তিস্তা ও জলঢাকার জলের সুষ্ঠু বন্টনের দাবি বাসদ (মাক্সর্বাদী)-র

তিস্তা ও জলঢাকা নদীর জল দুটি খাল কেটে ঘুরিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে তাতে তিস্তা নদী বাংলাদেশে পুরোপুরি জলশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাক্সর্বাদী)-র কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা। ২১ মার্চ এক বিবৃতিতে তিনি এই আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এমনিতেই ভারতের গজলডোবা বাঁধের কারণে শুষ্ক মরসুমে তিস্তাতে জল কমে যায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদী বর্ষার তিনমাস ছাড়া বাকি সময় জলশূন্য হয়ে পড়বে। তাঁদের আশঙ্কা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে প্রবাহিত ধরলা নদীও তিস্তার মতোই শুকিয়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সেচব্যবস্থা চরম দুর্গতির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের ‘তিস্তা সেচ প্রকল্প’ অকার্যকর হয়ে পড়া, ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমার, বুড়ি তিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট বড় নদ-নদীতে জলাভাবের জন্যও বাসদ (মাক্সর্বাদী) ভারত বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ন্যায্য চুক্তি না হওয়াকে দায়ী করেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ সরকারের কাছে বাসদ (মাক্সর্বাদী) বলেছে, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ৫৭টি অভিন্ন নদীর ৫৪টিই এসেছে ভারত থেকে। ফলে দু’দেশের মধ্যে নদীর জলের ন্যায্য বণ্টন, সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ, জনগণের বাধাহীন যাতায়াত এসব সমস্যা নিয়ে জনস্বার্থের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় আলোচনা ও উদ্যোগ গ্রহণ ছিল অত্যন্ত জরুরি। অথচ বাংলাদেশ সরকার নরম সুরে উদ্বেগ প্রকাশ ও দিল্লিকে চিঠি দেওয়ার গতানুগতিক দায়সারা তৎপরতাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তাঁদের দাবি, তিস্তার মতো একটি আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীর জল কোনও দেশ একতরফাভাবে আটকাতে বা তুলে নিতে পারে না। এ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইনও বাংলাদেশের পক্ষে যায়। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ সরকার সহ সব শাসকগোষ্ঠীর সব সময় প্রচেষ্টা থেকেছে জনগণের এসব সমস্যাকে সামনে রেখে নিজেদের লাভালাভ, পারস্পরিক লেনদেন, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। বিবৃতিতে বাসদ (মাক্সর্বাদী) বলেছে, ‘বর্তমান সময়ে এর প্রত্যক্ষ ফলাফল হচ্ছে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট করিডোর, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়, এবং সর্বোপরি ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের শাসকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত।’ তাঁরা বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত ফোরামকে পাশ কাটিয়ে গোপন দ্বিপাক্ষিক লেনদেন নির্ভর আলোচনায় শাসকদের বিশেষ আগ্রহের এক জাজ্বল্যমান উদাহরণ হল জাতিসংঘ জলপ্রবাহ সনদে (ইউএন ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশন, ১৯৯৭) বাংলাদেশের স্বাক্ষর না করা।’ কনভেনশনের সাত নম্বর ধারা উল্লেখ করে কমরেড মাসুদ রানা বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী থেকে জল তুলে নিচ্ছে, ফলে তারা এই কনভেনশনে সই করতে রাজি নয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের সরকার কেন সই করল না? তাতে বাংলাদেশ জলের দাবি জোরালো ভাবে তুলতে পারত। নদীর জল সহ সমস্ত বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ আদায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়গুলো উত্থাপন করার দাবি সরকারের কাছে জানিয়েছে বাসদ (মাক্সর্বাদী)।