Breaking News

বিনোদন ভাতা ১৪ হাজার বাড়ল (পাঠকের মতামত)

রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আমলাদের বিনোদন ভাতার নামে এক ধাক্কায় কুড়ি থেকে চৌত্রিশ হাজার টাকা মাসিক ভাতা বরাদ্দ করা হল। বর্তমানে যেখানে লক্ষ লক্ষ উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকার, পেটের দায়ে অসংখ্য পিএইচডি ডিগ্রি হোল্ডারও ডোমের চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন, হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতী যেখানে নামমাত্র টাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অত্যন্ত অসম্মানজনক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন এই বৃদ্ধি অযৌক্তিক, অমানবিক। করোনায় অর্থনৈতিক মন্দার দোহাই দিয়ে যখন সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কোটি কোটি কর্মরত মানুষকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে, ঠিক সেই সময় তিনলাখি-চারলাখি আমলাদের মাস মাইনে কার্যত এক ধাক্কায় এতটা বাড়িয়ে দেওয়া হল, যা বহু কর্মচারীর সামগ্রিক মাস-মাইনের থেকেও বেশি।

কিছুদিন আগেই আমলা ও পুলিশদের বিশেষ ভাতা হিসেবে পাঁচ থেকে দশ হাজার পর্যন্ত মাসিক ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার সুযোগ একেবারে তৃণমূল স্তরের বিডিও-রা এবং সমস্ত স্তরের পুলিশকর্মীরাও আজ পাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই বিনোদন ভাতাও উক্ত স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো আজ শুধু সময়ের অপেক্ষা। একদিকে সরকার বলছে টাকা নেই, তাই তারা চাকরি দিতে পারছে না। অথবা খুবই অল্প মাইনেতে ভলেন্টিয়ার হিসেবে শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী সবই নিয়োগ করা হচ্ছে। অথচ এভাবে বিপুল ভাতাবৃদ্ধি করছে আমলাদের।

টাকা না থাকার অজুহাত দেখালেও কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার এমপি-এমএলএদের ভাতা বারবার বাড়াতে কুন্ঠাবোধ করে না।

ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজ রাজ্যজুড়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য বকেয়া ডি এ না দিয়ে এবং বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে রেখে, দফায় দফায় আমলা ও পুলিশের বেতন ও বিশেষ বিশেষ ভাতা বাড়িয়ে চলেছে।

যেখানে ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীরা গত দু’বছর ধরে দিন রাত এক করে করোনার অতিমারি সামলেছেন, অনেকেই দীর্ঘদিন পরিবার থেকে আলাদা থাকতে বাধ্য হয়েছেন, পরিবারকে দেখতে না পারার ফলে তাদেরই পরিবারের সদস্যরা অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। অনেকে ভাড়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ পর্যন্ত হয়েছেন। গত দু’বছরে তাদের ভাতা কিন্তু এক পয়সাও বাড়ানো হল না। উপরন্তু ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। ডাক্তারদের রুরাল অ্যালাউন্স/বিশেষজ্ঞ ভাতা/প্রশাসনিক ভাতা আজও মাসে দু’শো টাকা। একি অধিকার না দয়ার দান! আশাকর্মীরা দিন রাত এক করে করোনা প্রতিরোধে কাজ করলেও তাদের ভাতা তো বাড়ানোই হয়নি, উল্টে তাদের ন্যায্য ভাতাও গত ন’মাস দেওয়া হয়নি। সরকারের এই বৈষম্য সৃষ্টিকারী ভূমিকা আজ বড় উৎকট।

আসলে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের রাজ্য চালাতে দরকার স্বৈরতান্ত্রিক আমলা ও পুলিশের দল। আর লাগে দুয়ারে সরকার, লক্ষীর ভাণ্ডার, মেলা-খেলার মতো চটকদার রাজনীতি। কোথায় সাধারণ মানুষ মরল, কোথায় উচ্চশিক্ষিত বেকাররা ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ালো, মানুষ বিনা চিকিৎসায়, বিনা অন্নে মারা গেল– তার যায়-আসে না।

ডাঃ সজল বিশ্বাস

সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ২২ সংখ্যা ৭ জানুয়ারি ২০২২