Breaking News

পহেলগামঃ নিরাপত্তার দায় পর্যটকদের ঘাড়েই চাপালেন দায়িত্বজ্ঞানহীন বিজেপি নেতারা

২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদীদের নৃশংস হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুতে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ রাজকুমার জাংড়া সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, সেখানে আক্রান্ত পর্যটকদের সঙ্গে থাকা মহিলারা যদি বীরাঙ্গনা হতেন, জঙ্গিদের সাথে লড়াই করতে পারতেন, তা হলে ওই পর্যটকদের জঙ্গিরা হত্যা করতে পারত না। তাঁরা যদি জীবনের পরোয়া না করে রুখে দাঁড়াতেন, তা হলে এত জন মারা যেত না। সাংসদের মন্তব্য শুনে বিস্মিত দেশের মানুষ। একজন সাংসদ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করলেন কী করে– এ কথা ভেবে তাঁরা স্তম্ভিত।

প্রশ্ন ওঠে, সশস্ত্র জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতের সশস্ত্র সেনারা লড়াই করে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারল না কেন? জানা গেছে, জঙ্গি হামলার আগাম সতর্কবার্তা ছিল গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর সফরের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা হলে এ রকম একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঞ্চলে জঙ্গি হামলা হতে পারে জেনেও পর্যটকদের যেতে দেওয়া হল কেন? সরকার তো নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়বদ্ধ। তা হলে এতগুলি মানুষের মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী না করে জঙ্গি হামলায় মৃতদের পরিজনদের উপর দায় চাপানো হচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই গত কয়েক বছর ধরে ‘কাশ্মীর সন্ত্রাস-মুক্ত’, ‘কাশ্মীর হাসছে’ বলে প্রচার করে চলেছেন, তা কি তা হলে জুমলা ছিল? সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের এই আশ্বাসে ভরসা করেই তো পর্যটকরা সেখানে গিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে জঙ্গিদের নৃশংস হামলার শিকার হলেন তাঁরা। এর দায় কার? সরকারের উপর আস্থা রেখে কি তাঁরা ভুল করেছিলেন? তা হলে সাধারণ মানুষ কার উপর আস্থা রাখবে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কর্তাদের জানা আছে। উত্তর জানেন মধ্যপ্রদেশের ওই বিজেপি সাংসদও। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে এ সরকার যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ– পহেলগামের ঘটনায় তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় উনি আসলে সেই অপদার্থতাকেই ঢাকতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য।

এই মন্তব্যের দ্বারা নিজের মানবিকতা বোধহীন চরিত্রটিকে আরও স্পষ্ট করলেন ওই বিজেপি নেতা। চোখের সামনে প্রিয়জনকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখলে তার পরিজনদের কী যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি হয়, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। তা সত্তে্বও কী করে পরিজনদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য তিনি উপস্থিত মহিলাদের দায়ী করতে পারলেন, ভাবলেও অবাক হতে হয়। একজন মানুষ কতটা অমানবিক, কতটা নিষ্ঠুর হলে এমন কথা বলতে পারেন! পহেলগামের ঘটনার পর এ ধরনের একের পর এক লাগামছাড়া মন্তব্যের পরও প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা উৎসাহিতই করেছে বিজেপি নেতা-কর্মীদের।

যে কোনও ধর্ম-বর্ণের সাধারণ মানুষ শান্তি চায়। রুজি-রোজগারহীন, আতঙ্কের পরিবেশ তাদের কাম্য নয়। অস্থির পরিবেশে লাভ হয় শাসক শ্রেণির। পহেলগামের ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুতে আজ প্রশ্ন উঠছে, সন্ত্রাসবাদীদের তো শাস্তি দিতেই হবে, কিন্তু এই সব বিবেচনাহীন কু-মন্তব্যকারী শাসক দলের নেতাদের শাস্তি কে দেবে?

এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা ৬ – ১২ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত