দুর্নীতির তদন্তের দাবির সামনে ‘চৌকিদার’ লুকোচ্ছেন কেন

প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়ালেন, আমিই সব, আমিই সকলের চেয়ে বড় ইত্যাদি অনেক কিছু বললেন– কিন্তু আসল প্রশ্ন, আদানিদের শেয়ার দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হবে কি না, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার আদানিদের কী কী সুবিধা দিয়েছে ইত্যাদি কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন না। আসলে তিনি গলার জোর দেখিয়ে পালিয়ে গেলেন। এই প্রধানমন্ত্রীই এক সময় নিজেকে দেশের চৌকিদার বলেছিলেন। আজ দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে সেই চৌকিদারই লুকোচ্ছেন কেন? তিনি যে পালাতে চাইছেন, দেশজোড়া প্রশ্নের মুখে ভয় পেয়েছেন, সংসদে অনর্থক আত্মআস্ফালনই যে তার প্রমাণ– এ কথা দেশবাসী ধরতে পারবেন না, সাধারণ মানুষকে এতটা বোকা কি তিনিও ভাবেন?

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গের আনা শেয়ার দামে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে দেশের মানুষ চিন্তিত। স্টেট ব্যাঙ্ক, এলআইসি-র ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ আদানিদের শেয়ারের দাম অর্ধেক হয়ে যাওয়াতেই মিলছে। ফ্রান্সের সংস্থা টোটাল এনার্জিস আদানিদের সঙ্গে তাদের যৌথ হাইড্রোজেন প্রকল্প স্থগিত করে দিয়েছে। ‘নরওয়ে ওয়েলথ ফান্ড’ আদানির পাঁচটি সংস্থায় থাকা তাদের সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার কথা ঘোষণা করেছে। মর্গান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল খোলা বাজারে আদানি গোষ্ঠীর বিক্রিযোগ্য শেয়ারের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিয়েছে। বলেছে, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ এখন মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকির কাজ।

সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিংবা সরকারের অর্থ দফতর সম্পর্কে অভিযোগ যে, আদানিদের রকেট গতির অস্বাভাবিক উত্থান দেখেও তারা এই দীর্ঘ সময় ধরে কিছু না জানার ভান করে থেকেছে। স্বাভাবিক ভাবেই দাবি উঠেছে, হয় যুক্ত পার্লামেন্টারি কমিটির তত্ত্বাবধানে কিংবা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে অতি দ্রুত প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আনা হোক।

এটি যে একটি ন্যায্য দাবি, অন্য কোনও উদ্দেশ্য না থাকলে কারও তা অস্বীকার করার কথা নয়। কারণ আদানি কোনও সাধারণ পুঁজিপতি নন, ধনকুবেরদের তালিকায় এই ঘটনার আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতে প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি, রেল, তেল, গ্যাস, কয়লা, বিমান ও সমুদ্র বন্দর প্রভৃতি বেশির ভাগই যেমন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তেমনই ব্যাঙ্ক এবং এলআইসি থেকে জনগণের সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ অর্থও তাদের শেয়ারে খাটছে। বিজেপি শাসনের গোড়ায় যেটি ছিল একটি সাধারণ ব্যবসায়িক সংস্থা, গত এক দশকেই রকেট গতিতে তা কী করে দেশের এক নম্বরে পরিণত হল, দেশের মানুষের কাছে তা এক গভীর রহস্য হিসাবেই রয়ে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই তদন্তের মধ্য দিয়ে সেই রহস্যের উন্মোচন দেশের মানুষের কাছে সরকার তথা প্রশাসনের স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্যই প্রয়োজন। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা বিনামূল্যে রেশন, শৌচালয়, আবাস প্রভৃতি পেয়েছেন, তাঁরা কি এই মিথ্যে, নোংরা অভিযোগ, গালিগালাজে বিশ্বাস করবেন? বলেছেন, মোদি দেশের ২৫ কোটি পরিবারের সদস্য। মোদি দুঃসময়ে তাঁদের পাশে থেকেছে। দেশের ১৪০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ সুরক্ষা কবচের মতো মোদির সঙ্গে রয়েছে।

রেশন, শৌচালয় কিংবা নলবাহিত জলের ব্যবস্থা করা যে কোনও সরকারের নূ্যনতম কর্তব্য। তার সঙ্গে আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করা না করার কী সম্পর্ক? প্রশ্নটা তো এখানে আদানিদের দুর্নীতি এবং সেই দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সরকারের যোগসাজশ নিয়ে–দেশের মানুষের জন্য সরকার কী করেছে না করেছে তা নিয়ে নয়। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা অভিযোগের উত্তরে অবান্তর কথা বলে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। সেই চেষ্টাতেই লোকসভা এবং রাজ্যসভায় তিনি কংগ্রেস সম্পর্কে অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু কংগ্রেস দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরতান্ত্রিক, ইতিহাসের বিকৃতির জনক বলে তাঁরও একই আচরণ করার অধিকার আছে, এটা কী রকম যুক্তি? কংগ্রেসের অপকীর্তির সাথে আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা বিরাট দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত না করার কী সম্পর্ক?

