সিএএ চালু কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৩ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করার নীতির পক্ষে হিন্দু মহাসভা, আরএসএস, মুসলিম লিগ এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের স্লোগান অত্যন্ত তৎপরতার সাথে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের সমর্থন ও মদত পেয়েছিল। এর ফলে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশেরই বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছিল এবং সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ উদ্বাস্তু সংকট। এই সমস্যার প্রেক্ষিতেই ভারতীয় জনগণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেছিলেন, ভারতে আসা সমস্ত উদ্বাস্তুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এটা ছিল জাতীয় অঙ্গীকার, যা কোনও পূর্বশর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই কার্যকর হওয়ার কথা। পরবর্তী সময়ে আসা নতুন উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধান, নাগরিকত্ব আইন-১৯৫৫ এবং তার সাথে আন্তর্জাতিক আইন ও প্রচলিত রীতি-নিয়ম অনুসরণ করে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব।

বিজেপি সরকার এই পদ্ধতি গ্রহণ করার পরিবর্তে নতুন করে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন এনেছে। এই আইন আনার আগে তারা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার কোনও চেষ্টাই করেনি, বরং সংসদের দুই কক্ষেই একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা পাশ করিয়ে নিয়েছে। স্পষ্টতই এটা চরম অন্যায়। আরএসএস-বিজেপি জোট সাম্প্রদায়িক, প্রাদেশিকতাবাদী সঙ্কীর্ণ মনোভাব ফেনিয়ে তুলে জনগণের ঐক্য ভাঙার অশুভ মতলব থেকেই এই কাজ করেছে। জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে মানুষ যাতে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে তার জন্য জনগণের দৃষ্টিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার হীন চেষ্টায় এই কাজ করছে বিজেপি সরকার।

আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই অগণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি। কোনও মতেই ভুলে গেলে চলবে না, যে বদ মতলবে বিজেপি সরকার এনআরসি চালু করার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে এই সিএএ চালুর পদক্ষেপ তারই সঙ্গে যুক্ত। এটা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে নিজেদের হীন মতলব চরিতার্থ করতেই নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনকে বিজেপি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। এই হীন পদক্ষেপকে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা দরকার। এর বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

একই সাথে আমরা জোরের সাথে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক আইন, নীতি এবং রীতি অনুযায়ী যে কোনও দেশ থেকে অন্য যে কোনও দেশে গিয়ে একজন মানুষ নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।

এক্ষেত্রে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও রীতি-নীতি। ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত, সম্প্রদায়গত পরিচয় এ বিষয়ে কোনও ভাবে বিচার্য হতে পারে না। আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি, ভারত সরকারকেও নাগরিকত্বের আবেদন বিবেচনা করার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে এই নীতিতে স্থির থাকতে হবে।