Breaking News

‘পরীক্ষা যদি বাতিল না করেন, মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে যাব’

কৃষ্ণনগর

আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে ১৬ আগস্ট এআইডিএসও-র ডাকা রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টার ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে হুগলি জেলার বৈঁচির বাটিকা হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট সমর্থন করে। তারা শিক্ষকদেরও সরকারি কাজ বয়কট করার আহ্বান জানায়।ওই এলাকার গোপীকৃষ্ণন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। স্কুলে ধর্মঘট হচ্ছে দেখে অভিভাবকরা এআইডিএসও কর্মীদের কাছে এসে বলেন, ‘আমরা চাই আজ পরীক্ষাও বন্ধ থাকুক।’ প্রধান শিক্ষককে অভিভাবকরা পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানান। এক অভিভাবিকা বলেন, এই ধর্মঘট আমার মেয়ের নিরাপত্তার প্রশ্নে, তাই আমার মেয়ে আজ পরীক্ষা দেবে না। আর এক অভিভাবক প্রধান শিক্ষককে বলেন, আজ যদি পরীক্ষা বাতিল না করেন তা হলে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাব, তাতে সে যদি একটি বছর বসে থাকে আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। অভিভাবকদের এই মনোভাব লক্ষ করে অন্যান্য শিক্ষকরা পরীক্ষা বাতিল করাকে সমর্থন করেন। প্রধান শিক্ষক ধর্মঘট সমর্থন করে পরীক্ষা বাতিল করেন।

ব্যাঙ্কে লাগিয়ে দিন বনধের ব্যানার

বনধের দিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে সমস্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। এসইউসিআই(সি)-র পিকেটিং-এ থাকা কর্মীদের অনুরোধে শপিং মল দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। টেকনো ইন্ডিয়া স্কুলের শিক্ষকরা তাঁদের স্কুলের গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন।ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা জানিয়ে দেন তাদের ব্যাঙ্কে যেন বনধের ব্যানার লাগানো হয়। রায়গঞ্জের গীতাঞ্জলিতে বয়স্ক মানুষজন এসে টোটো, অটো আটকেছেন। পিকেটারদের জলের বোতল এনে দিয়েছেন।

আমার ভুল ভেঙেছে

সল্টলেকের এক চিকিৎসক গণদাবীর প্রতিবেদককে জানান, এক সিপিআইএম সমর্থক তাঁকে বলতেন এস ইউ সি আই (সি) তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলনে নেই। অনেক তথ্য দিয়ে বোঝালেও তিনি বুঝতে চাইতেন না। তিনি বনধের দিন সকালে ডাক্তারবাবুকে ফোন করে বলেন, আমার ভুল ভেঙেছে। বললেন, ইংরেজি পাশ-ফেলের বনধ আমি সমর্থন করেছিলাম। তারপর এইটা। শেষে বললেন, আমার পার্টি তো এই বনধকে সমর্থন করল না। পরে কোনও এক মিটিং-এ বলবে, এটা ঐতিহাসিক ভুল ছিল।

মনটা সমর্থন করছে আপনাদেরই

ধর্মঘটের দিন সকালে যখন দলের কর্মী সমর্থকরা তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে পিকেটিং করছেন, এক চ্যানেলের রিপোর্টার ডিউটিরত এক পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করছেন, এত বাস আটকে পড়ছে আপনারা কোনও স্টেপ নিচ্ছেন না কেন? উত্তরে পুলিশ অফিসার বললেন, চাকরির একটা দায় আছে ঠিকই। কিন্তু আরজি করের এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আন্দোলনের ওপর বলপ্রয়োগে মন মানছে না।

কিছুক্ষণ পরে ওই সাংবাদিক আন্দোলনকারীদের কাছে বলেন, আমাদের একটি প্রাইভেট স্কুল আছে। আমরা আজ সকালেই ওই স্কুল ছুটি দিয়ে এসেছি। আরজিকরের তিলোত্তমার মতো আমার বাড়িতেও তো মেয়ে আছে। প্রতিবাদ জানাতেই হবে।

ধর্মঘটের দিন বিকেলে স্থানীয় এলাকায় নাগরিক সমাজের উদ্যোগে একটি মোমবাতি মিছিলের সময় দলীয় এক কর্মীকে পেয়ে এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হ্যান্ডশেক করে বলেন, এই বনধকে বেশিরভাগ মানুষ ভেতর থেকে সমর্থন করেছেন।

তমলুকের এক স্কুলশিক্ষিকা দলের এক কর্মীকে বললেন, আমি সরাসরি আপনাদের দল করি না । কিন্তু তিলোত্তমার এই মৃত্যু কোনও ভাবেই মানতে পারিনি। তাই আমি এবং আমার স্বামী সরকারি হুমকির সার্কুলারকে উপেক্ষা করে কর্মস্থলে যাইনি। আপনাদের ধর্মঘটে সামিল ছিলাম। দারুন কাজ করেছেন আপনারা।

উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এক শিক্ষক দলের এক শিক্ষককে বললেন, আমরা ছা-পোষা মানুষ। সরকারের অধীনে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করি। স্কুল আসতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু মন মানেনি। তাই স্কুল গেটে যখন ধর্মঘটের জন্য ছাত্ররা পিকেটিং করেছে, তাদের সর্বতোভাবে সমর্থন করেছি। সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে ধিক্কার জানাই।

তোমাদের উপরেই ভরসা

‘‘…ধর্মঘট সফল করতে এদিন সকাল থেকে ফ্ল্যাগ হাতে এসইউসিআইয়ের পিকেটারদের রাস্তায় দেখা গেছে। বাইক, অটো, দাঁড় করিয়ে ধর্মঘট সফল করার আবেদন করছিলেন তাঁরা। …ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এদিন নিজে থেকে দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। …পথচলতি এক মহিলা ফুলব্যবসায়ী ধর্মঘট সমর্থকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘তোমাদের ওপরই এখন ভরসা। আমরা আর মেয়েদের ইজ্জত বাঁচাতে পারলাম না।’’ (উত্তরবঙ্গ সংবাদঃ ১৭ আগস্ট ২০২৪)

সঠিক সময়ে আপনাদেরই পাই

বাঁকুড়া জেলার মফঃস্বল এলাকার একজন সক্রিয় সিপিএম কর্মী বলেন, আমরা আজও দলের ডাকে মিটিং মিছিল করি, কিন্তু তা একবারেই গতানুগতিক। গত কাল আপনাদের দলের তৎপর আহ্বানে সারা রাজ্যের সাথে এ জেলাতেও যে ভাবে বনধ সফল করলেন, তা জনমনে বিপুল সাড়া ফেলেছে। আমরাও উৎসাহ উদ্দীপনা পেয়েছি। বর্তমানে আমাদের দলের কাছে এই তৎপরতা দুরাশা।

জেলার প্রখ্যাত এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কেন্দ্র রাজ্য আলো করা বড় বড় দল শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে ভাবে ধ্বংস করছে, শিক্ষক চিকিৎসকদের প্রতি পদে অমর্যাদা করে চলেছে, তার ভুক্তভোগী আমরা। একমাত্র আপনাদেরই পাই সঠিক সময়ে আমাদের পাশে। পথসভা চলাকালীন ছাতনা কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রী ডিএসও-র বেশ কিছু লিফলেট নিয়ে বলেন, কলেজে ও গ্রামে দেব। প্রতিবাদে সামিল হব। একজন সাংবাদিক বন্ধুর কথায়, বনধের দিন আমরা দাঁড়িয়ে দেখেছি আপনাদের মহিলাদের ওপর পুলিশ অত্যাচার চালিয়েছে। চেষ্টা করেছি তা খানিকটা জনসমক্ষে তুলে ধরতে।