পাটের ন্যায্য দামের দাবিতে রাজ্য কনভেনশনে কমিটি গঠন

কনভেনশনে প্রতিনিধিরা

পাট চাষিরা চরম দুর্ভোগে। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, কঠোর পরিশ্রম করে পাট তৈরি করেও চাষিরা পাটের দাম পাচ্ছেন না। সার-বীজ-বিদ্যুৎ সহ কৃষি উপকরণ অগ্নিমূল্যে কিনে পাটের উৎপাদন খরচ কমপক্ষে কুইন্টাল প্রতি ৯ হাজার টাকা। সেখানে সরকার সহায়ক মূল্য বেঁধে দিয়েছে মাত্র ৫০৫০ টাকা, যা উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক। আবার সরকার যতটুকু দাম ঘোষণা করেছে, সেই দামে জেসিআই চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনতে না নামায় বাজারে ফড়েরা প্রতি কুইন্টাল ৪ হাজার টাকারও নিচে চাষিদের পাট বেচতে বাধ্য করছে।

 কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দুই সরকারের ভূমিকায় পাট চাষিরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। পাট উৎপাদক জেলার চাষিরা প্রশাসনের নানা স্তরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং আন্দোলনকে রাজ্য জুড়ে তীব্রতর করতে নদিয়া জেলার দেবগ্রামে ২৮ সেপ্টেম্বর এক কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের চার শতাধিক পাট চাষি প্রতিনিধি।

কনভেনশনে এক প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার সিন্থেটিক দ্রব্য উৎপাদনকারী পুঁজিপতিদের স্বার্থে পাট চাষ ও পাট শিল্পকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সিন্থেটিক দ্রব্য পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। অন্য দিকে পাট পরিবেশ বান্ধব। পাটজাত দ্রব্য সহজেই মাটিতে মিশে যায়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। পাট গাছ পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। সরকার এই সিন্থেটিক লবির স্বার্থে প্যাকেজিংয়ে সিন্থেটিক বস্তার বেশি ব্যবহার করে চলেছে। মার খাচ্ছে পাট শিল্প। বর্তমান গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও পরিবেশ সংকটের যুগে এই বাজারকে সরকার উদ্যোগ নিয়ে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পাট চাষ ও পাটশিল্প শ্রমনিবিড়। এখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ রাজ্যে কৃষি শ্রমিক ও চাষি মিলে প্রায় ৪০ লক্ষ পরিবার পাট চাষের সাথে যুক্ত। সরকারের নূ্যনতম দরদ থাকলে ৪০ লক্ষ পরিবারের ২ কোটি মানুষের স্বার্থকে এভাবে উপেক্ষা করতে পারে না।

কনভেনশনে দাবি তোলা হয়, ফার্মার্স কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ স্বামীনাথনের সুপারিশ ছিল ফসলের এমএসপি হওয়া উচিত কমপক্ষে উৎপাদন খরচের দেড়গুণ। এই সুপারিশ মেনে পাটের সহায়কমূল্য কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল, পাট চাষিদের ১০০ শতাংশ সার্টিফায়েড বীজ সরবরাহ করতে হবে ও স্বল্পসুদে ঋণ দিতে হবে, জেসিআই-এর অনুরূপ ‘জুট কর্পোরেশন অব বেঙ্গল’ গঠন করতে হবে। ফড়েদের দ্বারা কৃষকদের ঠকানো আটকাতে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনতে হবে, পাট পচানোর জন্য উপযুক্ত জলাধার নির্মাণ করতে হবে।

কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া কিসান খেতমজদুর সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস। কনভেনশন থেকে পাট চাষিদের ঐক্যবদ্ধ করে রাজ্য জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন পরিচালনার জন্য রুহুল আমিন ও দাউদ গাজিকে যথাক্রমে সভাপতি ও সম্পাদক এবং সেখ কামালউদ্দিন ও মনিরুল ইসলামকে সহ সভাপতি করে ৩২ জনের শক্তিশালী ‘সারা বাংলা পাট চাষি সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করা হয়।

কমিটি আগামী ৯ অক্টোবর জেসিআই-এর রাজ্য দপ্তরে বিক্ষোভ এবং উত্তরবঙ্গ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া সহ বেশ কয়েকটি জেলায় জেলাশাসক দপ্তরে ডেপুটেশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।