
শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন কেরালার আশাকর্মীরা। আশাকর্মী এই নামটা এখন গোটা ভারতবর্ষেই পরিচিত। এঁরা গ্রামে-শহরে স্বাস্থ্যপরিষেবার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রসূতি মা সহ সাধারণ মানুষের অসুস্থতায় পরিষেবা দিয়ে থাকেন এঁরা।
পশ্চিমবঙ্গে এই আশাকর্মীরা বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ স্বাস্থ্য স্কিমের দ্বারা নিযুক্ত বলেই এঁদের বলা হয় স্কিম ওর্য়ার্কার। এঁদের বেতনের পরিবর্তে কিছু ভাতা দেওয়া হয়। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি মিলিয়েই সেই ভাতা দেয়। টাকার অঙ্কে সেটা নিতান্তই সামান্য।
ফলে প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই আশাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে বেতন-ভাতা সহ অন্যান্য দাবিদাওয়া জানাতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। কেরালাতেও আশাকর্মীরা একই দাবিতে তাঁদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়ানো ও চাকরি ক্ষেত্রে কিছু শর্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। কেরালার এলডিএফ সরকার তাঁদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করায় তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কোনও কিছুতেই কাজ না হওয়ায় তাঁরা সরকারি দপ্তরের সামনে ফুটপাতে দীর্ঘ আট মাস ধরে টানা অবস্থান শুরু করেন।

আশাকর্মীরা নানা ভাবে সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসাই চেয়েছেন। কিন্তু সিপিএম সরকার অত্যন্ত স্বৈরাচারী কায়দায় দাবিদাওয়া শুনতে, আলোচনা করতে রাজি নয়। বরং এই আন্দোলনের পিছনে যেহেতু রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে এস ইউ সি আই (সি) রয়েছে, তাই নানা ভাবে এই আন্দোলনকে হেয় করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের হতাশ করে কেরালার জনসমাজ, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, বিশিষ্ট মানুষজন এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ান। দিন নেই রাত নেই রাস্তায় পড়ে থেকে এই ভাবে সমাজের গরিব, নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের টানা আন্দোলন ইতিপূর্বে কেরালার ইতিহাসে দেখা যায়নি।
আন্দোলনের চাপে কেরালা সরকার কিছু কাল আগে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে এই সমস্যার সমাধানে তাদের মতামত জানতে চায়। ট্রেড ইউনিয়নগুলি সরকারকে লিখিত ভাবে তা জানায়। সরকার নিয়োজিত একটি কমিটি সেগুলি পর্যালোচনা করে তাদের সুপারিশও সরকারের কাছে জমা দেয়।

কিন্তু সিপিএম সরকার সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব থাকে। এই অবস্থায় আশাকর্মী ইউনিয়ন (এ এইচ ডব্লুউ এ) ২২ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করার ডাক দেয়। ওই দিন নিরস্ত্র হাজার হাজার মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে মিছিল করে যাওয়ার সময় পুলিশ লোহার ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকায়। দাবিদাওয়া শোনার পরিবর্তে জলকামান চালিয়ে তাঁদের হঠিয়ে দিতে বেশি তৎপরতা দেখায়। তাতেও আশাকর্মীরা পিছপা না হওয়ায় পুলিশ তাঁদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। বেশ কিছু আশাকর্মীর গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এই হচ্ছে কেরালার সিপিএম সরকারের চরিত্র। আশাকর্মীরা ঘোষণা করেছে, ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।