আল কায়েদা, আইএস ঘনিষ্ঠ বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস-এর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। সফল হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র। বাস্তবে সিরিয়া দখলের জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসর ব্রিটেন, ইজরায়েল সহ তুরস্কের বিপুল মদতে পুষ্ট এইচটিএস এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষাতেই ছিল। কারণ, সিরিয়ার পুরনো বন্ধু রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় এই মুহূর্তে সিরিয়ার পাশে থাকতে পারেনি। সিরিয়ার আর এক বন্ধু দেশ ইরানও সম্প্রতি ইজরায়েল ও আমেরিকার সঙ্গে বিরোধের ধাক্কা সামলাতে ব্যতিব্যস্ত। আবার লেবাননের হিজবুল্লা গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতৃত্ব ইজরায়েলের আক্রমণে বিধ্বস্ত হওয়ায় তারাও এই সময়টায় সিরিয়ার পাশে থাকতে পারেনি। এই অবস্থায় বস্তুত প্রায় বিনা প্রতিরোধেই এইচটিএস সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস দখল করে নিল। পাশাপাশি উগ্র ইহুদিবাদী ইজরায়েলের সেনাবাহিনীও গোলান হাইটস থেকে শুরু হওয়া বাফার এলাকা ছাড়িয়ে সিরিয়ার ভিতরে প্রবেশ করে আত্মরক্ষার নামে সিরিয়ার খানিকটা অংশ দখলের মতলব হাসিল করতে চাইছে। ফলে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, প্যালেস্টাইনের পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরদের মুকুটে সিরিয়া নামক নতুন পালক যুক্ত হল।
কেন সিরিয়ার দিকে শকুন-নজর সাম্রাজ্যবাদীদের?
ইরাক বা ইরানের মতো তেলের বিশাল মজুত ভাণ্ডার নেই সিরিয়ায়। তা সত্ত্বেও পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিকে কব্জা করতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসররা দীর্ঘদিন ধরে উন্মুখ। কেন? আসলে নিজের নিজের দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থে গোটা পশ্চিম এশিয়া জুড়ে তেল ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দখলদারি কায়েম রেখে ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা বিক্রির পুরো নেটওয়ার্ক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যতম লক্ষ্য। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে সিরিয়ার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব ও ইরাকের তেলের পাইপলাইন সিরিয়ার মরুভূমির মধ্যে দিয়ে গেছে। পারস্য উপসাগরের ঠিক মাঝখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে সর্ববৃহৎ ভাণ্ডারের খোঁজ পাওয়া গেছে, সেখান থেকে গ্যাস তোলার জন্য ২০১১-র জুলাই মাসে ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার একটি চুক্তি হয়। এর জন্য প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি পারস্য উপসাগরে ইরানের একটি বন্দর থেকে শুরু হয়ে ইরাকের মধ্যে দিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে যাওয়ার কথা। এই চুক্তির ঠিক পরে পরেই আসাদ সরকার সিরিয়ায় একটি গ্যাস-কূপ আবিষ্কৃত হওয়ার কথা ঘোষণা করে এবং রাশিয়ার একটি কোম্পানিকে এই নতুন আবিষ্কৃত ক্ষেত্রটিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়। এ দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তেল বিক্রির বাজার যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সেখানে তেল সরবরাহ করার লক্ষ্যে ইরান দামাস্কাস থেকে লেবানন পর্যন্ত পাইপলাইন পাতার পরিকল্পনা করে।
প্রমাদ গোনে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার তেলের দৈত্যাকার বহুজাতিক কোম্পানি আর ব্যাঙ্কগুলি। তাদের ভয় আর এক সাম্রাজ্যবাদী দেশ রাশিয়াকে। নিজের প্রভাব বাড়িয়ে রাশিয়া যদি সিরিয়া ও সন্নিহিত এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও পাইপলাইনগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে নেয়, তা হলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক আধিপত্য ধাক্কা খাবে– এই তাদের আশঙ্কা। তাদের আরও ভয়, প্রভাব কমে যাওয়ার পরিণামে পশ্চিম এশিয়ার নানা জায়গায় মোতায়েন মার্কিন সেনাদের যদি প্রত্যাহার করে নিতে হয়, তাহলে রাশিয়া ও চিন বিশ্বের তেলের বাজারগুলিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করবে, কমবে আমেরিকার ক্ষমতা। এমন হলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন বিরোধী দেশ হিসাবে রাশিয়ার মদতপুষ্ট ইরানের ক্ষমতাও বাড়বে। ফলে সিরিয়ার উপরে দীর্ঘদিন ধরেই শকুনের নজর ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরদের। মতলব ছিল যেনতেনপ্রকারেণ সেখানে তাঁবেদার সরকার বসিয়ে ইরাক, আফগানিস্তানের মতো সাম্রাজ্যবাদী লুঠ চালানোর।
সিরিয়া দখলের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত
ইতিহাস বলছে, ২০০৯ সালের আগে পর্যন্ত সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে আমেরিকা ও তার সাম্রাজ্যবাদী দোসর দেশগুলির সম্পর্ক খুব একটা খারাপ ছিল না। রাশিয়া ও ইরানকে চাপে রাখতে সিরিয়ার মাটিতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বসানোর প্রস্তাব সিরিয়া প্রত্যাখ্যান করায়, এই সময়ের পর থেকে আমেরিকার সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলির যোগাযোগের পথের উপর আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা নিয়েও সিরিয়ার সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয় মার্কিন সরকারের। কোনও মতেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে মাথা নত করে নিজেদের শর্তে রাজি করাতে না পেরে ইরাক ও লিবিয়ার মতো করেই ‘সিরিয়ায় গণতন্ত্র বিপন্ন’ ধুয়া তুলতে থাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সুর মেলায় তার দোসররা। অর্থ, অস্ত্র সহ সমস্ত ধরনের সাহায্য দিয়ে তারা তৈরি করে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ (এফএসএ) নামে একটি গোষ্ঠী। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে এই গোষ্ঠী আসাদ সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়। এদের সঙ্গে যোগ দেয় ইসলামি সন্ত্রাসবাদী আল কায়েদা ও আইএস-ঘনিষ্ঠ নানা গোষ্ঠী। ২০১১ থেকে সিরিয়ায় শুরু হয় ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ওই এলাকায় তার ঘনিষ্ঠ তুরস্ক টাকা, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে শক্তিশালী করে গেছে এফএসএ-র সঙ্গে সঙ্গে আল কায়েদার মতো ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদী নানা গোষ্ঠীকে। আসাদ সরকারকে দুর্বল করতে তারা ১০ হাজারেরও বেশি ভাড়াটে সেনা পাঠায় সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে। দেশ জুড়ে চলতে থাকে গৃহযুদ্ধ। ধীরে ধীরে সিরিয়ার এক-তৃতীয়াংশ তেলসমৃদ্ধ ও কৃষিবহুল অঞ্চল এই গোষ্ঠীগুলির দখলে চলে আসে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট এই গৃহযুদ্ধে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুহারা হন।
দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বন্দ্বক্ষেত্র
দেশের ভিতরে বিপুল সংখ্যায় তথাকথিত বিদ্রোহীর প্রবেশ ঘটিয়ে, বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে নানা ভাবে মদত দিয়ে গৃহযুদ্ধে সিরিয়াকে রক্তাক্ত করে তুলেও সাম্রাজ্যবাদীরা আসাদ সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। শত সমস্যা সত্তে্বও সিরিয়ার সাধারণ নাগরিক সেই সময়ে আসাদ সরকারের পিছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকায় নিজেদের শর্তের কাছে প্রেসিডেন্ট আসাদের মাথা নত করাতে পারেনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি। তা ছাড়া, রাশিয়া তখন নিজের সামরিক শক্তি নিয়ে আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সমাজতন্ত্রের পতনের পর পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত রাশিয়া, পশ্চিম এশিয়ায় আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের থাবা থেকে আড়াল করে রেখেছিল সিরিয়াকে। ইরানকে পাশে নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিস্পর্ধী আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি-অক্ষ তৈরির চেষ্টা ছিল রাশিয়ার। এই অবস্থায় কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে সিরিয়ার জনজীবনকে বিপন্ন করার চেষ্টা চালায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। বিপরীতে রাশিয়াও নিজের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে সিরিয়ায় খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে থাকে। সব মিলিয়ে সিরিয়া হয়ে দাঁড়ায় দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বন্দ্বের একটি ক্ষেত্র।
নিজের জোরে সিরিয়া কেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারল না
কিন্তু প্রশ্ন হল, যে সিরিয়া নিজের সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের মোকাবিলা করেছে, প্রবল পরাক্রমী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরদের চাপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছে, বন্ধু দেশগুলি সরে যাওয়ামাত্র এইচটিএস সেই সিরিয়াকে দখল করে নিতে পারল কী করে!
সিরিয়া ছিল প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনাধীন একটি আধা-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র, যা বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্রের নামান্তর। আরব মুসলমান, কুর্দ, তুর্কি, আসিরীয়, আর্মেনীয় সহ নানা উপজাতির মানুষের এই দেশটিতে খুব স্বাভাবিক কারণেই শাসক শ্রেণির শোষণ-নিপীড়ন ছিল। গরিবি-বেকারিতে বিপর্যস্ত সিরিয়ায় বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল। ২০২৩-এর একটি সমীক্ষা অনুুযায়ী দেশের অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পোতে পর্যাপ্ত আয় না থাকায় ১১ শতাংশের বেশি পরিবার নাবালক সন্তানদের রোজগারের কাজে লাগিয়ে দিতে বাধ্য হয়। দেশের এ হেন পরিস্থিতিতে শাসকের প্রতি জনসাধারণের ক্ষোভ থাকাই স্বাভাবিক। সেই ক্ষোভ থেকে তাদের অনেকেই হয়ত আসাদ-জমানার অবসান চেয়ে থাকবেন। আবার অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন, সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনী ‘রিপাবলিকান গার্ডক্স এইচটিএস-এর হামলা রুখে দিতে পারবে। কিন্তু দেখা গেল, রাশিয়া ও ইরান সরে যেতেই রিপাবলিকান গার্ড তথাকথিত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে সহজেই আত্মসমর্পণ করে বসল। এতে বোঝা যায়, গৃহযুদ্ধের সময়ে আসাদ সরকারে প্রতি জনসাধারণের যে আস্থা-ভরসা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাদী শোষণ-নিপীড়নে বিপর্যস্ত হতে হতে সে আস্থা তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন, যার প্রভাব পড়েছে সেনাবাহিনীর মনোবলের উপরেও।
এইচটিএস কি কোনও গণতান্ত্রিক শক্তি?
