Breaking News

রেহাই পেলেন না মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যানও বেটিদের কেমন বাঁচাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান দেখতে বেরিয়েছিলেন রাতের দিল্লিতে মহিলাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন। এক মদ্যপ তাঁকেই গাড়িতে তুলে নিয়ে অপহরণ করতে চেয়েছিল। তিনি বাধা দিয়ে গাড়িতে হাত ঢুকিয়ে দুষ্কৃতীকে ধরতে গেলে গাড়ির কাচ তুলে দিয়ে তাঁর হাত আটকে বেশ কিছুটা টেনে নিয়ে যায় সেই মদ্যপ। কমিশনের দলবলের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে ১৯ জানুয়ারি দিল্লি এইমস হাসপাতালের সামনে। কিছুদিন আগেই দিল্লির রাস্তায় এক তরুণীকে গাড়িতে হেঁচড়ে ১১ কিলোমিটার নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে আর একদল মাদকাসক্ত এবং মদ্যপ দুষ্কৃতী, যাদের একজন আবার বিজেপির নেতা।

মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যানের ঘটনার কয়েক দিন আগেই সামনে এসেছে আরও এক ভয়াবহ সংবাদ– দেশের হয়ে অলিম্পিক এবং এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জেতা বিনেশ ফোগত সহ জাতীয় স্তরের একাধিক মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ জানিয়েছেন, ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপির এমপি ব্রিজভূষণ শরণ সিং সহ একাধিক কর্মকর্তা এমনকি জাতীয় কোচদের অনেকেই তাঁদের উপর যৌন নির্যাতন এবং নানা হেনস্থা করে চলেছেন বহু বছর ধরে। এই ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গেলেই তাঁদের দল থেকে বাদ দেওয়া, প্র্যাকটিস করতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি খুন করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। ভয়ে জাতীয় স্তরের এই কুস্তিগিররা এতদিন কোনও অভিযোগই জানাতে পারেননি। যাঁদের ওপর দেশের প্রতিভাবান মহিলা খেলোয়াড়দের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাঁরাই বছরের পর বছর ধরে এই মেয়েদের উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন! আন্তর্জাতিক স্তরে সফল মহিলা খেলোয়াড়রাও এই নিয়ে অভিযোগ জানাতে ভয় পেয়েছেন! একটা দেশের সরকারের পক্ষে এর থেকে লজ্জার আর কী থাকতে পারে?

অথচ এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী একটি কথা বলেননি। নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বিষয়টা দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, ব্রিজভূষণ সহ অপরাধীদের ফেডারেশন থেকে সরানো, শাস্তি, তদন্ত ইত্যাদি নিয়ে বহু টালবাহানা করেছেন। জানা যাচ্ছে বিনেশ ফোগত ২০২১-এর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীকে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিভাবান মেয়েদের বাঁচানোর কোনও তাগিদ অনুভব করেননি। না হলে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযোগ নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিতে এত দ্বিধাগ্রস্ত কেন? বিজেপি এমপি ব্রিজভূষণ সাহেব উত্তরপ্রদেশে ছ’টি জেলায় হিন্দুত্ববাদী মেরুকরণের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। প্রশ্ন উঠছে সে জন্যই কি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সব জেনেও চুপ করে বসে থেকেছেন! তাঁর ‘বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও’ স্লোগানের এই কি পরিণতি? দেশের জাতীয় স্তরের মহিলা খেলোয়াড়দের সাথে এমন ঘটনা ঘটতে পারলে বাকি ‘বেটি’-দের অবস্থা কেমন তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়।

এমনিতেই ভারতে মেয়েদের খেলাধূলায় আসতে হলে বহু বাধা ডিঙিয়ে এগোতে হয়। পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ধরনের আনুকূল্য পাওয়াই তাদের কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে পরিগণিত হয়। তার উপর এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তাঁদের এগিয়ে আসার পথটা হয়ে পড়ে আরও দুর্গম। সে জন্যই সরকারের কর্তব্য ছিল অভিযোগ পাওয়া মাত্র অভিযুক্তদের প্রভাব-প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক পরিচয় কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই যেখানে নীরবতার অস্ত্রে অভিযোগ চাপা দিতে চেয়েছেন, সেখানে অন্যদের সাধ্য কী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার! বিজেপির ঝুলিতে নারী নির্যাতনকারী, ধর্ষক এমএলএ-এমপি-নেতার অভাব অবশ্য আগেও ঘটেনি। উত্তরপ্রদেশে তাদের এক প্রাক্তন এমএলএ কুলদীপ সেঙ্গার ধর্ষণ এবং খুনে অভিযুক্ত, গুজরাটে বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও তাঁর সঙ্গীদের খুনে অভিযুক্তরা সকলেই বিজেপির আশীর্বাদধন্য। জম্মুর কাঠুয়ায় বিজেপি মন্ত্রী-এমএলএদের এক ধর্ষক ও খুনির সমর্থনে মিছিল করতে দেখা গেছে। তাই ব্রিজভূষণ সাহেব ও তাঁর সঙ্গীরা যে বিজেপির পরম্পরাই বহন করছেন, তা বলা যায়।

খোদ রাজধানী দিল্লিতে মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যানের উপর আক্রমণকেও বিজেপি নেতা নেত্রীরা উড়িয়ে দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন, এটা সাজানো ঘটনা। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে থাকেন একই ধরনের মন্তব্য করার জন্য। রাজধানী দিল্লির পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অধীন। সেই দিল্লিতে এখন প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও মহিলা নির্যাতন, অপহরণ এমনকি খুনের শিকার হচ্ছেন। বিরোধীদের দমন করতে, জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়ার সরকারবিরোধী ছাত্রদের দেশদ্রোহের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে দিল্লি পুলিশ যত তৎপর, মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার ক্ষেত্রে তার সামান্য অংশও চোখে পড়ে না।

জাতীয় স্তরের কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থার ঘটনায়, এআইএমএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক ছবি মহান্তি ১৯ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে দ্রুত তদন্ত করে বিজেপির এমপি তথা কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সহ সমস্ত অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, এই চাঞ্চল্যকর ও মারাত্মক অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বদলে বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এই অভিযুক্ত প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠন।

এআইএমএসএস দাবি করেছে, প্রতিভাবান মেয়েরা যাতে অবাধে খেলা সহ সমস্ত ক্ষেত্রে উঠে আসতে পারে তার জন্য মুক্ত, স্বচ্ছ ও সম্মানজনক পরিমণ্ডল নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।