Breaking News

30 এপ্রিল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে কোভিড-১৯ আক্রমণজনিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় আলোচনার দাবি


মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী
পঃ বঃ সরকার
নবান্ন, হাওড়া

বিষয় – কোভিড-১৯ আক্রমণজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুরোধ

মহাশয়া,
গত ২৩ মার্চ নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছিলাম এবং তারপর থেকে এই বিষয়ে আপনাকে পর পর কয়েকটি চিঠি পাঠিয়ে আমাদের আশঙ্কা, পরামর্শ ও দাবিগুলি বারবার উত্থাপন করেছিলাম। গত ২৫ এপ্রিল চিঠি দিয়ে আমরা আবার একটি সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি জানিয়েছিলাম। যাই হোক, পরিস্থিতি যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার অপ্রতুলতা যেভাবে সামনে চলে আসছে, আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে বেড পাওয়া যেভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, ডাক্তার-নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা ও হতাশা বাড়ছে। অন্যদিকে অটো, মোটর ভ্যান, টোটো ও রিক্সা চালক, পরিচারিকা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, হকার, ফল সহ সমস্ত ছোট ব্যবসায়ী, চাষী প্রভৃতি গরীব মানুষের রেশন ও সরকারি সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং তা বন্টনের ক্ষেত্রে দলবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গতকাল ‘প্রচেষ্টা প্রকল্প’ হঠাৎ করে বন্ধ হওয়ার ঘোষণায় গরীব মানুষের মধ্যে আরও হতাশা বেড়েছে। নানা রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থাও অবর্ণনীয়।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারও তার দায়িত্ব পালন করছে না। উপযুক্ত মান বিশিষ্ট প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেস্ট কিট সরবরাহ, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চাল-গম রাজ্যে রাজ্যে পাঠানো, রাজ্যকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য প্রদান, বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য দেওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত গড়িমসি, ব্যর্থতা ও অমানবিক আচরণ আমাদের নজরে এসেছে। বরং এমন সঙ্কটজনক অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার অবৈজ্ঞানিক ও সাম্পদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত দাবি সনদের ভিত্তিতে আমরা আগামী ৩০ এপ্রিল আপনার সাক্ষাৎ প্রার্থী। সকাল ১১টার পর আপনার সুবিধা মত যেকোন সময় আপনি ধার্য করতে পারেন। আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আপনি আমাদের অনুরোধ রক্ষা করবেন।

আমাদের দাবি :
১। হাসপাতালে ডাক্তার নার্স ও সমস্ত প্রকারের স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত মানের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
২। হাসপাতালগুলিতে উপযুক্ত স্ক্রীনিং ব্যবস্থা, ফিভার ওয়ার্ড ও বিভিন্ন স্তরের আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করে কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসার অব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
৩। কেন্দ্রীয় সরকারকে উপযুক্ত সংখ্যায় প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিট সরবরাহ করতে হবে। এবং রাজ্য সরকারকেও এক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪। অ্যাক্টিভ সার্ভিলেন্স, মাস স্ক্রীনিং ও মাস টেস্টিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত রোগীদের সনাক্তকরণ করতে হবে।
৫। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। রোগীদের চিকিৎসা ও মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের স্বাধীনতা হরণ করা চলবে না।
৬। এখনই ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য গ্রামে- শহরে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য ডাক্তার-নার্স, মেডিক্যাল ও বিজ্ঞান আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সভা ডাকতে হবে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সতর্কতা অবলম্বন করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে আটকে থাকা এই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পরিবারগুলি চিহ্নিত করে উপযুক্ত সাহায্য দিতে হবে।
৯। চা বাগানের শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমিককে লকডাউনের সময় পূর্ণ বেতন দেওয়ার শুধু ঘোষণা নয়, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০। সর্বস্তরের শ্রমিক, দিন-মজুর, পরিচারিকা ও নানা ধরনের কাজ হারানো অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার ঘোষিত ‘প্রচেষ্টা প্রকল্প’ সহজ ও সুষ্ঠুভাবে কার্যকরী করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১। কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় চাল-গম রাজ্যে পাঠানোর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
১২। রেশন নিয়ে সংকীর্ণ দলবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং রেশনে খাওয়ার যোগ্য চাল–গম ইত্যাদি উপযুক্ত পরিমাণে সরবরাহের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।
১৩। লকডাউন ও ঝড়বৃষ্টিতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, পান চাষি সহ বোরো ও ভুট্টা চাষে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত চাষিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আগামী মরসুমে চাষের জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য করতে হবে।
১৪। চাষি যাতে মাঠে সবজি নষ্ট করতে বা অতি অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য না হয়, তার জন্য সবজি পরিবহনের ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।

ধন্যবাদান্তে,

চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি
এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)