রামমন্দির নিয়েও দুর্নীতি বিজেপির

‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’– বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মেহুল ভাই, ললিত মোদি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়ার মতো অনেকেই বেশ আয়েস করে হাজার কোটি, শত কোটি টাকা খেয়ে নিশ্চিন্তে বিদেশে উড়ে গেছেন। এ পর্যন্ত জানা ছিল। কিন্তু তিনি ক্যামেরা সাক্ষী রেখে সটান শুয়ে পড়ে যে রামমন্দিরের শিলান্যাসকে একেবারে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বললেন– তারপর সেই মন্দিরের জমি নিয়ে চলছে দুর্নীতি! তাও করছেন তাঁরই দলের লোকেরা! অবাক হওয়ার কিছু নেই। ‘অতিভক্তি’-র লক্ষণ যে কিসের ইঙ্গিত তা তো প্রবাদেই আছে!

জানা গেছে, অযোধ্যায় বিজেপির মেয়র ঋষিকেশ উপাধ্যায়, বিজেপি বিধায়ক বেদপ্রকাশ গুপ্ত, প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক গোরক্ষনাথ বাবা সহ অন্যান্যরা জমি কেনাবেচা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। এ অভিযোগ বিরোধীদের নয়। অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মন্দিরের জমি কেনাবেচায় দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং বেআইনি নির্মাণে অভিযুক্ত ৪০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় রয়েছেন বাঘা বাঘা ওই নেতারা।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৯ সালে অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে মন্দির করার পক্ষে রায় দিলে বিজেপি নেতারা জয়ের জন্য দেশজুড়ে উৎসবে মেতেছিলেন। সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ মানুষ কিন্তু বুঝেছিলেন এটা ধর্ম নয়– ভোট ব্যবসা। বাবরি মসজিদ ভাঙার ২৩ দিন পরে ওই ভগ্নস্তুপে দাঁড়িয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব মাধব গোডবোলে বলেছিলেন, ‘যদিও আমি একজন ধর্মবিশ্বাসী মানুষ, তবুও …সেদিন অযোধ্যায় আমি কোনও টান অনুভব করিনি। মন থেকে অনুভব করেছি শঠতা, প্রতারণা আর ভয়াবহ হিংসার জোরে তৈরি মন্দিরে আমার দেবতা বাস করতে পারেন না'(আনফিনিশড ইনিংস)। ভোট ব্যবসা জমিয়ে নিয়ে এবার এই ধর্মব্যবসায়ীরা নেমেছেন মন্দিরের জমি লোপাট করে নিজেদের পকেট ভরানোর কাজে। মন্দিরের নামে পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর তৈরির চেষ্টা চলছে। মন্দির করার জন্য জনসাধারণ জমি দান করেছিলেন। সেই জমি একর প্রতি ১৮.৫০ কোটিতে বিক্রি হচ্ছে।

দুর্নীতির খবর কি বিজেপি শীর্ষ নেতাদের অজানা ছিল? না। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির স্থানীয় সাংসদ লাল্লু সিংহ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। ২০২১ সালে জমি দুর্নীতি নিয়ে হইচই হতেই রাম জন্মভূমি ট্রাস্ট ‘স্বচ্ছতার’ ব্যাপারে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল।

তাহলে তদন্ত হল না কেন? ‘স্বচ্ছ’ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত করালেন না কেন? তিনি কি কেচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন? আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিত শাহই বা চুপ করে থাকলেন কেন? এই যে খেতে দিচ্ছেন– তা নিজেদের খাওয়াটাকে নিশ্চিত করে নেওয়ার জন্যই নয় কি! খেয়ে চলেছেন তো তাঁরা সর্বত্রই।

মধ্যপ্রদেশের পরীক্ষা কেলেঙ্কারি ‘ব্যাপম’এর কথা মনে আছে? কোটি কোটি টাকার ওই কেলেঙ্কারি চাপা দিতে ৩৩ জনকে খুন করেছিল স্বার্থান্বেষী চক্র– পরীক্ষার্থী, সাংবাদিক থেকে বিচারপতি কেউ বাদ যাননি ওই ভয়ঙ্কর ক্ষমতাশালী চক্রের হাত থেকে। কোনও অদৃশ্য হাতের জাদুকাঠিতে একজনও ধরা পড়েনি, শাস্তি তো দূরের কথা। কর্ণাটকে রেড্ডি ভাইদের খনি কেলেঙ্কারি, ইয়েদুরাপ্পার জমি কেলেঙ্কারি, কার্গিলে কফিন কেলেঙ্কারি সহ অজস্র দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কবজায় থাকা পিএম কেয়ার ফান্ডের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা আজ আর দেশের মানুষের অজানা নয়। ইডি, সিবিআইয়ের চোখে বিজেপি এতই পবিত্র নাম যে, এ দলের স্ট্যাম্প গায়ে থাকলে তারা চোখ বুজে ফেলে। এখন অযোধ্যায় ধর্মকে পুঁজি করে দুর্নীতিতে মেতেছে তারা। কলিকাল আর কাকে বলে! বিজেপির মন্দির যে ধর্মের নয়, তা আসলে ভোটের, করে খাওয়ার জায়গা– অযোধ্যার জমি কেলেঙ্কারির ঘটনা সে কথার সবচেয়ে বড় প্রমাণ নয় কি?