পুঁজিপতিদের স্বার্থেই আদিবাসীদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা বিজেপি সরকারের

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে আদিবাসীদের উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন সাজছে। অন্য দিকে তারা একই সময় আদিবাসী, বনবাসীদের নির্বিচারে উচ্ছেদের নকশা তৈরি করছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ২৮ জুন ‘বন সংরক্ষণ-২০২২’ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই নির্দেশিকার বলে গ্রামসভার অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার জঙ্গলের জমি অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য বেসরকারি বৃহৎ শিল্প সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারবে। অবশ্য এও বলা হয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ বনসৃজনের জন্য দেয় অর্থ এই শিল্প সংস্থার কাছ থেকে সরকার সংগ্রহ করে নিতে পারবে। অর্থাৎ প্রথমে আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসীদের অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার জঙ্গল কেটে কল-কারখানা স্থাপনের অধিকার বৃহৎ শিল্প সংস্থার হাতে তুলে দেবে। তারপর অরণ্যের অধিকার সংক্রান্ত বিষয় রক্ষিত হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের় বলে দায় এড়াবে। এইভাবে অরণ্যের অধিকার আইনকে ক্ষমতাহীন করে দিল বিজেপি সরকার। বন সংরক্ষণ বিধি-২০২২ যেন ‘জঙ্গলের অধিকার আইন-২০০৬’-এর কফিনের শেষ পেরেক। এই নিয়ম কার্যকর হলে হাজার হাজার আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসী পরিবার উচ্ছেদ হবে। অথচ এদের জীবন জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের বাস্তবে কোনও দায়িত্বই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি গ্রহণ করেনি, তারা বাধ্য হয়েছে জঙ্গল থেকে ফল-মূল, শাক-পাতা, ঝোপ-ঝাড় থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে পাশ্ববর্তী হাটে-বাজারে বিক্রি করে কোনও রকমে জীবন যাপন করতে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর এক নির্দেশে ১৬ রাজ্যের ১১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৪৬ জন আদিবাসী ও বনবাসী পরিবারকে তাঁদের বংশপরম্পরাগত ভাবে বসবাসের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের বিপদ তৈরি হয়েছিল। অরণ্যের অধিকার আইন-২০০৬ অনুসারে বন পাট্টার জন্য পশ্চিমবঙ্গে দাখিল করা আবেদনের ৮৬ হাজার ১৪৪টি খারিজ হয়। ১৬টি রাজ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ৪২ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল, তার মধ্যে ১৯.৩ লক্ষ আবেদন বাতিল হয়। অর্থাৎ প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া বা জীবন-জীবিকা হারানোর সামনে পড়ে যান।

বংশ পরম্পরাগত ভাবে বসবাসকারী এই মানুষগুলি ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হলে তাঁরা তাঁদের জীবিকা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি হারিয়ে ছিন্নমুল হবেন। তাঁদের একটা বড় অংশ জঙ্গলের উপর নির্ভর করেই দিনাতিপাত করেন। কায়িক শ্রম ছাড়া অন্য কাজ শেখার সুযোগ তাঁরা কখনও পায়নি। গ্রামের বাইরে গঞ্জে বা শহরে উপার্জন করা তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ করলে পথের ভিখারিতে পরিণত হওয়া ছাড়া তাঁদের অন্য কোনও উপায় থাকে না। বিপদ অনুমান করেই তাঁরা বহু জায়গায় উচ্ছেদ হওয়া থেকে নিজেদের গ্রাম ও পরিবারকে রক্ষার জন্য সরকারি আধিকারিক ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছিলেন। আদিবাসীদের জমির সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসাবে রাজ্যে রাজ্যে জমির অধিকার রক্ষার আইন এবং ঝাড়খণ্ডে ‘ছোটোনাগপুর টেনান্সি অ্যাক্ট’ ও ‘সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি অ্যাক্টে’র মতো আইন থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে খনি, ড্যাম ও কারখানা তৈরি সহ সমস্ত কিছু যুক্ত করলে উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসী ও গরিব মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

আদিবাসী ও বনবাসীদের উচ্ছেদের এমন চেষ্টা আগেও অনেকবার হয়েছে। ২০০২ সালে বাজপেয়ী সরকার জঙ্গলের জমিতে বংশপরম্পরায় বসবাসকারীদের ‘দখলকারী’ অ্যাখ্যা দিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের ফতোয়া জারি করে। এর ফলে সেই সময় এক কোটির বেশি আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসী মানুষের সামনে উচ্ছেদের বিপদ দেখা দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত প্রান্তে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। সমস্ত গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী সংগঠনগুলি সংগঠিতভাবে এর প্রতিবাদ করেছিল। প্রতিবাদের মুখে পড়ে ২০০৩ সালে প্রাক্তন বিচারপতি বি এন কৃপালের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ন্যাশনাল ফরেস্ট কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশক্রমে ‘ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট-২০০৬’ তৈরি হয়। আইনে বলা হয়–১৩ নভেম্বর ২০০৫ অবধি যাঁরা জঙ্গলের জমিতে বসবাস করছেন বা জঙ্গলের জমি চাষবাস করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন তাঁরা এই জমির পাট্টা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এ বিষয়ে কেন্দ্রের বিজেপি বা কংগ্রেস সরকার কোনও দিনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টে উচ্ছেদের ধমক ও আক্রমণ চালিয়ে গেছে।

