স্পর্ধার ব্রিগেড প্রত্যয়ের ব্রিগেড

 

 

ধূসর আকাশের নিচে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ সুউচ্চ মঞ্চ। লাল পতাকা ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলেছে। বুকে আঁকা কমরেড শিবদাস ঘোষের দীপ্ত মুখ– শোষণমুক্তির শপথে উজ্জ্বল মমতাভরা চোখদুটিতে বিপ্লবের স্বপ্ন। মঞ্চের সামনে থেকে মাঠের বিপরীত প্রান্তে বিশাল লাল তোরণের দিকে যতদূর চোখ যায়– শুধু মানুষ আর মানুষ। এ জনসমুদ্র প্রত্যয়ে স্থির, সংগ্রামী শপথে দৃঢ, সত্য সন্ধানে উদগ্রীব। মঞ্চে আসীন নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে গভীর আগ্রহে তাঁরা জেনে নিতে চান আগামী সংগ্রামের দিশা। ৫ আগস্ট এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর ডাকে এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক, দলের প্রতিষ্ঠাতা, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ছিল কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহা-সমাবেশের ছবি।

ব্রিগেডে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ

দেশের প্রান্তে প্রত্যন্তে পৌঁছেছিল আহ্বান– ৫ আগস্ট ব্রিগেড চলো। প্রিয় দলের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিটি রাজ্য থেকে দলে দলে মেহনতি নারী-পুরুষ-ছাত্র-যুব সে দিন সমবেত হয়েছিলেন ব্রিগেডের মাঠে। দুর্লঙ্ঘ বাধার পাহাড় একটু একটু করে সরিয়ে দেশের মাটিতে একটি যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করার অসাধ্যসাধনে সামিল হয়ে তরুণ কমরেড শিবদাস ঘোষ বিপ্লবী স্পর্ধায় একদিন বলেছিলেন, ‘‘যদি কিছু নাও করতে পারি, অন্তত একটা ইট গেঁথে দিয়ে যাব…”। শুধু ইট গাঁথা নয়, এস ইউ সি আই (সি) পার্টি গঠন করে যে ইমারতের সূচনা তিনি করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তা আজ সুউচ্চে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ৫ আগস্ট ব্রিগেডের মহাসমাবেশ তারই সাক্ষ্য দিয়ে গেল। বিপুল এই জনসমাবেশ দেখিয়ে দিয়ে গেল, নীতিহীন ভোটসর্বস্বতা নয়, গণআন্দোলন তথা লড়াই-সংগ্রামই বিপ্লবী রাজনীতির শক্তির আসল উৎস।

মঞ্চে মহান নেতার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করছেন কমরেড প্রভাস ঘোষ

কোথা থেকে না এসেছিলেন মানুষ! উত্তরে হিমালয় পর্বতপ্রান্তের হিমাচল প্রদেশ, সিকিম থেকে শুরু করে গোটা উত্তর ভারত-মধ্য ভারত হয়ে দক্ষিণের সমুদ্র উপকূলের সমস্ত রাজ্য, পশ্চিমে গুজরাট, রাজস্থান থেকে পূর্ব প্রান্তের আসাম সহ অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এমনকি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুর থেকেও বহু মানুষ প্রবল আগ্রহ নিয়ে শুনতে এসেছিলেন তাঁদের প্রাণের দল এস ইউ সি আই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের ভাষণ। এ রাজ্যের জেলাগুলি থেকে দলে দলে মানুষ এসেছিলেন স্পেশাল ট্রেন কিংবা কামরা রিজার্ভ করে, বাস ভাড়া করে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপগুলি থেকে নৌকায় দীর্ঘ জলপথ পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন মানুষ। এসেছিলেন উত্তরবঙ্গের ছিটমহলের বাসিন্দারাও। অন্য রাজ্যগুলি থেকেও স্পেশাল ট্রেনে বা কামরা রিজার্ভ করে, কিংবা বাস নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা এসেছিলেন। জলের অভাব, পর্যাপ্ত খাবার নেই, প্রয়োজনের তুলনায় কম জায়গায় কোনও রকমে একটু ঠাঁই করে নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে এসেছিলেন তাঁরা। কাউকে কোলের শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়েছে। সাথী প্রবীণ কমরেডদের কষ্ট লাঘব করতে অনেককেই বাস-ট্রেনের মেঝেয় বসে আসতে হয়েছে। অসুস্থতা উপেক্ষা করে এসেছেন অনেকে। কোথাও শেষ মুহূর্তে ট্রেন বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ, কোথাও অন্য কোনও বিপর্যয়। কিন্তু কোনও বাধাই আটকাতে পারেনি তাঁদের। অসীম দৃঢ়তায় সমস্ত অসুবিধা দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তাঁরা যে আসছেন শোষণমুক্তির দিশারি মহান নেতার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে! কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা তাঁদের বুকের গভীরে। তিনি বলেছিলেন, কমিউনিস্টদের সংগ্রাম সত্য সাধনার সংগ্রাম। বলেছিলেন, এ যুগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সত্যকে জানবার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সর্বহারা শ্রেণির। সেই সত্যের সন্ধান পেয়ে, আগামী সংগ্রামের পথনির্দেশ বুঝে নিতে গোটা দেশ থেকে সব স্তরের খেটে-খাওয়া মানুষ সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন ব্রিগেডের মাঠে। উপস্থিত হয়েছিলেন বিদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।

পতাকা উত্তোলন করছেন কমরেড সৌমেন বসু

সকাল থেকেই সেদিন নানা দিক দিয়ে মিছিল করে দলে দলে মাঠে ঢুকতে শুরু করেছিলেন মানুষ। মিছিল তো নয়, এ যেন উত্তাল জনতরঙ্গ! বলিষ্ঠ স্লোগানে মথিত হচ্ছে আকাশ। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত স্লোগানের তালে তালে বারে বারে উত্থিত হচ্ছে ঊর্ধ্বপানে। পথশ্রম, রোদ-বৃষ্টির আঁচড়ে চোখ-মুখে ফুটে ওঠা শ্রান্তিকে ছাপিয়ে উঠেছে প্রিয় দলের ডাকে প্রিয়তম নেতার জন্মশতবর্ষের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আনন্দ। মুক্তিসংগ্রামে সামিল হওয়ার শপথ প্রাণবন্ত সেইসব মিছিলে মিছিলে। পোশাকে চাকচিক্য নেই, কিন্তু শোষণমুক্ত আগামী সমাজের স্বপ্নে বিভোর চোখগুলির উজ্জ্বলতা যেন সূর্যের দীপ্তিকেও হার মানায়।

ব্রিটিশের হাত থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও রাষ্ট্রক্ষমতা পুঁজিপতি শ্রেণির করায়ত্ত হওয়ায় জনসাধারণের শোষণমুক্তি যে ঘটেনি এবং একটি যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া এ মুক্তি অসম্ভব– মার্ক্সবাদের শিক্ষার আলোকে এ কথা সেদিনই ধরতে পেরেছিলেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। সমাজমুক্তির অদম্য আকাঙক্ষায়, শোষিত মানুষের প্রতি অসীম মমতায় মুষ্টিমেয় সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করে ১৯৪৮ সালে এ দেশের বুকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন যথার্থ একটি কমিউনিস্ট দল– এস ইউ সি আই (সি)। তাঁর সমগ্র জীবনসংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই দলটির গড়ে ওঠা ও বিকাশের সঙ্গে। এ দেশের জনসাধারণের শোষণমুক্তির সংগ্রামের অগ্রদূত মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গত এক বছর ধরে তাই নানা কর্মসূচি উদযাপন করে এসেছে দল, গত বছর দিল্লিতে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে যার সূচনা। এ বছরের ৫ আগস্ট সেই কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। গণআন্দোলনের কত শহিদের রক্তে লেখা এই দলের ইতিহাস! মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারাকে হাতিয়ার করে শত শহিদজননীর চোখের জল আর দেশের কোটি কোটি শোষিত নিপীড়িত মানুষের যন্ত্রণা বুকের গভীরে বহন করে সংগ্রামী বামপন্থার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে গণআন্দোলনের পথ ধরে একটু একটু করে বড় হয়েছে এই দল। রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সরকারি ক্ষমতার ছিটেফোঁটা নেই, নেই একজনও এমএলএ-এমপি, তা সত্ত্বেও দলের ডাকে ৫ আগস্ট ব্রিগেডে উপচে পড়া বিপুল জনসমাবেশ দেখে কর্মী-সমর্থক-দরদিরা যেমন, তেমনই বামপন্থী ও গণতন্ত্রপ্রিয় সাধারণ মানুষ সকলেই তাই আনন্দে উদ্বেল। আবেগে কারও চোখে জল।

গত এক বছর ধরে কমরেড শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশ জুড়ে অসংখ্য সভা সমাবেশ উদ্ধৃতি ও ছবি প্রদর্শনী, বুকস্টল সহ অসংখ্য কর্মসূচির পাশাপাশি দলের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন। অসংখ্য ছোট বড় সভা, পথসভা, হাট মিটিং, মাঠ মিটিং, গেট মিটিং, মাইক প্রচার ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে গিয়ে হ্যান্ডবিল দিয়ে জনসাধারণকে ব্রিগেডে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। দেশ জুড়ে শহরে গ্রামে দেওয়ালে দেওয়ালে কর্মীরা তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন কমরেড শিবদাস ঘোষের অমূল্য শিক্ষার টুকরো মণিমানিক্য। আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার। পোস্টারে, পতাকায় ছেয়ে গেছে গোটা দেশের গ্রাম শহরের পথঘাট, অলিগলি। সমাবেশের কিছুদিন আগে থেকে ব্রিগেডের শহর কলকাতা সেজে উঠেছে অসংখ্য লাল পতাকা আর দলের ব্যানারে। বর্ষার শহরে সে যেন এক অকালবসন্তের রাঙা আগমনবার্তা! দলের কর্মীরা খাওয়া দাওয়া বিশ্রামের তোয়াক্কা না করে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন। রোদে পুড়ে জলে ভিজে স্টেশনে বাজারে হাটে বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে তিল তিল করে সংগ্রহ করেছেন অর্থ। ঘরে ঘরে গিয়ে হাত পেতে সাহায্য নিয়েছেন। দেশের মানুষও প্রাণ ঢেলে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, একার শক্তিতে তোমরা ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছো! পারবে তো লক্ষ্যে পৌঁছতে? আসলে হৃদয়ের গভীর থেকে তাঁরা প্রত্যেকেই চেয়েছেন, তাঁদের প্রিয় দল, দাবি-দাওয়া আদায়ের লড়াইয়ের একমাত্র বিশ্বস্ত সাথী এস ইউ সি আই (সি)-র ব্রিগেড সমাবেশ সফল হোক। তা না হলে শুধু দলের কর্মীদের সাধ্য ছিল না এ দিনের জনসমাবেশের এমন মহতী রূপদানের। শুধু সাধারণ মানুষই নন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিচের তলার কর্মী ও সমর্থকরা, বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলির অসংখ্য মানুষ এস ইউ সি আই (সি) কর্মীদের হাতে অর্থ তুলে দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়ে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার তুঙ্গে তুলতে সহায়তা করেছেন। ৫ আগস্ট ব্রিগেড উপচে পড়েছে শুধু দলের কর্মী-সমর্থক-দরদিদের উপস্থিতিতেই নয়, অন্য দল, বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলি থেকে অসংখ্য মানুষ সেদিন প্রবল আগ্রহে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, কান পেতে শুনেছেন নেতৃবৃন্দের আহ্বান– শুধু ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের আসন থেকে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট বিজেপিকে হঠালেই দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ধুয়ে ফেলা যাবে না। রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকার সরে গেলেই প্রশাসন গণতান্ত্রিক ও দুর্নীতিমুক্ত হয়ে যাবে না। চাই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করে উন্নত নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে জনজীবনের নানা দাবিতে লাগাতার গণআন্দোলন। চাই সর্বহারা রুচি-সংস্কৃতির গভীর চর্চা। সেই পথে হেঁটেই আগামী দিনে পৌঁছতে হবে শোষণমুক্তির শেষ লড়াই– পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ময়দানে। বিপ্লবের স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথে নামা যে মানুষগুলি ভোট-রাজনীতির আবর্তে পড়ে যন্ত্রণায় গুমরে মরছিলেন, এস ইউ সি আই (সি)-র সংগ্রামী রাজনীতির বিপ্লবী স্পর্ধা তাঁদের সেই স্বপ্নকে আবার যেন জাগিয়ে দিয়ে গেল। আশা-স্পন্দিত বুকে প্রাণখুলে তাই তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন এই দলের কর্মীদের। বলেছেন, তোমরাই পারবে মুক্তিসংগ্রাম সফল করতে। এগিয়ে চল, আমরাও সঙ্গে আছি।

৫ আগস্ট বেলা দশটা থেকে ব্রিগেড মুখরিত হতে শুরু করেছিল মঞ্চ থেকে ভেসে আসা নানা রাজ্যের কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাষায় গাওয়া গণসঙ্গীতের সুরে। উচ্চকিত স্লোগানে কম্পিত হচ্ছিল সারা মাঠ। ইতিমধ্যেই ব্রিগেড প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। এর পরেও স্রোতের মতো আসছেন অগণিত মানুষ, আসছে একের পর এক মিছিল। মঞ্চের উপর থেকে নেতৃবৃন্দ নানা ঘোষণা করছেন, জনতাকে সুশৃঙ্খলিত ভাবে উপবেশনে স্বেচ্ছাসেবকদের দিচ্ছেন পরামর্শ ও নির্দেশ। স্লোগানের গর্জনে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ব্রিগেড যেন উৎসাহে উদ্দীপনায় টগবগ করে ফুটছে। কিন্ত শত উদ্দীপনার মাঝেও রয়েছে অটুট শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা। সমাবেশের পুরো সময়টা ধরে উপস্থিত মানুষ সেদিন এক অসাধারণ স্বেচ্ছারোপিত শৃঙ্খলা ও সংযমের পরিচয় দিয়ে গেছেন, যা সংবাদমাধ্যম সহ অনেকেকেই বিস্মিত করেছে।

কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হল ঠিক বেলা বারোটায়। রক্তপতাকা উত্তোলন করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু। স্লোগানের ঢেউয়ে ঢেউয়ে প্লাবিত হল ব্রিগেড। মঞ্চের বাঁ দিকে ছিল তিনটি প্রদর্শনী। কমরেড শিবদাস ঘোষের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড রবীন সমাজপতি। মহান চিন্তানায়কের জীবনের নানা মুহূর্তের ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড কান্তিময় দেব এবং পার্টির সূচনা পর্ব থেকে আজ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনগুলির ছবিতে সজ্জিত তৃতীয় প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড গোপাল কুণ্ডু।

কমরেড প্রভাস ঘোষের হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন বাসদ(মার্ক্সবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা

শুরু হল মঞ্চের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। মঞ্চে আসন গ্রহণের অনুরোধ জানানো হল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র নির্বাহী ফোরাম ও সে দেশের বাম-গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা এবং নেপালের প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী নেতা নিনু চাপাগাইনকে। সমাবেশের সভাপতির নাম প্রস্তাব করলেন দলের পলিটবুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। প্রস্তাব সমর্থন করলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিহার রাজ্য সম্পাদক কমরেড অরুণ সিং। সভাপতির আসন গ্রহণ করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড কে রাধাকৃষ্ণ। উচ্চকিত স্লোগানের ভিতর দিয়ে হেঁটে মঞ্চে উপস্থিত হলেন প্রধান বক্তা, সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। দলের সঙ্গীত স্কোয়াডের গাওয়া কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণে রচিত সঙ্গীতের সুর তখন ছড়িয়ে পড়ছে ব্রিগেড জুড়ে।

মঞ্চের উপরে স্থাপিত সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের সুসজ্জিত প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের পর্ব শুরু হল। পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে না পারায় তাঁর পক্ষে মাল্যদান করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড স্বপন ঘোষ। একে একে প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানালেন দলের পলিটবুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা, বিভিন্ন রাজ্য কমিটির সম্পাদক এবং ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠন সহ বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান এবং উপজাতি ও বনবাসী ফোরামের মতো গণসংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বিদেশি প্রতিনিধিরা। সবশেষে সভার সভাপতি কমরেড কে রাধাকৃষ্ণ ও প্রধান বক্তা কমরেড প্রভাস ঘোষ মাল্যদান করলেন।

ইতিমধ্যে দলের কিশোর বাহিনী কমসোমল প্রস্তুত কমরেড শিবদাস ঘোষের স্মৃতির প্রতি গার্ড অফ অনার প্রদর্শনে। ব্যান্ডের তালে তালে শুরু হল রক্তপতাকা কাঁধে নিয়ে শুভ্র পোশাকে সজ্জিত কমসোমল বাহিনীর সুশৃঙ্খল প্যারেড। তাদের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চাসীন নেতৃবৃন্দই শুধু নন, গোটা ব্রিগেডের মানুষ লাল সেলাম জানালেন শোষণমুক্তির সংগ্রামের প্রতীক মহান কমরেড শিবদাস ঘোষের অমূল্য জীবনসংগ্রামের উদ্দেশে।

মঞ্চে আসীন কমরেড সাধারণ সম্পাদকের হাতে স্মারক তুলে দিলেন বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম দল বাসদ (মার্ক্সবাদী)-র পক্ষে কমরেড মাসুদ রানা। বিদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম দলগুলি সমাবেশে উপস্থিত হতে না পেরে বার্তা পাঠিয়েছে, একে একে সেগুলি পাঠ করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড অমিতাভ চ্যাটার্জী। বাংলাদেশের বাসদ (মার্ক্সবাদী), আমেরিকার পার্টি অফ কমিউনিস্টস ইউএসএ ও ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড পার্টি, শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট ইউনিটি সেন্টার, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তান ও নেপাল থেকে সমাবেশে আসা প্রতিনিধিদলের বার্তা তিনি পাঠ করলেন।

শুরু হল সভাপতির ভাষণ। তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কমরেড কে রাধাকৃষ্ণ বললেন, মার্ক্সবাদী দর্শন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সঠিক ভাবে আয়ত্ত করার মধ্য দিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী হয়েছিলেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর বহু ভবিষ্যদ্বাণী আজ সত্য প্রমাণিত হয়ে চলেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও সত্যিকারের স্বাধীনতা আজও দেশের মানুষ পায়নি। শাসক শ্রেণির ষড়যন্ত্রে গোটা দেশ সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিভেদ বিভাজনে অশান্ত হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে মণিপুরের সাম্প্রতিক গণহত্যার উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, শুধু ভোট দিয়ে সরকার পাল্টে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিকে বদলানো যাবে না। দেশ জুড়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনই একমাত্র পারে বিভেদের এই রাজনীতিকে পরাস্ত করতে।

বক্তব্য রাখলেন দলের পলিটবুরো সদস্য, কৃষক সংগঠন এআইকেকেএমএস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি ও দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড সত্যবান। ৫ আগস্ট দিনটিকে শোষিত নিপীড়িত মুক্তিকামী মেহনতি জনগণের জীবনে একটি মহান ঐতিহাসিক দিন হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে শত শহিদের স্বপ্ন আজও অপূরিত। দেশের সম্পদ সৃষ্টিকারী জনগণের পরিবর্তে পুঁজিপতি শ্রেণি রাষ্ট্রের মালিক হয়ে বসেছে। দেশে কায়েম হওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আজ আর মানুষকে ভাল কিছু দিতে পারে না। আজ পুঁজিবাদ নীতি-নৈতিকতার উপর আক্রমণ করছে, জ্ঞানবিজ্ঞান-ইতিহাসকে বিকৃত করছে। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থারই রক্ষক কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার একযোগে মণিপুরে আগুন জ্বালিয়েছে। তিনি বলেন, বিজেপির মতো জঘন্য সাম্প্রদায়িক শক্তিকে অবশ্যই সরকার থেকে হঠাতে হবে, কিন্তু ভোট ব্যবস্থা, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আজ জনজীবনের মূল সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে না। এর জন্য চাই শক্তিশালী গণআন্দোলন। চাই সত্যিকারের কমিউনিস্ট পার্টি। কমরেড শিবদাস ঘোষ সেই উদ্দেশ্য থেকেই গড়ে তুলেছিলেন এস ইউ সি আই (সি)-কে। তিনি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদকে আরও বিকশিত করেছেন। উপস্থিত জনতার কাছে আহ্বান জানিয়ে কমরেড সত্যবান বলেন, আসুন মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারাকে হাতিয়ার করে আমরা এগিয়ে চলি।

