৫ আগস্টের ব্রিগেড হবে মেহনতি জনতার মিলনক্ষেত্র

উত্তর কলকাতার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষের প্রচার চলছে। দলের কর্মীরা ব্রিগেডে আসার আবেদন জানিয়ে হ্যান্ডবিল দিতেই এক প্রৌঢ় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, বাবা সিপিআই করতেন। বাড়িতে বামপন্থী একটা পরিবেশ ছিল। ছোট থেকেই এই পরিবেশে বড় হয়েছি। এস ইউ সি সম্পর্কে দলের নেতারা বলতেন, এস ইউ সি কংগ্রেসের দালাল। আজ কী হচ্ছে? সিপিএম সেই কংগ্রেসকেই গলার মালা করেছে। এখন তৃণমূলকে দেখছি। এরা কেউ সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। ক্ষমতার গদিতে বসাই এদের একমাত্র লক্ষ্য। এখন মনে হচ্ছে আপনারাই ঠিক। এতদিন আপনাদের চিনতে পারিনি, তার খেসারত দিতে হচ্ছে। খেসারত কিসের? জানতে চাওয়ায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই মানুষটির আক্ষেপ, খেসারত নয়! পাশে থেকে আপনাদের শক্তি অনেক বাড়ানো দরকার ছিল। আপনারাই তো সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই করেন। অন্যরা তো মেকি দরদি। শিক্ষা বলুন, বিদ্যুৎ বলুন, জিনিসপত্রের দামের বিরুদ্ধে বলুন, একটাই তো প্রতিবাদী কণ্ঠ। আমি অবশ্যই ব্রিগেড যাব।

স্বনামখ্যাত এক চিকিৎসক বললেন, অন্য চিকিৎসকদের নিয়ে ব্রিগেড যাব। দর্শন জগতে শিবদাস ঘোষের অবদান, চিকিৎসায় নৈতিকতা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে শিবদাস ঘোষের চিন্তা যুগান্তকারী। কমরেড প্রভাস ঘোষের ভাষণ শুনতে ৫ আগস্ট আত্মীয়-বন্ধুদেরও নিয়ে আসার কথা বললেন তিনি।

মধ্য কলকাতার রাজা রামমোহন সরণিতে ৫ আগস্টের ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার চলছে। বয়স্ক এক মহিলা তিনতলা থেকে নেমে প্রচারপত্র নিলেন। মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষের শতবর্ষ শুনে সোভিয়েত বিপ্লবের রূপকার লেনিনের কর্মকাণ্ড আবেগে বলতে শুরু করেন। বললেন, এঁরাই তো দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এঁদের শতবর্ষ হবে না তো কাদের হবে! ব্রিগেড সমাবেশের জন্য সাধ্যমতো সাহায্য স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে দিলেন। বিপ্লবের স্বপ্ন দেখায় বয়স যে বাধা হতে পারে না, তা তাঁর চোখমুখে ফুটে উঠল।

সূর্য সেন স্ট্রিট লাগোয়া এলাকায় প্রচার চলছে। এক মহিলা উচ্চকণ্ঠে বললেন, ব্রিগেড যেতে হবে নাকি? পাশ থেকে একজন বললেন, ও সে তো প্রায়ই হয়। ওই মহিলা বললেন, না, এটা এসইউসিআই-এর ব্রিগেড। এরা আমাদের কাছে হাত পেতে পয়সা তুলে মিটিং করছে। আমাদের যেতে বলছে। তারপর এক স্বেচ্ছাসেবককে বললেন, আমাদের অভাবের সংসার। কিন্তু অল্প বয়স থেকেই দেখেছি আমার মা আপনাদের সভা-সমাবেশের জন্য কত কষ্ট করে রুটি করে দিত। তাই দেখে দেখে আমরা এই পার্টিটাকে চিনেছি। এরা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের থেকে সাহায্য নিয়ে তাদের দাবিতেই লড়ে, মিছিল করে। আমরা যাব না, তো কে যাবে!

বেলেঘাটা এলাকায় পরিচারিকার কাজ করেন এক মহিলা। কাজের বাড়িগুলিতে বলে রেখেছেন, ৫ আগস্টের জন্য তাঁকে ছুটি দিতে এবং সভার জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করতে। বললেন, ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা তো খেটেই যাই, ঘরে কি বাইরে। কিন্তু ওই একটা দিন নিশ্চয় যাব। পড়াশোনা না জানা সমাজের প্রত্যন্ত অংশের একজনও শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ।

সমাজের সব অংশের মানুষের অংশগ্রহণে ৫ আগস্ট ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড হয়ে উঠবে যথার্থই মেহনতি মানুষের সংগ্রামের দিশা জাগানো এক মিলনক্ষেত্র, যা বাঁচতে শেখায়, বেঁচে থাকার পথ দেখায়।