তবে কি প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন যে তদন্ত হলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে? গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেশের মানুষ জানেন, রকেট গতিতে আদানিদের দেশের এক নম্বর পুঁজিপতিতে পরিণত হওয়ার পিছনে এক সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এবং তারপর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গৌতম আদানি নিজেও কিছু দিন আগে এক স্বাক্ষাৎকারে মোদিজির মুখ্যমন্ত্রীত্বকে তাঁর জীবনের বড় টার্নিং পয়েন্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন। বিশ্বে ধনীদের তালিকায় আদানি ২০১৪ থেকে ২০২২-র মধ্যে ৬০৯ থেকে ৩ নম্বরে পৌঁছে গেছেন। ক’দিন আগে আদানিদের অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যখন মৌনব্রত নিয়ে চলছিলেন এবং উত্তর দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে এগিয়ে দিয়েছিলেন, তখন অর্থমন্ত্রী সরকারকে আড়াল করতে বলেছিলেন, আদানিদের শেয়ার কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বিষয়টি সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক্তিয়ার, এর সাথে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা কি দেশের মানুষকে বোকা ভেবে নিয়েছেন? হয়তো তাই, না হলে এত কাঁচা কথা তাঁরা বলতেন না।

পাইকারি হারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো যে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হল, প্রাকৃতিক সব সম্পদ যে নির্বিচারে তারা দখল নিচ্ছে, এ সব যেন সরকারের সম্মতি ছাড়াই আপনাআপনি হয়ে গেল? অস্ট্রেলিয়ায় আদানিদের কয়লা খনি কেনার জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর করতে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানকে যে জরুরি তলব করে অস্টে্রলিয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়াই? তা-ই যদি হয়, তবে তো বলতে হয়, সরকার নয়, স্টেট ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে আদানিই। প্রধানমন্ত্রী কি তা মানতে রাজি আছেন? দেশে আগামী বহু বছরের প্রয়োজন মেটানোর মতো কয়লা মজুত থাকা সত্তে্বও যে প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাকে অন্তত ১০ শতাংশ কয়লা অনেক বেশি দামে বিদেশ থেকে আমদানি করার নির্দেশ সরকার জারি করেছিল, তার কারণ কি অস্টে্রলিয়ায় আদানিদের খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা সরকারের বকলমে দেশের মানুষকে গছিয়ে দেওয়া ছিল না? ২০২২-এর জুনে যখন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ সে দেশের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়ছিল, তখন যে সে দেশের বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রকাশ্য শুনানিতে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষে তাঁকে বলেছেন, আদানিকে সরাসরি প্রকল্প দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে চাপ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রায় প্রতিটি বিদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছেন আদানি। সফর শেষেই সেই দেশগুলির সঙ্গে আদানিদের বিরাট বিরাট ব্যবসায়িক চুক্তিগুলি কি সেই সফরের ফল নয়? তা সে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি হোক কিংবা ইজরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি। সমুদ্র ও বিমান বন্দর, গ্রিন এনার্জি, হাইওয়ে প্রভৃতি একের পর এক দেশের সম্পদ যে বিজেপি সরকার আদানির হাতে তুলে দিয়েছে তা কি কোন সরকারি নীতি বা পরিকল্পনা ছাড়াই? অর্থ দপ্তর এবং নীতি আয়োগের আপত্তি সত্ত্বেও যে দেশের ছটি বিমানবন্দর কোনও রকম পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হল, তা কার নির্দেশে?

প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন, তদন্ত একবার শুরু করে দিলে তা আপন গতিতে কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা তিনিও জানেন না। তদন্তে সরকারের ভূমিকা, প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা উঠে আসবে। স্টেট ব্যাঙ্ক সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি এবং এলআইসি কার নির্দেশে আদানিদের শেয়ার অনেক বেশি দামে কিনেছিল, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদি কী ভাবে চাপ দিয়েছিলেন কিংবা আদানিদের এতখানি ‘উপকারের’ বিনিময়ে বিজেপি কী ভাবে উপকৃত হয়েছে, বিজেপি নেতারা কার চার্টার্ড বিমানে চেপে সফর করেন, ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে আদানিরা বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছে, অন্য ভাবেই বা কত টাকা দিয়েছে, তদন্তে এ সবই উঠে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কি এই ভয়েই তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছেন? কিন্তু তদন্ত এড়িয়ে তো আসলে তিনি দেশের মানুষের অভিযোগকেই মেনে নিচ্ছেন।

তদন্ত এড়াতে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের কাছে যে আবদার করেছেন তাকে অদ্ভূতই বলতে হয়। তিনি বলেছেন, হে দেশবাসী, তোমাদের আমি রেশনে চাল দিয়েছি। অতএব তোমরা আমার অন্যায়ের প্রতি চোখ বুজে থাকো আর চাল চেবাও। দেশের মানুষ সরকারের থেকে যা পাচ্ছেন, তা কারও দয়ার দান নয়– না কোনও দলের, না কোনও মন্ত্রীর। জনগণের করের টাকার একটা অতি সামান্য ভগ্নাংশই সরকারগুলি এ ভাবে তাঁদের জীবনের সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানের পরিবর্তে দান বা দয়া হিসাবে ছুঁড়ে দেয়। আর সেই করের বেশির ভাগটাই সরকার তুলে দেয় দেশের পুঁজিপতিদের ভাণ্ডারে। তাই লকডাউনের সময়ে যখন লাখে লাখে মানুষ অতিমারির শিকার হয়েছেন, হাজারে হাজারে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিয়েছেন, কয়েক কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন, কোটি কোটি মানুষ অর্ধেক বা তারও কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন, তখন দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের মুনাফা কারও ২০০ গুণ, কারও ৩০০ গুণ করে বেড়েছে। কয়েক শো নতুন ধনকুবেরের জন্ম হয়েছে। এই সময়ের তিন বছরেই আদানিরা তাঁদের বিপুল সম্পদের ৮৫ শতাংশই জমা করেছে। আর আজ প্রধানমন্ত্রী সামান্য খুদকুঁড়োর বিনিময়ে একটা বিরাট দুর্নীতিকে, একটা ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারিকে বিনা প্রশ্নে দেশের মানুষকে মেনে নিতে বলছেন। ‘না খাউঙ্গ, না খানে দুঙ্গা’ বলে ঠিক উল্টোটাই তিনি করেছেন না কি? এই দুষ্কর্মের ভার তাঁকেই বইতে হবে, জনগণ বইবে না। যদি সত্যিই সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীর এতে কোনও সংস্রব না থাকে তবে তদন্তের মাধ্যমেই তিনি তা প্রমাণ করুন।

দেশের মানুষকে আজ এ কথাটি খুব স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে যে, ভারত চরিত্রগত ভাবে একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করাই রাষ্টে্রর একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু কালের নিয়মে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে পুঁজিবাদ আজ পচে গিয়েছে। দুর্নীতি, অর্থাৎ জনগণের সম্পত্তি, দেশের সম্পদ বেআইনি ভাবে লুঠ করা, সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে সেগুলি হাতিয়ে নেওয়া এই ব্যবস্থার অঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে। আজ যে দল বা যে নেতা-ই ক্ষমতায় বসে পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থার সেবা করবে, নানা কথার ছলে এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে, সেই দল, সেই নেতা দুর্নীতির অংশীদার হবেই। পুঁজিপতিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলি, তার নেতারা আজ দুর্নীতির সম্পর্কেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কেউ কেউ একে স্যাঙাৎতন্ত্র বলেন। আসলে আজ পুঁজিবাদের এটাই স্বরূপ। আদানিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি আজ সেই সম্পর্কেই জড়িত। মোদির মতো নেতারা পুঁজিপতিদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার হিসাবে কাজ করে। তারা যত রকম বৈধ-অবৈধ উপায়ে পুঁজিপতিদের সুবিধা পাইয়ে দেন। তাদের পুঁজির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট দল বা নেতা পেয়ে যায় মসনদে স্থায়ী ভাবে বসার অনুমোদন। তার জন্য অর্থ, প্রচার প্রভৃতি যা কিছু লাগে তা জোগায় সুবিধাভোগী পুঁজিপতিরা। আর এই ম্যানেজার দেশের মানুষকে বোঝায়, দেখো, দেশের কত উন্নতি হচ্ছে। দেখো, আমাদের দেশেরই একজন বিশ্বে তৃতীয় ধনবানের আসন দখল করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। বুভুক্ষু জনতা চোখ কচলে সে দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, আমার বেকারি, আমার বিনা চিকিৎসায় ভোগা, আমার অনাহার– এগুলো কি তা হলে শুধুই মায়া? নেতা বলেন, এ সবই তোমার অপদার্থতা। পরিশ্রম কর, তুমিও একদিন পারবে। বছরের পর বছর ধরে এ-ই চলে আসছে।

আজ এ কথাটিও নিঃসংশয়ে বুঝতে হবে, সরকারের এই যথেচ্ছ দুর্নীতি আটকাতে হলে, তার সর্বনাশা পরিণতি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে আজ শুধুমাত্র একটি সরকার বদলে আর একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসালেই তা হবে না। চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বলে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারকে সরিয়ে দেশের মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তার পরিণতি মানুষ দেখতে পাচ্ছে। এ রাজ্যে সিপিএম সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণে অতিষ্ঠ মানুষ তাদের সরিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তারও পরিণতি আজ স্পষ্ট। এই অবস্থায় দুর্নীতি-শোষণ-লুণ্ঠনের হাত থেকে কিছুটাও রেহাই পেতে হলে স্তরে স্তরে জনগণের সংগ্রামী কমিটির নেতৃত্বে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তুলে সরকার ও প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই ভাবে জনগণ তথা শোষিত মানুষের জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সমাধানের দাবি নিয়ে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তুলে তার আঘাতে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া যেমন দুর্নীতির স্থায়ী অবসান হবে না, তেমনই মানুষও শোষণ, বঞ্চনা, লুণ্ঠনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।