গণতন্ত্র বিপন্ন– এই ধুয়া তুলে ইরাক, লিবিয়ার মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে যে ভাবে নির্মম আগ্রাসন চালিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার স্যাঙাৎরা, সেখানকার নির্বাচিত সরকার ফেলে দিয়ে কায়েম করেছে নিজেদের আজ্ঞাবাহী পুতুল সরকার, ঠিক তেমন ভাবেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের স্বৈরাচার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার অনুগত প্রচারমাধ্যম। প্রেসিডেন্ট আসাদকে প্রায় রক্তচোষা দানব হিসাবে বিশ্বের সামনে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিল তারা। বারবার তাদের মিথ্যা ধরা পড়ে গেছে, তবুও তাদের অপপ্রচারে ভাটা পড়েনি। সিরিয়াতেও তাদের পুরনো কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসাবে বিশ্বের চোখে প্রতিষ্ঠা করতে তথাকথিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী তথা ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের সর্বতোভাবে মদত করে গেছে তারা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই এইচটিএস কি কোনও গণতান্ত্রিক শক্তি? এই গোষ্ঠীর জন্ম তো জাভাত আল-নুসরার গর্ভে, যা আসলে আল-কায়দার সিরীয় শাখা! সেই আল-কায়দা– যাকে কব্জা করার নাম করে ঐতিহ্যশালী আফগানিস্তান দেশটিকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজের দোসরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএস-এর সঙ্গেও এইচটিএস-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ক্ষমতা দখল করে সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কোনও পরিকল্পনা এইচটিএস-এর নেই, তারা দেশটিকে একটি ইসলাম-ধর্মীয় দেশ বানাতে চায়। এ পর্যন্ত তাদের প্রকাশিত কোনও বিবৃতিতেই ‘গণতন্ত্র’ শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব স্বীকার করতেও দ্বিধা রাখেনি যে তারা সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছে। সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি কতখানি ব্যগ্র, এর পরেও তা বুঝতে অসুবিধা থাকে কি?
সিরিয়ার ঘটনা যে শিক্ষা রেখে গেল
পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বাস্তবেই ভয়ঙ্কর। গোটা পশ্চিম এশিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উগ্র ইহুদিবাদী ইজরায়েল, সৌদি আরব সহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির নির্মম আক্রমণে গোটা অঞ্চলের মাটি আজ রক্তাক্ত। একচেটিয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলির মুনাফার স্বার্থে এই বীভৎস সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বলি হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ নিরীহ সাধারণ মানুষ। আহত হচ্ছেন অসংখ্য। নিজের বাসভূমি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়ে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। সাম্রাজ্যবাদের মুনাফার ভাণ্ডার ভরিয়ে তুলতে প্রতি মুহূর্তে প্রবল গরিবি ও দুর্দশার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছেন খেটে-খাওয়া মানুষ। বিশ্বে যতদিন সমাজতান্ত্রিক শিবির ছিল, তাদের প্রভাবে পশ্চিম এশিয়ায় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষের শক্তিগুলি আদর্শগত ও অন্যান্য মদত পেতে পারত। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতনের পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পরিকল্পনা করে ইরাক, আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে এই শক্তিগুলির অস্তিত্বকেই কবরে পাঠানোর কাজ শুরু করে।
এ থেকে রেহাই পাওয়ার রাস্তা কী? মার্কিন নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীরা আজ পশ্চিম এশিয়া জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তা রুখতে হলে প্রয়োজন দেশে দেশে যুদ্ধবিরোধী, শান্তিপ্রিয়, গণতান্ত্রিক চেতনা ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত জোট। দরকার শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনগুলিকে শক্তিশালী করা, পুঁজিবাদের যথার্থ বিকল্প সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকে জোরদার করতে আজ সময়ের আহ্বান হল বিশ্বের দেশে দেশে, এলাকায় এলাকায় ঐক্যবদ্ধ, লাগাতার সুশৃঙ্খল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, যুদ্ধবিরোধী জঙ্গি শান্তি আন্দোলন গড়ে তোলা। সমস্বরে আজ আওয়াজ তুলতে হবে– ‘সাম্রাজ্যবাদ সিরিয়া থেকে দূর হঠো’।