Breaking News

মোদি শাসনে চাষির বঞ্চনা প্রতি কুইন্টাল ধানে ক্ষতি ৭৬৬ টাকা

আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডের জনসভায় ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বিকশিত ভারতের’ লক্ষ্য বহু বার উচ্চারণ করলেন। এ-ও বললেন, বিকশিত ভারতের জন্য ‘বিকশিত পশ্চিমবঙ্গ’ চাই। আর সে জন্য এ রাজ্যে আনতে হবে বিজেপি শাসন। যে দিন প্রধানমন্ত্রী এই ভাষণ দিলেন সে দিনই মোদি সরকারের কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ১৫ দিনের ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’ শুরু করেছেন। এরই অঙ্গ হিসাবে ২০২৫-২৬ সালের খরিফ শস্যের এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষিত হয়। সে ঘোষণা শুনে সারা দেশের কৃষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, মোদি সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করল।

কৃষকদের দাবি কী? কৃষকদের দাবি স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, উৎপাদনের সার্বিক খরচের উপর নূ্যনতম ৫০ শতাংশ লাভ যোগ করে অর্থাৎ সি-টু প্লাস ৫০ পার্সেন্ট ফর্মুলা মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে হবে। এই ফর্মুলায় ধানের দাম ঠিক করলে এক কুইন্টাল ধানের দাম হয় ৩১৩৫ টাকা। বর্তমানে ধানের সহায়ক মূল্য ২৩৬৯ টাকা। ফলে এমএসপি নিয়ে টালবাহানা করায় প্রতি কুইন্টালে চাষির লোকসান ৭৬৬ টাকা। বিকশিত ভারতের প্রচারের আড়ালে এই হল কৃষক বঞ্চনার নির্মম চিত্র।

কৃষকের প্রধান দাবি ফসলের ন্যায্য দাম। ন্যায্য দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি হল, সরকারি উদ্যোগে ফসল না কেনা। কেন সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে না? যে কেউ বোঝে, কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতেই সরকার ফসল কিনতে বাজারে নামছে না। ফলে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন দেশের কৃষকরা। কর্পোরেট পুঁজিপতিদের এজেন্টরা বিপুল পরিমাণ মুনাফার মার্জিন রেখে যতদূর সম্ভব কম দামে কৃষকদের ফসল বিক্রি করতে বাধ্য করছে। ফলে চাষ ক্রমাগত অলাভজনক হয়ে উঠছে।

এই কর্পোরেট হাঙরদের থাবা থেকে কৃষককে কিছুটা বাঁচাতে হলে সরকারি উদ্যোগে ফসল কেনা জরুরি। সে জন্য ফসলের এমএসপি ঘোষণা করা জরুরি এবং তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগে ফসল কেনার পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। জরুরি, প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ করা। অথচ এখানেই রয়েছে সরকারের চরম অবহেলা। কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এমএসপি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার চাষিদের নানা ভাবে বঞ্চিত করছে। প্রথমত, সরকার উৎপাদন খরচ যা দেখাচ্ছে তা গোঁজামিলে ভরা। বর্তমানে কৃষি উপকরণগুলি কর্পোরেট মালিকদের অধীনে। তারা এ সবের দাম চড়া হারে বাড়াচ্ছে। ফলে কৃষির খরচ অত্যধিক বেড়ে যাচ্ছে। অথচ এমএসপি নির্ধারণের সময় দাম কম করে দেখানো হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, উৎপাদন খরচের উপর ৫০ শতাংশ যোগ করার সুপারিশও সরকার মানছে না। তৃতীয়ত, সরকারি হিসাব অনুযায়ী যে ৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, সেটাও কৃষি ফসলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধরা হচ্ছে না। চতুর্থত, এমএসপি যা ঘোষিত হচ্ছে, সেই অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক ফসলও সরকার কিনছে না। যেমন ২০২৩-২৪ সালে দেশে উৎপাদিত ধানের মাত্র ৫৬.৫ শতাংশ এবং গমের মাত্র ২৩.২ শতাংশ সরকার কিনেছে। এইভাবে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার শুধু বাংলায় নয়, সারা দেশের কৃষকদের বঞ্চনা করছে বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থে। ফলে বিজেপি যে বিকশিত ভারত বা বিকশিত পশ্চিমবঙ্গের কথা বলছে, সেখানে কর্পোরেটদেরই রামরাজ্য হবে। সাধারণ মানুষের হবে সর্বনাশ।

এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা ৬ – ১২ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত