Breaking News

পাঠকের মতামতঃ এত ছুটি কেন

৩০ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের গরমের ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আবহাওয়া দপ্তরের পরামর্শ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এপ্রিল মাসের বেশিরভাগ দিনেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে ছিল। মে মাসেও এখনও রাজ্যের সর্বত্র মারাত্মক গরম পড়েনি। প্রায়ই ঝড়, বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে গরম পড়েনি বললেই চলে।

গরমকালে গরম পড়বে এটাই স্বাভাবিক। গরমের জন্য পড়াশোনা বন্ধ রাখা কি তার সমাধান হতে পারে? তা ছাড়া এ ভাবে চললে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়বার কারণে তো লেখাপড়া বন্ধই করে দিতে হয়! ফলে বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যেও পাঠদান কীভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেজন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা তো করা উচিত ছিল। এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি সকালে ক্লাসের জন্য় স্কুলের পক্ষ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করেছিলেন। কয়েকটি জেলা আবেদন করলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় মর্নিং-স্কুলের নোটিশ দিয়েও তা বন্ধ করে দেওয়া হল।

সরকার যদি শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হত তবে গরমে প্রতিটি ছাত্রের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল নিশ্চিত করা এবং নিয়ম করে তা পান করানোর জন্য ‘ওয়াটার বেল’ চালু করার পাশাপাশি ওআরএস, সরস ফল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু এসব কোনও পথেই না গিয়ে তারা কেবল ছুটি দিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎসব, মেলা, দুয়ারে সরকার ইত্যাদি কারণে দীর্ঘ ছুটি থাকে স্কুলে। এ কারণে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার দিকে ছুটছেন। আর এদিকে ছাত্র কমে যাওয়ায় সরকারি ৮২০৭টি বিদ্যালয় উঠে যেতে বসেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের অভাবে সেকশন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর সাথে ২০১৬ সালের এসএসসি-র দুর্নীতির ফলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল শিক্ষা ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, টেট ২০১২ এবং টেট ২০১৪-এর দুর্নীতির কারণে যথাক্রমে ১৮ এবং ৪২ হাজার মোট ৬০ হাজার শিক্ষকের চাকরি যদি বাতিল হয় তাহলে সমগ্র স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হয়ে যাবে।

কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি দেওয়ার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অনলাইন শিক্ষা চালু করা। কারণ স্কুল বন্ধ থাকলে ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয় অনলাইনে পাঠ গ্রহণ করতে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ এবং ‘রাজ্য শিক্ষানীতি ২০২৩’-এর অন্যতম উদ্দেশ্য ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ অনলাইনে পাঠদান করার ব্যবস্থা করা।

 এতে সরকারকে স্কুল-কলেজের পরিকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষক নিয়োগে ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে না। এক-দুজন শিক্ষক দিয়ে একসাথে অনেক ছাত্রছাত্রীকে পাঠদান করানো যাবে। বাইজুস, টিউটোপিয়া, গুগল প্রভৃতি অনলাইন শিক্ষা ব্যবসায়ীদের শিক্ষাক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করার পথ আরওপ্রশস্ত হবে। গরিব শিক্ষার্থী শিক্ষার আঙিনা থেকে দূরে ছিটকে যাবে। সরকারের এই অপরিকল্পিত ভাবে ছুটি দেওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষা ধ্বংসকারী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দীপঙ্কর মাইতি, পশ্চিম মেদিনীপুর

এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪১ সংখ্যা ২৩ – ২৯ মে ২০২৫ এ প্রকাশিত