পাঠকের মতামতঃ মোদিজি-ই জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরেছেন!

দেশের অর্থনৈতিক বছর শেষের মাস অর্থাৎ মার্চ মাসের শেষ দিন ৩১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর দশ বৎসরের শাসন কালে এই প্রথম ‘ন্যাশনাল এক্সক্লুসিভ’-এ রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিল্লি থেকে হাজির হয়েছিলেন তামিলনাড়ুর তানাথি টিভি লাইভে। দেশের রাজধানী দিল্লিতে তাবড় তাবড় ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলের স্টুডিও থাকা সত্ত্বেও হাজার কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ুর একটি আঞ্চলিক টিভিতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রথম ন্যাশনাল এক্সক্লুসিভ করলেন কেন? এ প্রশ্ন ওঠা যুক্তিসঙ্গত হলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে কোনও যুক্তির ধার ধারেন না, তা তার এক ঘন্টার এই লাইফ এক্সক্লুসিভ দেখলেই বোঝা যায়। সাক্ষাৎকারের শেষ কুড়ি মিনিট উপস্থিত দু’জন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন রাখেন। যেমন, নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর বিজেপি দলের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। অনেকটা নায়কোচিত ভঙ্গিতে মোদিজি জানান যে, নির্বাচনী বন্ডের কিছু খামতি রয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ সব নিয়ে আজ সবাই যে প্রশ্ন তুলতে পারছে তার ক্রেডিট আসলে মোদিজির নিজেরই। কারণ আগের কংগ্রেস সরকার সহ কোনও সরকারি দলই নির্বাচনী ফান্ডের এমন স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ করেনি, তারা সবাই জনগণকে ঠকিয়েছে।

অর্থাৎ মোদিজি বলছেন একমাত্র তিনিই জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরেছেন! কিন্তু কী সেই সত্য? সত্যিই কি মোদিজি চেয়েছিলেন যে নির্বাচনী বন্ডের যাবতীয় তথ্য প্রকাশিত হোক? বরং ঘটনাক্রম ঠিক উল্টোটাই। নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ বছর ধরে কেস চলার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয় এবং এসবিআই-কে যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দেশবাসী অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছে যে কী ভাবে সরকারি ব্যাঙ্ক এসবিআই তথ্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছে ও নির্লজ্জ ভাবে সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে বন্ডের তথ্য ভোটের আগে প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। মোদিজি হয়তো ভেবেছেন যে জনগণ বোকা, তাই সরকারি ব্যাঙ্কের এমন ভক্তসুলভ মনোভাবের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে সে নিয়ে জনতার প্রশ্ন থাকবে না। তাই তিনি নির্দ্বিধায় একটা নির্জলা মিথ্যাকে চালিয়ে দিলেন। যেন তাঁর ইচ্ছেতেই নির্বাচনী বন্ডের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ পেয়েছে! অর্থাৎ ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সাথে কোন কোন লটারি কোম্পানি, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ওষুধ কোম্পানির কত টাকার লেনদেন হয়েছে সেই তথ্য প্রকাশিত হোক, এটা স্বয়ং মোদিজিই নাকি চেয়েছেন!

হয়তো মোদিজি ভেবেছেন এ দেশের আম জনতা নিরেট গবেট। না হলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ মোট নির্বাচনী বন্ডের পঞ্চাশ শতাংশ ঘুষ নিয়েছে যে বিজেপি দল তাকেই বা ভোট দিয়ে জেতাবে কোন আক্কেলে! তাই এক্সক্লুসিভ-এর প্রায় শেষের দিকে তিনি বলেছেন যে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তিনি তৃতীয়বারের জন্য নিশ্চিতভাবেইপ্রধানমন্ত্রীহতেচলেছেন।কারণজনতাজনার্দনইতিমধ্যেইতাদেরমনেরমধ্যেতাঁকেগ্রহণকরেছেন।যেদেশের৪০.৫শতাংশসম্পদেরমালিকমাত্র১শতাংশকোটিপতি (২০২১-এর অক্সফাম রিপোর্ট), যাদের কেনা ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকায় মোদিজির লাখ টাকার জামা তৈরি হয়, যাদের দেওয়া চার্টার বিমানে তিনি তামিলনাড়ু গেলেন এবং যাদের দেওয়া শত শত কোটি টাকা খরচে প্রচারিত তাঁর নিজের ছবির বিজ্ঞাপনে তিনি মিশন ৪০০ টু ভিশন ২০৪৭-এর স্বপ্ন দেখছেন, সেই দেশের বাকি ৯৯ শতাংশ সাধারণ শ্রমজীবী জনতা কি তাঁর প্রিয় জনতা জনার্দন হতে পারে?

ডাঃ দীপক কুমার গিরি

বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর