কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় গোটা দেশ শিহরিত, ব্যথিত ও মর্মাহত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল নির্বিশেষে সকলেই ঘৃণায় ফেটে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে উচিত ছিল নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গোটা দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। বাস্তবে দেশবাসীকে এই নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা দূরের কথা, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী শাসক বিজেপি ও তার নানা শাখা সংগঠন গোটা দেশকে চরম বিভাজনের রাস্তায় নিয়ে গেল। সুপরিকল্পিত ভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ব্যাপক ভাবে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করা হল। কোথাও শারীরিক ভাবে, কোথাও মানসিক ভাবে নানা জায়গায় চলল নির্যাতন। এমনিতেই মোদি সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা বেড়েই চলেছিল, কিন্তু পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতে মুসলিম বিরোধী ঘৃণামূলক ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস (এপিসিআর) তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ২২ এপ্রিল থেকে ৮ মে মাত্র ১৭ দিনে ১৮৪টি ঘৃণামূলক হামলার ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছে। বাস্তবে যা এর থেকে আরও অনেক গুণ বেশি। আমরা দেখেছি গোটা দেশ জুড়ে কী ভাবে বিজেপি নেতারা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছে, টিভিতে, সংবাদপত্রে, সোশাল মিডিয়ার মধ্য দিয়ে সর্বত্র ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, যার পরিণতিতে কোথাও মুসলমান সম্প্রদায়ের কারও দোকানে ভাঙচুর, আগুন লাগানো, কোথাও হকারদের শারীরিক নিগ্রহ, পশ্চিমবঙ্গে এক গর্ভবতী মুসলিম মহিলাকে চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে তার সঙ্গে ঘৃণা ও বৈষম্যমূলক আচরণ, কোথাও ঘোষণা করে দেওয়া যে, কোনও মুসলিম মানুষকে দোকানে উঠতে দেওয়া হবে না, কিংবা কোনও মুসলিমের দোকান থেকে কোনও জিনিস কেনা যাবে না। আরও দুঃখজনক ঘটনা আগ্রার তাজপুরে ২৩ এপ্রিল ওই ঘটনার পরের দিন মহম্মদ গুলফাম নামে এক মুসলিম যুবককে তাদের বিরিয়ানির দোকানের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তাঁর ভাইপো গুলিবিদ্ধ হন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গোরক্ষা বাহিনী হুমকি দিয়ে বলছে ২৬ জন মানুষের হত্যার বদলা আমরা ২৬০০ মুসলিম হত্যা করে নেব। কলকাতা মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ডাক্তারি ছাত্রকে হেনস্থা হতে হচ্ছে, আবার কোথাও পথেঘাটে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে কুরুচিকর মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যে ভাবে চারিদিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। বিদ্যাসাগর, জ্যোতিবা ফুলে, শরৎচন্দ্র, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিং, আসফাকুল্লার দেশে যা খুবই বেদনার। সাম্প্রদায়িক বিভাজন সন্ত্রাসবাদকেই মদত দেয়, বিচ্ছিন্নবাদীদেরই প্রশ্রয় দেয়। সত্যিই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে চাই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যা সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও সন্ত্রাসবাদের মতো ক্যান্সারকে নির্মূল করতে পারবে।
অর্ঘ্য প্রধান
কাঁথি
এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা ৬ – ১২ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত