সংরক্ষণ কি মহিলাদের ক্ষমতায়ন ঘটাবে?

সংসদে ১৯ সেপ্টেম্বর পাশ হয়ে গেল মহিলা সংরক্ষণ বিল– ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’-এর প্রবক্তাদের নামাঙ্কিত ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম ২০২৩’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, স্বয়ং ঈশ্বর নাকি তাঁকে বেছে নিয়েছেন এই মহান কাজের জন্য। যদিও ঈশ্বরের সেই বার্তা তাঁর কাছে কে বা কারা পৌঁছে দিয়েছিল, সে কথা জানাননি তিনি। সংসদ জুড়ে সেদিন বিজেপি সাংসদদের তুমুল উচ্ছাস-উৎসাহ, দলের মহিলা সাংসদদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বন্যায় প্রধানমন্ত্রীর ভেসে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল দেশের মহিলাদের যাবতীয় সমস্যা এবার বোধহয় দূর হতে চলেছে। পরে জানা গেল, সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হলেও এই আইন এখনই কার্যকর হবে না। প্রথমে জনগণনা হবে (কবে হবে এখনও জানা নেই), তার ভিত্তিতে হবে আসন পুনর্বিন্যাস। জটিল সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কত সময় লাগবে কেউ জানে না। অর্থাৎ মহিলা সংরক্ষণ আইন পাশ হওয়া মানেই তা কার্যকরী হওয়া নয়।

লোকসভা বা বিধানসভার কোন কোন কেন্দ্র মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হবে তা ঠিক করার ক্ষেত্রে জনগণনার কিন্তু এমনিতে কোনও ভূমিকা নেই। এটি লটারির মাধ্যমেই করতে হয়। অর্থাৎ, চাইলে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেই মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ শুরু করতে পারতেন, কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু তা না করে বিষয়টিকে বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে দিল বিজেপি সরকার।

তা হলে এই বিল পাশ করানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল যে উদগ্র ব্যস্ততা দেখালেন, তার উদ্দেশ্য কী? কেন এর জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে হল বিজেপি সরকারকে? সেই অধিবেশনে কোন কোন বিল আসতে চলেছে, তা নিয়ে এত গোপনীয়তা ও রহস্যই বা তৈরি করা হল কেন? অনেকে বলছেন, আসলে আগামী লোকসভা ভোটে দেশের মহিলাদের সমর্থন পেতেই নরেন্দ্র মোদি এই বিল পাশ করাতে এমন উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তো ভোটের আরও কাছাকাছি গিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও এই বিল নিয়ে আসা যেত! তলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এই দ্রুততার প্রয়োজন ছিল অন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে। আসলে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার সংক্রান্ত দুর্নীতির পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানি সাহেবের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একেবারে সামনে চলে এসেছিল। দেশের মধ্যে জনগণও তা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন তুলছিল। তাই এ সমস্ত কিছু থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই কি এই মহিলা সংরক্ষণ বিল ও তা নিয়ে মোদিজি ও তাঁর দলবলের এ হেন ঢক্কানিনাদ? এতে ভোটেও সুবিধা হল, পাশাপাশি মহিলা-উন্নয়নে মোদিজি কতখানি উদগ্রীব, তারও একটা বিজ্ঞাপন তৈরি করা গেল!

আরও একটি বিষয় ভেবে দেখার মতো। এইসব গুরুতর প্রয়োজন না থাকলে বিজেপির মতো দলের তো নারী সংরক্ষণ নিয়ে এতটা উদ্যোগী হওয়ার কথাই নয়! কারণ, যে মনু নারীর কোনও অধিকারের কথাই স্বীকার করেনি, সেই মনুবাদী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী হিসাবে বিজেপি দলের মতে মহিলাদের স্থান ঘরের ভিতরে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাঁদের গুরু, আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত স্বয়ং সেই ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশে এক সভায় প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে চুক্তির যে বন্ধন থাকে সেখানে স্বামী স্ত্রীকে বলেন, তুমি আমার ঘর-সংসারের যত্ন নাও, বিনিময়ে আমি তোমার সমস্ত প্রয়োজন মেটাব। তোমায় নিরাপদে রাখব। … স্ত্রী যতদিন সেই চুক্তি মানে, স্বামী তার সঙ্গে থাকে। স্ত্রী চুক্তিভঙ্গ করলে স্বামী তাকে ত্যাগ করতে পারে” ইত্যাদি, ইত্যাদি। নিতান্ত দায়ে না পড়লে এ হেন বিজেপি যে মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে সরব হতে পারে না– এ কথা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।

মহিলা সংরক্ষণ বিলের ইতিহাস বহু দিনের। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রে দেবেগৌড়ার প্রধানমন্ত্রীত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে প্রথম সংসদে পেশ হয়েছিল এই বিল। সে বার বিলটি পাশ করানো যায়নি। পরে ২০১০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে বিলটি লোকসভা অবধি নিয়ে যাওয়ার পর সেটিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এবার আবার নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার বিলটিকে সংসদে আনল। এবারেও এই বিলে অধিকাংশ দলই অত্যন্ত উৎসাহ সহকারে সমর্থন জানিয়েছে। বিরোধিতা যে সব দল করেছে, সংসদে মহিলাদের আসন সংরক্ষণে নয়, তাদের আপত্তির বিষয় ভিন্ন। অর্থাৎ সংসদে উপস্থিত সব ক’টি দলই প্রমাণ করতে অতি মাত্রায় ব্যগ্র যে, নারী-কল্যাণে, দেশের মহিলাদের উন্নয়নে তারা অত্যন্ত আগ্রহী এবং মহিলা আসন সংরক্ষণকে সেই উন্নয়নের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বলেই তারা মনে করে।

কিন্তু লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে মোট আসনের ৩৩ শতাংশ মহিলাদের দখলে যাওয়ার সঙ্গে গোটা দেশের নারীসমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের সম্পর্ক কী? এ দেশ তো বহু আগেই মহিলা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি পেয়েছে। দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতিও শুধু যে মহিলা তাই নয়, তিনি দেশের আদিবাসী সমাজের একজনও বটে। এতে দেশের আদিবাসী সমাজ ও সাধারণ মহিলাদের জীবনে সামান্যতম পরিবর্তন ঘটেছে কি? বরং আদিবাসী সমাজের সর্বনাশ হতে চলেছে যে নয়া বন সংরক্ষণ আইনে, তা তাঁর স্বাক্ষরেই আইনে পরিণত হয়েছে। অনেক রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মহিলারা। সেখানে মহিলাদের বিশেষ কোনও উন্নয়ন হয়েছে নাকি? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে ধর্ষণ, পাচার, বধূ নির্যাতনের ঘটনা কি কোনও অংশে কমেছে? ইতিমধ্যেই দেশের পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু হয়েছে। কিন্তু তা দেশের পৌর ও গ্রামীণ এলাকাগুলির মহিলাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?

কেমন আছে এ দেশের নারীসমাজ? নির্মম পুঁজিবাদী শোষণের কবলে পড়ে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এমনিতেই আজ অসহনীয় দুর্দশায় জর্জরিত। এরই সঙ্গে পুরুষতন্ত্রের দাপটে বিরাট অংশের নারী নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ভয়ঙ্কর শিকার। তাদের অধিকাংশই ডুবে রয়েছে অশিক্ষা, অপুষ্টি, কুসংস্কারগ্রস্ত অন্ধ মানসিকতার অন্ধকারে। ঘরের বাইরে বেরিয়ে কাজে যুক্ত আছে মাত্র ২০.৬ শতাংশ নারী। শ্রমের বাজারে নারীদের অংশগ্রহণের এই হারও ক্রমাগত কমছে। সারা দেশে ‘আশা’, ‘অঙ্গনওয়াড়ি’ ইত্যাদি প্রকল্পে যে মহিলারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ন্যায্য বেতন দেওয়া দূরের কথা, তাঁদের শ্রমিকের স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত দিতে রাজি নয়। সরকারি হিসাবেই ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ রক্তাল্পতার শিকার। বাস্তবে এই হার যে আরও অনেক বেশি, চোখ মেলে তাকালেই সে সত্য ধরা পড়ে। দেশে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, ধর্ষণ করে খুন, পণ দিতে না পারায় বধূহত্যা, গার্হস্থ্য হিংসা, নারীপাচার, নারীদেহ নিয়ে ব্যবসা ইত্যাদি অস্বাভাবিক দ্রুততায় বেড়ে চলেছে। জন্মের আগেই খুন হচ্ছে অসংখ্য কন্যাভ্রূণ।

সংসদ ও বিধানসভাগুলিতে মহিলা আসন সংরক্ষণের জন্য যারা আজ অতি সোচ্চার, সরকারি ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে পাক খাওয়া সেই সব বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলিই তো স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে কেন্দ্রে ও রাজ্যে রাজ্যে বহু বার সরকারি ক্ষমতায় আসীন হয়েছে! প্রশ্ন হল, সরকারি ক্ষমতায় বসে দেশের নারীসমাজের এই লজ্জাজনক দুরবস্থা দূর করতে এরা কী ভূমিকা পালন করেছে? বাস্তবে তারা কিছুই করেনি। আজ যারা মহিলা সংরক্ষণের স্লোগান দিয়ে নারী-উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন সাজতে চাইছে, তারাই ক্ষমতায় বসে নারীর পণ্যায়নে উৎসাহ দিয়ে চলে। ঢালাও মদের লাইসেন্স দিয়ে, মাদকের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে তারাই নারী নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার কাজে দুষ্কৃতীদের মদত দিয়ে চলে। যে নরেন্দ্র মোদি ‘ঈশ্বরের নির্দেশে’ নারী সংরক্ষণের ‘ঐতিহাসিক ও মহান’ কাজটি সারলেন, তাঁর দল বিজেপির প্রবল প্রভাবশালী সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মাসের পর মাস অবস্থান আন্দোলন চালিয়েছেন মহিলা কুস্তিগিররা। অভিযুক্ত সাংসদকে গ্রেফতারের বদলে বিজেপি সরকারের পুলিশ আন্দোলনকারী মহিলাদেরই টেনে-হিঁচড়ে গ্রেফতার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নীরব ছিলেন। তাঁর সেই নীরবতা নির্যাতিতা মহিলাদের কোন সুরাহার উদ্দেশ্যে? মণিপুরে তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন উঠলেও প্রধানমন্ত্রী রা কাড়েননি। সামান্য নিন্দাও করেননি এই অমানবিক বর্বরতার। বহুবারই বিজেপির প্রভাবশালী সাংসদ, বিধায়ক, নেতাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের উপর পাশবিক নির্যাতন, হত্যা এমনকি নির্যাতিতার পরিজনদের খুন করার ঘটনায় গোটা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অটল নীরবতা একবারের জন্যও ভঙ্গ হতে দেখা যায়নি। গুজরাটে বিজেপি সরকারের শাসনেই ধর্ষিত হয়েছিলেন বিলকিস বানো। চোখের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীদের হাতে আত্মীয়স্বজন সহ নিজের তিন বছরের শিশুকন্যার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হতে হয়েছিল তাঁকে। প্রধানমন্ত্রীর দরদি মন কেঁদে উঠেছিল– না, অত্যাচারিতা, দুঃসহ যন্ত্রণা বুকের ভিতরে বয়ে বেড়ানো বিলকিসের জন্য নয়, তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষক, হত্যাকারীদের জেল-যন্ত্রণায়। তাই ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’-এর সূচনালগ্নে ২০২২-এর ১৫ আগস্ট তাঁদের কারামুক্তি দিয়েছিল বিজেপি সরকার। এটাই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপির মহিলাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হৃদয়ের আসল চেহারা নয় কি? এটাই আসলে নারী সমাজের উন্নয়নে রাজ্যে রাজ্যে ও কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের ভূমিকা! নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণে তাঁদের এ হেন উৎসাহের পিছনে জঘন্য মতলববাজির স্বরূপ বুঝতে, এর পরেও কোনও অসুবিধা থাকতে পারে কি?

দেখা যাচ্ছে, নিত্য যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, দেশের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে সংসদ আলো করে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশই কোটিপতি। সংসদে বসে কেমন ভাবে তাঁরা জনগণের স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন, তা নিত্যনতুন জনবিরোধী কালা আইন প্রণয়নে, আদানি-আম্বানি সহ একচেটিয়া পুঁজির হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি সহ দেশের সব সম্পদ তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা দেখে এবং জনজীবনের ক্রমবর্ধমান দুর্দশা দেখেই মালুম হয়। মহিলা সংরক্ষণ চালু হলেও একই ঘটনা ঘটবে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি, অশিক্ষা, চিকিৎসাহীনতা ও পুরুষতন্তে্রর দাপটে নির্যাতিত অসহায় সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীসমাজের প্রতিনিধিত্ব করবেন পুরুষ সাংসদদের মতোই ধনী পরিবারগুলি থেকে আসা সুযোগ-সুবিধাভোগী মুষ্টিমেয় কয়েকজন মহিলা, যাঁদের পক্ষে বৃহত্তর নারীসমাজের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা দূরের কথা, তা ঠিকমতো বুঝতে পারাও কার্যত অসম্ভব। তাঁরা সংসদে বসে কার্যত শাসক পুঁজিপতি শ্রেণিস্বার্থেরই প্রতিনিধিত্ব করে যাবেন।

আজ যাঁরা মহিলা আসন সংরক্ষণ নিয়ে মাতামাতি করছেন, তাঁদের তো এ কথা অজানা থাকার কথা নয় যে, সংরক্ষণ সমতার চেতনার বিরোধী! প্রকৃত গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমান অধিকার। নারীদের সমান অধিকার অর্জনের সংগ্রামে সংরক্ষণ কার্যত একটি বিভ্রান্তিকর বাধা হিসাবেই কাজ করে। মহিলা সংরক্ষণের স্লোগানে যাঁরা সোচ্চার, নানা সময়ে দেশের কর্তৃত্বে থাকা সেইসব নেতা-মন্ত্রীদের তো লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল এ কথা ভেবে যে, স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর পার হয়ে গেলেও, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীসমাজের সম-অধিকার মেলা দূর অস্ত, তাঁদের উন্নয়নে আজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে!

কাজের বাজার সহ সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষের সমান সুযোগ এবং সমাজে পূর্ণ মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার অধিকারের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের কারণে বিভ্রান্ত হয়ে উল্লাসে মাতলে কার্যত সেই আন্দোলনেরই ক্ষতি হবে। বাস্তবে নির্যাতিত নিপীড়িত মহিলারা সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত হতে হতে আজ যখন নিজেদের দাবিতে দেশ জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে অসংখ্য বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন, তাঁদের সেই বিক্ষোভ প্রশমিত করার দাওয়াই হিসাবেই শাসক শ্রেণি আজ মহিলা সংরক্ষণের ধুয়া তুলছে। এতে বিভ্রান্ত হলে বঞ্চিত নির্যাতিত নারীসমাজের ক্ষতিই হবে সবচেয়ে বেশি। বাস্তবে একটি গণতান্ত্রিক দেশে নারী-পুরুষের সমানাধিকার উভয়েরই সম্মিলিত দাবি। এই সমানাধিকার তো একটি সভ্য সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য! কিন্তু গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাটি শোষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই দাবি অর্জিত হয়নি। ফলে সংরক্ষণের হাওয়ায় ভেসে যাওয়া নয়, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারীদের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত আন্দোলনগুলিকে সঠিক নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করে ন্যায্য দাবি আদায়ে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি শোষণমূলক এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদের সংগ্রামে সামিল হতে হবে। এই কাজে মহিলাদের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষদেরও।