখনও বিক্রি করা চলে না। তাই শিক্ষা হবে সার্বজনীন, গণতান্ত্রিক। অর্থের কারণে যদি কেউ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় তা হলে শিক্ষা তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারাবে। বর্তমানে যেভাবে অতিরিক্ত ফি-র বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শিক্ষাকে কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকার করছে এবং তার প্রতিবাদ করলে পুলিশের দ্বারা যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নামিয়ে আনছে এতে রামমোহন বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীদের শিক্ষাচিন্তা ওপর হামলার সমান। যা সাম্প্রতিক হলদিবাড়ি কলেজের ঘটনা প্রমাণ করে।

বুদ্ধদেব রায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়