ভারতে ব্রিটিশ শাসকরা অরণ্য সম্পদের উপর দখল কায়েম করতে ১৮৬৫ সালে বনবিভাগ তৈরি করে। ১৮৭৮ সালে দেশে ‘প্রথম অরণ্য আইন’ প্রণীত হয়। এই আইনের বলে ব্রিটিশ সরকার সরাসরি অরণ্য এলাকাগুলিকে ‘সংরক্ষিত অরণ্য’ বলে ঘোষণা করে। এই সময় থেকেই অরণ্যনির্ভর জনগোষ্ঠীগুলির অরণ্যের উপর স্বাভাবিক অধিকার খর্ব করা শুরু হয়েছিল। স্বাধীন ভারতেও এই দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালের ‘অরণ্য নীতিতে’ (ন্যাশনাল ফরেস্ট পলিসি, ১৯৫২) অরণ্যের ওপর অরণ্যবাসীদের অধিকারের প্রশ্নটিকে আমলই দেওয়া হয়নি। একদিকে অবাধে জঙ্গল কাটা চলতে থাকে অপরদিকে বৃক্ষভূমি স্থাপনের মহোৎসব শুরু হয়। ১৯৫৩ থেকে জমিদার ও ভূস্বামীদের অধিকারে থাকা জঙ্গল, দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকারভুক্ত জঙ্গলগুলি অধিগ্রহণ করে সরকারি জঙ্গলে পরিণত করা হয়। একতরফা ভাবে ঘোষিত সরকারি জঙ্গলে যে মানুষেরা থেকে গেলেন, তাঁরা এ ভাবে ঢুকে পড়লেন রাষ্ট্রের খাস তালুকে। ১৯৭২ সালে প্রণীত হয় ‘বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন’। তাতেও হতভাগ্য আদিবাসী ও বনবাসীদের কথা বিশেষ কিছু লেখা হল না। ১৯৮০ সালে প্রণীত হল বন (সংরক্ষণ) আইন, তাতেও এই হতভাগ্যদের বিশেষ কিছু জুটল না। ১৯৮৮ সালে ‘রিজার্ভ ফরেস্ট অ্যাক্ট’ চালুর ফলে দেশের প্রায় এক কোটি আদিবাসী ও বনবাসী মানুষ উচ্ছেদের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

ভারতবর্ষের দীর্ঘদিনের ইতিহাস বেদনাদায়ক ভাবে আদিবাসী, তথা বনবাসী ও গরিব শোষিত মানুষদের উপর এক নিষ্ঠুর শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস। স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই আদিবাসী ও গরিব শোষিত মানুষ জল, জমি, জঙ্গল রক্ষার অন্দোলন করে এসেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইংরেজ যখন জঙ্গলমহল সহ ছোটনাগপুরের মালভূমি অঞ্চলে এবং রাজমহল এলাকাতে প্রবেশ করতে চেয়েছে তখনই আদিবাসী ও এলাকার সমস্ত গরিব মানুষ বাধা দিয়েছে। তাই রাজমহল এলাকাতে পাহাড়িয়া বিদ্রোহ, ভাগলপুর অঞ্চলে তিলকা মাঝির নেতৃত্বে বিদ্রোহ, জঙ্গলমহলে চুয়াড় বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ, ভূমিজ বিদ্রোহ প্রভৃতি গড়ে ওঠে। তার পরবর্তী সময়ে জমিদার, মহাজন, আড়কাঠি ও ঠিকাদার এবং তাদের রক্ষক ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল পরগণা এলাকাতে ‘হুল’। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই সাঁওতাল পরগণার উদ্ভব এবং এই সময় আদিবাসীদের জমি রক্ষার জন্য যে সমস্ত আইনি সংস্কার শুরু হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতাতে ১৯৪৯ সালে স্বাধীন ভারতে সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি অ্যাক্ট তৈরি হয়। গাড়োয়াল-কুমায়ুনে কিংবা তৎকালীন পাঞ্জাবের পাহাড়িরা, মধ্যপ্রদেশের বৈগারাও বিদ্রোহ করেছিল। গাড়োয়াল কুমায়ুনের বিদ্রোহের ফলেই গাড়োয়াল কুমায়ুন অঞ্চলে ‘বন পঞ্চায়েত অ্যাক্ট’ তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। ১৮৯৫-১৯০০ সময়ে ছোটনাগপুর এলাকা জুড়ে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফসল হিসাবেই ১৯০৮ সালে ছোটনাগপুর টেনান্সি অ্যাক্ট তৈরি ও চালু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৮৭৮ সালের জঙ্গল আইনের প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়েই বিরসা মুন্ডার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হাতে-খড়ি। জঙ্গলের অধিকার আইন-২০০৬ ও এক দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। ১৯৮৮ সালে রিজার্ভ ফরেস্ট অ্যাক্ট চালু করার ফলে দেশের এক কোটি মানুষ উচ্ছেদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখনই দেশজুড়ে গড়ে ওঠে শক্তিশালী প্রতিরোধ অন্দোলন। তারই ধারাবারিকতাতে ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আবারও যখন আদিবাসী ও বনবাসীদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করে তখন আবার দেশজুড়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফলেই ২০০৬ সালে অরণ্যের অধিকার আইন প্রণয়নে সরকার বাধ্য হয়। আদিবাসী ও গরিব মানুষের শোষণ, জুলুম, অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে জঙ্গলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকার যে চিরাচরিত অধিকার ছিল, ‘জঙ্গলের অধিকার আইন-২০০৬’-এর মধ্যে সেই অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছিল।

দীর্ঘ ও ধারাবাহিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে একটার পর একটা আইনি অধিকার এই সংগ্রামী আদিবাসী ও বনবাসীরা অর্জন করেছে। কিন্তু একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে স্বাধীন ভারতের সরকার উন্নয়নের নামে পুঁজিপতিদের স্বার্থে এই অধিকারগুলি খর্ব করার চেষ্টা করেছে, বা কখনও সুকৌশলে কেড়ে নিতে চেয়েছে। আদিবাসী ও বনবাসী জনগণ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। লড়াই অন্দোলন গড়ে তুলেছে। দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকেরা পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে এই অধিকারগুলি রক্ষা করেছেন। এই আইনের ক্ষেত্রেও সরকার তাই করেছে। আদিবাসী ও বনবাসীদের মতো পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের মধ্যে এই আইনি সচেতনতা গড়ে তোলার যে প্রয়োজন ছিল তা সরকার করেনি। তার উপর আইনটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসুত্রতা এই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসাবে দাঁড়িয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সময় উঠে আসা তথ্য এই অবহেলার ও বঞ্চনার কথায় প্রমাণ করল। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বনপাট্টার পাওয়ার সুযোগ কেড়ে নিয়েছিল। অরণ্যের অধিকার আইনের ওপর ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর সুপ্রিম কোর্টের পুনর্বিবেচনার দাবিতে আদিবাসী, বনবাসী সহ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক সোচ্চার হয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যুক্তিসংগত ও ন্যায়সংগত ভাবেই সাধারণ মানুষ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৬ সালে ছোটনাগপুর টেনান্সি অ্যাক্ট ও সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি অ্যাক্ট সংশোধনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে পিছু হটতে হয়েছিল। সে ভাবেই ‘ফরেস্ট কনজার্ভেশন রুল-২০২২’-এর বিরুদ্ধে তীব্র, লাগাতার ও শক্তিশালী অন্দোলন গড়ে তুলে রুলগুলি প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব।

আজ বেকারত্ব চরমে। কারখানায় ছাঁটাই, লে-অফ, লক্‌-আউট, ক্লোজার হচ্ছে। গ্রামেও সেচের সুবন্দোবস্ত না থাকা এবং বীজ, সার সহ কৃষি উপকরণের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাষবাস করে কৃষকরা লাভ করতে পারছেন না। সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অত্যধিক হারে মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি, শিক্ষায় ফি বৃদ্ধি, শিক্ষাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিও সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই অসম্ভব করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে উচ্ছেদ হলে বিরাট সংখ্যক পরিবার রুটি-রুজির নূ্যনতম অধিকারও হারাবে। তাই দেখা যাচ্ছে ওড়িশার সিমলিপালে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠছে, ঝাড়খণ্ডের বড়কাগাঁও, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, পুরুলিয়ায় জঙ্গল ধ্বংসের বিরুদ্ধে, উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। এছাড়াও ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে, গুজরাট, আসামেও অরণ্যের অধিকার রক্ষা ও জঙ্গল ধ্বংসের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই নয়া ‘ফরেস্ট কনজার্ভেশন রুল-২০২২’-এর বিরুদ্ধে আদিবাসী ও বনবাসী এবং সাধারণ নাগরিক সোচ্চার হয়েছেন। এই রুল প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে অন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। সিদো-কানহু-বিরসার জীবন সংগ্রামের তেজ, বীরত্ব, শৌর্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বুকে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক ও মনীষীদের জীবনসংগ্রাম থেকে চেতনা নিয়ে, স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিশেষভাবে ছোটনাগপুর টেনান্সি অ্যাক্ট ও সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি অ্যাক্ট সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে গড়ে ওঠা অন্দোলন এবং দিল্লির কৃষক অন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশজুড়ে এই অন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল শোষিত মানুষ ও সর্বস্তরের গণতন্ত্রপ্রিয় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে পাশে নিয়েই সমস্ত আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসীদের অধিকার রক্ষার এই আন্দোলনকে বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হবে।