শুরু হল প্রধান বক্তার ভাষণ। কমরেড প্রভাস ঘোষ প্রথমেই সমাবেশে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও বিদেশি সাথীদের স্বাগত জানালেন। সমাবেশ সফল করতে জনগণের দু-হাত বাড়ানো সাহায্যের উল্লেখ করে তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, এই সহযোগিতা না পেলে ব্রিগেডে এমন সুবিশাল সমাবেশ আমরা করতে পারতাম না।

দল গঠনের প্রথম পর্বে কমরেড শিবদাস ঘোষের অনন্যসাধারণ সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর অমূল্য শিক্ষা উল্লেখ করে কমরেড প্রভাস ঘোষ বললেন, তিনি শিখিয়ে গিয়েছেন, বিপ্লবের চেয়ে বড় সম্পদ, বিপ্লবী জীবনের চেয়ে বড় জীবন আর কিছু নেই। বললেন, কমরেড শিবদাস ঘোষের সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারে না। তিনি আমাদের বুকের মধ্যে আজও বেঁচে আছেন। তাঁর দেখানো পথ ধরে চলেই কোনও এমএলএ-এমপি-র জোরে নয়, প্রচারমাধ্যমের জোরে নয়, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সত্যের শক্তির জোরে আজ এস ইউ সি আই (সি) এতবড় সমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে যেখানে দেশের ২৬টি রাজ্য থেকে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছেন।

পার্টি গঠনের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কমরেড ঘোষ, সদ্যস্বাধীন দেশে একটি কমিউনিস্ট নামধারী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসম্পন্ন পার্টি থাকা সত্ত্বেওও কেন কমরেড শিবদাস ঘোষকে সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে এস ইউ সি আই (সি) দলটিকে গড়ে তুলতে হল, তা বিশ্লেষণ করেন। মুখে মার্ক্সবাদের কথা বললেও সিপিআই দলটি কেন সত্যিকারের মার্ক্সবাদী পার্টি হিসাবেই গড়ে উঠতে পারেনি, প্রাঞ্জল ভাবে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দেখান, ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সিপিআই দলটি বুঝতেই পারেনি যে ভারত রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই ১৯৪৭ সালেই। অধঃপতিত ব্যক্তিবাদের রূপ তারা ধরতেই পারেনি। যে জন্য মার্ক্সবাদী রাস্তায় যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। সেই পথ ধরেই সিপিআইএম-ও কী ভাবে মার্ক্সবাদী নামধারী পার্টি হিসাবে আজ একটি ভোটসর্বস্ব সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে পরিণত হয়েছে, উদাহরণ তুলে ধরে তা ব্যাখ্যা করেন তিনি।

হাওড়া স্টেশনে নেপাল থেকে আসা প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড দেবাশীষ রায়

কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত আদর্শ উন্নত চরিত্র ও উন্নত নীতি-নৈতিকতার জন্ম দেয়। এই শিক্ষা বুকে নিয়ে এস ইউ সি আই (সি) জন্মলগ্ন থেকে গণআন্দোলনের পথ ধরে জনজীবনের প্রতিটি সমস্যা নিয়ে সংগ্রাম গড়ে তুলছে, শোষিত মানুষকে সংগঠিত করছে।

দেশের সর্বাত্মক সংকটজনক পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায়ই ডবল ইঞ্জিন সরকার নিয়ে গর্ব করেন। এই ডবল ইঞ্জিনের গাড়িতে আসলে বসে আছে আম্বানি, আদানিদের মতো হাতে গোনা একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠী। আর এই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপির ধর্মভক্তির মূলে আছে আছে ভোটের স্বার্থ। ভোটে জিততে এরা আরও দাঙ্গা বাধাবে। এদের অবশ্যই সরকারি ক্ষমতা থেকে হঠাতে হবে। কিন্তু শুধু ভোটের মাধ্যমে বিজেপিকে হঠালেই দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ দূর করা যাবে না। কমরেড ঘোষ দেখান, ‘ইন্ডিয়া’ বলে বিজেপি-বিরোধী যে জোট হয়েছে, সেটিও বিজেপির এনডিএ জোটের মতোই একচেটিয়া পুঁজিবাদের স্বার্থরক্ষাকারী দলগুলির আরেকটি জোট।

রাজ্যের তৃণমূল সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ ও দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করেন কমরেড প্রভাস ঘোষ। বলেন, ৩৪ বছরের সিপিএম শাসনে ত্যক্ত-বিরক্ত জনসাধারণ তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল ২০১১ সালে। তারা বলেছিল, বদল চাই। কোথায় সেই বদল? সেই নির্বাচনে তৃণমূলকে রিগিং করতে হয়নি। কিন্তু এখন প্রতিটি নির্বাচনে সিপিএমের রাস্তা ধরেই ব্যাপক রিগিং করে তারা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল রাজ্যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। বলেন, আগেকার দিনে জমিদাররা যেমন সারা বছর প্রজাদের রক্তশোষণ করে মাঝে মাঝে কাঙালিভোজন করাতো, তেমনই তৃণমূল সরকার জনগণেরই করের টাকায় তাদের নানা প্রকল্পের নামে অনুদান ছুঁড়ে দিচ্ছে।

কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, এই অবস্থায় প্রয়োজন দেশজোড়া গণআন্দোলন। কারণ, দলের নাম যাই-ই হোক, রাজনীতি আসলে দুটো। একটি শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে রক্ষার রাজনীতি, অন্যটি পুঁজিবাদী শোষণবিরোধী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থবাহী রাজনীতি। তিনি বলেন, পচা গলা পুঁজিবাদ আজ সমাজের বিকাশ রুদ্ধ করছে। মানুষের বিবেক, মনুষ্যত্ব, চরিত্রকে ধ্বংস করছে। এই অবস্থায় বিপ্লবের ঝান্ডা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এস ইউ সি আই (সি)। বড় বামপন্থী দল হিসাবে সিপিআইএমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ বামপন্থী আন্দোলন। ভোটসর্বস্ব রাজনীতি ছেড়ে আন্দোলনের রাস্তায় আসুক সিপিএম। আমরা একসঙ্গে মানুষের দাবি নিয়ে লড়ব।

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা রাজনীতি সচেতন হোন। না হলে বারবার আপনাদের প্রতারিত হতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলনে বীর শহিদদের নাম উল্লেখ করে উপস্থিত মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যাঁরা প্রবল আবেগ নিয়ে আজকের সমাবেশে এসেছেন, তাঁরা ঘরের একটি দুটি সন্তানকে দলের হাতে তুলে দিন। তাদের হয়ত ফাঁসির দড়িতে প্রাণ যাবে, কিন্তু তারা জীবন দিয়ে হলেও মনুষ্যত্বের মর্যাদা রক্ষা করে যাবে।” জনগণের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের সমর্থন করুন। এই পার্টি আপনাদের, গরিব-শোষিত মানুষের পার্টি। এই দলকে আপনারা সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবেন।”

কমরেড প্রভাস ঘোষের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল ব্রিগেডের ঐতিহাসিক সমাবেশের। দলের সঙ্গীত স্কোয়াডের কণ্ঠে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের হৃদয়স্পর্শী মূর্চ্ছনায় তখন ভরে উঠছে আকাশ বাতাস। মুক্তিসংগ্রামের প্রেরণা বুকে নিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছেন সংগ্রামী জনতা। এগোতে হবে আরও। এই পথেই। হ্যাঁ, কমরেড শিবদাস ঘোষের দেখানো পথেই।