Breaking News

‘গাজায় আমরা যেন এক একজন নাৎসি’ এক ইজরায়েলি সৈনিকের অন্তর্বেদনা

পৃথিবীর মানচিত্র থেকে গোটা একটা রাষ্ট্র প্যালেস্টাইনকে মুছে দিতে তার উপর আঘাত নামিয়ে এনেছে সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েল। আর মধ্যপ্রাচ্যের তৈল খনির দখল নিতে এবং গাজায় ইজরায়েলি আগ্রাসনে অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিয়ে দেশের ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাদী অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে তেজি করতে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। মদত দিচ্ছে যুদ্ধ উন্মাদনায়। এ যুদ্ধে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার গাজাবাসী। তাই গাজার মানুষের বুক চিরে উঠে আসা আর্তনাদ আমাদের বিবেকের দরজায় প্রশ্ন জাগায়– একি সত্যিই কোনও যুদ্ধ? না কি এই গণহত্যা ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভের লক্ষ্যে এক পরিকল্পিত সাম্রাজ্যবাদী পৈশাচিক চক্রান্ত? সমাজমাধ্যম, সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসা ইজরায়েলের হিংস্র সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ আর গোলা, বারুদ, বিমান হানায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার ভয়াবহ চিত্র শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে অস্থির করে তোলে। হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুর লাশ, নিথর সন্তান কোলে বাবা-মায়ের কান্না, সারি সারি মৃতদেহের দৃশ্য বুকের ভিতর মোচড় দেয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অনাহার, দারিদ্র্য গ্রাস করেছে গাজাবাসীকে। চাই ত্রাণসামগ্রী, চাই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, পানীয়।

বিশ্বের নানা মানবাধিকার সংগঠন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে গাজাবাসীর প্রতি। খাদ্য বিতরণের এই ত্রাণ শিবিরের পাশে শত শত রুগ্ন, ক্ষুধার্ত অপেক্ষারত মানুষের সারি। যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু আসতে পারে জেনেও বেঁচে থাকার তাগিদে মাইলের পর মাইল হেঁটে এসে তারা এখানে ভিড় জমায়। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? গত মে মাসের শেষ থেকে জুন মাসের মধ্যে ক্ষুধার জ্বালায় ধুঁকতে থাকা ছ’শোর বেশি গাজাবাসীকে এই ত্রাণ শিবিরের আশেপাশেই পাশবিক উল্লাসে গুলি চালিয়ে হত্যা করল নিষ্ঠুর ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। এই আক্রমণে আহত হয়েছে ৪০০০-এরও বেশি। এই মর্মান্তিক ঘটনা সারা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছে। বিশ্বমানবতার শত্রু একটা যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদী সরকার এবং তার সহযোগী দেশগুলো শুধুমাত্র নিজেদের সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য কতটা নির্মম হতে পারে তার নির্লজ্জ এক উদাহরণ গাজা গণহত্যা। নূ্যনতম মানবিক মূল্যবোধের স্থান নেই সেখানে। ঘটনার নির্মমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর এক সেনার কথায়– ‘ত্রাণ নিতে আসা মানুষদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য উপর থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও বাছবিচার চলবে না। এ পরিস্থিতি এমনই অমানবিক যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আমরা যেন এক একজন নাৎসি, আর গাজাবাসীরা হল তাদের নির্মমতার শিকার ইহুদি জাতি’।

গাজা গণহত্যায় শামিল ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়নের বীভৎসতার দৃশ্য আর সেনাবাহিনীর এক সৈনিকের উপরোক্ত স্বীকৃতি স্মরণ করিয়ে দেয় জার্মানির স্বৈরাচারী শাসক হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আক্রমণে পীড়িত ইহুদিদের নিদারুণ যন্ত্রণার কথা। মাঝে শুধু আট-নয় দশকের ব্যবধান মাত্র। যুগে যুগে শোষক আর শোষিতের চরিত্র বদলায়নি এক বিন্দুও। নারী শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে বর্ণবাদী-শ্রেণিবিদ্বেষী-উগ্র জাত্যাভিমানী হিটলারের আদর্শে উদ্বুদ্ধ নাৎসিবাহিনী সে দিন হত্যা করেছিল ৬০ লক্ষ ইহুদিকে। বাদ পড়েনি লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী ও বিরোধী মতাবলম্বীও। বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। আজ ইহুদিবাদী ইজরায়েলি শাসকরা প্যালেস্টাইনের আরব জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যা করছে তা হিটলারের থেকে কম কিছু নয়।

যতদিন পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ থাকবে, ততদিন এদের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলি তাদের টিকে থাকার প্রয়োজনেই দেশে দেশে যুদ্ধ বাধাবে। কারণ পুঁজিবাদী শোষণ-নিপীড়নে ধুঁকতে থাকা শ্রমিক শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা কমছে দিনের পর দিন। বন্ধ হচ্ছে কলকারখানা। বন্ধ উৎপাদন। সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে রচিত এই সমাজব্যবস্থায় এখন চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মন্দা। তাই দেশে দেশে যত যুদ্ধ বাধবে, ততই তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক। অর্থনীতির সামরিকীকরণ হবে, অস্ত্রশস্তে্রর বিক্রি বাড়লে পুঁজিবাদী অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কিন্ত ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’। আপামর শিশু-নারী-বৃদ্ধ-যুব এই যুদ্ধে নিদারুণ মৃত্যুবরণ করে। যারা বেঁচে থাকে তাদের জীবন-যন্ত্রণার বিবরণ দেওয়া শক্ত। তাই আজ যুদ্ধবাজ, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সব মানুষকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। বিশ্বের সচেতন সংগ্রামী মানুষের ঐক্যবদ্ধ শান্তি আন্দোলনই পারে যুদ্ধ রুখে দিতে। ইজরায়েলের শাসক নেতানিয়াহু হোক, কিংবা আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প– স্বৈরাচারী শাসক ও তার শাসনব্যবস্থা কখনওই স্থায়ী হতে পারে না।