Breaking News

পাঠকের মতামতঃ ত্রাণ নয়, সুউচ্চ বাঁধ চাই

বর্ষা এসে গেছে। বাড়ছে নদীর জলস্তর। ইতিমধ্যে এই কোটালে পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরের বাঁধ নিশ্চিহ্ন। সুন্দরবনের বহু ব্লকের শত শত বিঘা শাক-সবজি, পানবরজ, পুকুর, খাল-বিল নোনা জলের তলায়। শুরুতেই এই অবস্থা– এখনও বর্ষার পুরো মরশুম শুরু হয়নি।

মথুরাপুর-২ ব্লকের দক্ষিণ কঙ্কনদিঘির বাসিন্দা জয়দেব মাজী কথা প্রসঙ্গে বললেন, নদী ক্রমশ জনবসতিকে গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে। তিনি নিজে ১৩ বার রিং-বাঁধের পরিবর্তন দেখেছেন। তাঁদের নিজেদের ধান চাষের ৮ বিঘা জমি মণি নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে। কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি।

তিনি আরও জানালেন, মুণ্ডাপাড়া ও ডাক্তারের ঘেরীর পশ্চিমে মণি নদী পূর্ব দিকে ছাতুয়া নদী বুড়ির পোল থেকে মোল্লার মুখ হয়ে মণি নদীতে পড়েছে। এই মুণ্ডাপাড়া ও ডাক্তারের ঘেরীর সংযোগস্থলে ২০-২৫ ফুটের মধ্যে দুপারে দুটি নদী বয়ে চলেছে। যে কোনও মুহূর্তে দুটি নদী মিশে যেতে পারে। এর ফলে নগেন্দ্রপুর, কঙ্কনদিঘী দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

পূর্ব জটার তারক মণ্ডলের ঘেরীর বাসিন্দারা জানালেন, ঠাকুরান নদীর গর্ভে তাদের কয়েক হাজার বিঘা জমি চলে গিয়েছে। তাদের দেখা বাঁধ ৮-৯ বার পরিবর্তিত হয়েছে। নদীবেষ্টিত সুন্দরবনের প্রতিটি ব্লকের প্রতিটি অঞ্চলে এই রকমই পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

স্থানীয় মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করা বাঁধ রক্ষার জন্য যদি সত্যিই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতেন তা হলে প্রতি বছর সুন্দরবনবাসীদের সহায় সম্পদ হারিয়ে দিনের পর দিন জলবন্দি অবস্থায় থাকতে হত না। শুখা মরসুমে শীতঘুমে থেকে ভরা বর্ষায় ভাঙা বাঁধে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ভোটের অঙ্ক ঠিক রাখতে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এরা যথেষ্ট পটু। অথচ এখানে আছে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। এখান থেকে বনজ সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, কৃষিজ সম্পদের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি বৈদেশিক মুদ্রা ও হাজার হাজার কোটি টাকা ট্যা’ আয় করেন। এখান থেকে উভয় সরকার যা ট্যা’ বাবদ আদায় করে সেটাই ফিরিয়ে দিলে উন্নত দেশগুলোর মতো বাঁধ রক্ষা করে এখানকার জীবন জীবিকা যথেষ্ট স্বাবলম্বী ভাবে রক্ষা করা যায়।

নিম্নচাপের কোনও সম্ভাবনা দেখা দিলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য জেলা প্রশাসন প্রস্তুত। কিন্তু সুন্দরবনবাসীরা আজ আওয়াজ তুলেছে– ত্রাণ নয়, চাই সুউচ্চ স্থায়ী মজবুত নদীবাঁধ, শ্রমনির্ভর শিল্প, মাছ-কাঁকড়া-শাকসবজি সংরক্ষণের পরিকাঠামো এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বিশ্বনাথ সরদার

রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা