Breaking News

মৈপীঠ – তৃণমূলী গণতন্ত্রের নমুনা জনসভা করতেও হাইকোর্টে মামলা করতে হয়

কেমন গণতন্ত্র চলছে পশ্চিমবঙ্গে, তার নমুনা পাওয়া গেল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কুলতলি বিধানসভার মৈপীঠে। সেখানে সামান্য একটা গ্রামীণ জনসভা করার জন্য অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে স্থানীয় থানা। দু-মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে বারবার আবেদন করলেও স্থানীয় থানা তা বারবার নাকচ করে দিয়েছে।

কেন থানা জনসভার অনুমতিটুকু দিচ্ছে না? রাজ্যের সর্বত্রই সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, থানাগুলি শাসক দলের অলিখিত পার্টি অফিসের শাখাতে পরিণত হয়েছে। মৈপীঠের কোস্টাল থানা ও কুলতলি থানার পুলিশও নিজেদের আচরণে তা প্রমাণ করে চলেছে।

এই মৈপীঠ চাষি আন্দোলন, মৎস্যজীবীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সমস্ত স্তরের গরিব খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম। আন্দোলন করতে গিয়ে শুধু একটি পঞ্চায়েত এলাকাতেই শাসক দলের পোষা গুণ্ডা এবং পুলিশের আক্রমণে প্রাণ দিয়েছেন এস ইউ সি আই (সি) দলের বহু নেতা-কর্মী। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস, তারপর সিপিএম বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস যারা যখন সরকারে এসেছে তারাই পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র দল এস ইউ সি আই (সি)-কে নিশ্চিহ্ন করতে খুনে বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। শাসকদলকে তোয়াজ না করলে মারধর, মহিলাদের সম্ভ্রমহানি, হুমকি, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, জমির ফসল কেটে নেওয়া, পুকুরে বিষ ঢেলে দেওয়া এসব চলছেই।

এর মধ্যেই এস ইউ সি আই (সি) মৈপীঠ আঞ্চলিক কমিটি উদ্যোগ নিয়েছে মহান মাক্সর্বাদী দার্শনিক ও চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর চিন্তা ও শিক্ষা প্রচারের নানা কর্মসূচি গ্রহণের। সেই উদ্দেশ্যে একটি জনসভার জন্য স্থানীয় থানার কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দু-মাস ধরে বারবার পুলিশের কাছে অনুমতি চাইলেও শাসকদলের কথায় পুলিশ প্রশাসন জনসভার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে মামলা করে জনসভার অনুমতি আদায় করে এস ইউ সি আই (সি)।

১৪ ডিসেম্বর মৈপীঠ অঞ্চলের শনিবার বাজারে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভা পণ্ড করতে আগের রাত থেকে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি ও হুমকি দিতে থাকে। সে সব উপেক্ষা করে শত শত মানুষ এই জনসভায় উপস্থিত হন। সভার আগে দৃপ্ত মিছিলে অংশ নেন কয়েক শত মানুষ। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ ডাক্তার তরুণ মণ্ডল, প্রাক্তন বিধায়ক অধ্যাপক তরুণ নস্কর এবং প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার।

তাঁরা বলেন, অত্যাচারীরা কখনও শেষ কথা বলে না। সমস্ত সন্ত্রাস দুর্নীতি স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে আবার মৈপীঠের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াবেই। দেশ জুড়ে বিজেপি এবং রাজ্যে রাজ্যে টিএমসি, সিপিএম সহ অন্যান্য দলের মানুষমারা নীতির বিরুদ্ধে এসইউসিআই(সি) লড়ছে। সেই লড়াইয়ে মৈপীঠের মানুষ জান-প্রাণ দিয়ে আগেও যেমন থেকেছেন, আগামী দিনেও তাঁরা একইরকম ভাবে তাতে অংশ নেবেন।