লাশের পর লাশ বাড়ে, তবু সরকার বন্ধ করে না অবৈধ বাজি কারখানা

স্বজন হারানো মানুষের সাথে কথা বলছেন দলের প্রতিনিধিরা

পোড়া মাংস আর বারুদের তীব্র গন্ধে এগরা মহকুমার খাদিকুল উঠে এসেছে সংবাদের শিরোনামে। গত ১৬ মে ভরদুপুরে কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগের অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের শব্দে চারিদিক কেঁপে ওঠে। দলা পাকানো উঁচু হয়ে ওঠা ধোঁয়ার দৃশ্য বহু দূরের মানুষজনও দেখে আঁতকে উঠেছেন। বিস্ফোরণে কারখানার টিনের চাল টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বেশ কয়েকজনের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছে পাশের এক পুকুরে। স্বজন হারানো কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। মর্মান্তিক বিস্ফোরণ কেড়ে নিয়েছে ৫ জন মহিলা সহ ১২টি তাজা প্রাণ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় এলাকার মানুষের ধারণা, শুধু বাজি নয় অবৈধভাবে বোমাও তৈরি হত এই কারখানায়।

এর আগেও বাজি কারখানার জন্য সাধুয়াপোতা, নারুয়াবিলা, পশ্চিম ভাঙামারি, হিরাকুনিয়া পুরুন্দায় বিস্ফোরণ হয়েছে। খাদিকুলে কেবল প্রথমবার এই বিস্ফোরণ ঘটল তা নয়, ১৯৯৫ সালে সিপিএম আমলে ওই ভানু বাগেরই কারখানায় বিস্ফোরণ প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল পাঁচ জনের। সিপিএম প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ২০০১ সালে এই কারখানায় আবার বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাণ যায় তিনজনের। আর এবার মৃত্যু হল ১২ জনের। ভানু বাগ নিজে পালিয়েও বাঁচতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগুন তার প্রাণ কেড়ে নিল ঘটনার তিন দিন পর।

 দুর্ঘটনার পরদিনই এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের উদ্যোগে এগরা মহকুমা শহরে বিক্ষোভ মিছিলের পর এসডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। পর দিন গোটা জেলা জুড়েই শোকবেদি করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয় এবং এই অবৈধ কারখানা বন্ধের দাবিতে পথসভা হয়। দলের পূর্ব মেদিনীপুর (দক্ষিণ) জেলা সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক কমরেড অশোকতরু প্রধান সহ চার জনের প্রতিনিধি দল স্বজনহারানো মানুষের কাছে গিয়ে সহমর্মিতা জানান।

এত ক্ষয়-ক্ষতি, মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে এ সব বন্ধে কোনও সরকারই উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের চোখের সামনেই ভানু বাগের মতো অসংখ্য অবৈধ বাজি কারখানা চলছে রমরমিয়ে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এই বাজি কারখানা অবৈধভাবে চলতে পারে?

খাদিকুলের বিস্ফোরণের ৫ দিন পর আবার বিস্ফোরণ ঘটল দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজে। সেখানে মৃত্যু হয় ৩ জনের। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার সাথে কি অবৈধ বাজি কারখানার কোনও সম্পর্ক আছে? আগামী নির্বাচনকে রক্তাক্ত করার জন্যই কি তৈরি হচ্ছিল বোমা? প্রতিনিধি দলের কাছে মানুষজনেরা বলেছেন আর কত জনের প্রাণ বলি হলে বন্ধ হবে এই অবৈধ কারখানা?

এক প্রতিনিধিকে জড়িয়ে ধরে একজন অসহায়, সদ্য স্বামীহারা গৃহবধূ প্রশ্ন করেন, আমরা বাঁচবো কী করে? এ ব্যবসা চিরতরে বন্ধ হবে কী করে? তখন ওই প্রতিনিধির মুখ থেকে একটাই শব্দ উচ্চারিত হয়েছে ‘প্রতিবাদ’। প্রতিবাদই যে কোনও সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ। প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড অশোকতরু প্রধান বলেন, আপনারা এই শোককে শক্তিতে পরিণত করুন, ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই অবৈধ বাজি কারখানা বন্ধের দাবিতে গণকমিটি গঠন করে আন্দোলন করুন। এলাকায় গণজাগরণ ঘটিয়ে বাজি কারখানাকে সমূলে উচ্ছেদ করুন। মানুষ এই মৃত্যু-ব্যবসা চায় না।