শোষণমুক্তির সংগ্রামে সামিল হতে শেখায় মহান মে দিবস

১ মে মহান মে দিবস উপলক্ষে কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় অফিসে রক্তপতাকা উত্তোলন করেন দলের পলিটবুরো সদস্য কমরেড স্বপন ঘোষ। বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা মাক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সে তুঙ ও শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মানব বেরা সহ অন্য নেতা-কর্মীরা।

কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল বছরে ২ কোটি চাকরি দেবে, রাজ্য সরকার ১০ লক্ষ। সেই চাকরির পরিবর্তে তেলেভাজা-ঘুগনি-পকোড়া ভাজার পরামর্শ অনেক দিন আগেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী। নতুন সরকারি-বেসরকারি চাকরি দেওয়া দূরের কথা, ২০২০ সালে কোভিড লকডাউনের সময় এই দেশে কাজ হারিয়েছেন ১২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ, যাদের অনেকেই সেই কাজ আর ফিরে পাননি। তারপরেও লে-অফ, লকআউট, ছাঁটাই চলছেই। যাদের কাজ আছে, তাদেরও তীব্র গরমে দৈনিক ১০-১২-১৪ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। ‘স্কিম ওয়ার্কার’দের সরকারি স্বীকৃতি নেই। তাই উপযুক্ত বেতন, পেনশন, ন্যায্য ছুটি পাওয়ার অধিকারও নেই। বাইক-ট্যাক্সি চালক কিংবা ডেলিভারি বয়দের দুর্দশার অন্ত নেই। সমস্ত ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীর বদলে নিয়োগ হচ্ছে অস্থায়ী কর্মী। গিগ কর্মীদের উপর জুলুম মাত্রা ছাড়িয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে নতুন তাৎপর্য নিয়ে আবার উপস্থিত হয়েছে ঐতিহাসিক মে দিবস।

উনিশ শতকের কথা। ইউরোপ, আমেরিকা জুড়ে স্থাপিত হচ্ছে অজস্র কল-কারখানা। শ্রমিকের ঘাম-রক্ত নিংড়ানো খাটুনির বিনিময়ে মালিকের লাভের পাহাড় উঁচু হচ্ছে। ১২-১৪ ঘণ্টা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মিলত সামান্য মজুরি। দৈনিক শ্রমের সময় কমানোর দাবিতে বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠল আন্দোলন। তারই ধারাপথে ৮ ঘন্টা শ্রমদিবসের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিক শ্রেণি এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম করেছিল। সেদিন চার লক্ষেরও বেশি শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে স্ত্রী-পুরুষ, যুবক-বয়স্ক, কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ, স্থানীয়-প্রবাসী, সংগঠিত-অসংগঠিত সকল অংশের শ্রমিকরা অংশ নেন মিছিলে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষার প্রাচীর ভেঙে সেই আন্দোলনের উত্তাপ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ৩ মে ম্যাককর্মিক রিপার কারখানার ধর্মঘটী শ্রমিকদের সমাবেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করে। এরই প্রতিবাদে পরদিন ৪ মে হে মার্কেটে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন অগাস্ট স্পাইস, অ্যালবার্ট পার্সনস, স্যামুয়েল ফিল্ডেন প্রমুখ শ্রমিক নেতা। সেই শান্তিপূর্ণ শ্রমিক সমাবেশে রাতের অন্ধকারে মালিকদের পোষা পুলিশ বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যু হয় আরও ৪ শ্রমিকের। আন্দোলন স্তব্ধ করতে এর পর শুরু হয় বিচারের প্রহসন। ফাঁসি দেওয়া হয় শ্রমিক নেতা অগাস্ট স্পাইস, অ্যালবার্ট পার্সন, এডলফ ফিশার এবং জর্জ এঙ্গেলকে। পাঁচ শহিদের মৃতদেহ নিয়ে শেষযাত্রার মিছিলে সামিল হন ৬ লক্ষের বেশি শ্রমিক। তাঁরা দাবি তোলেন– শ্রমিক নেতা অস্কার নিব, স্যামুয়েল ফিল্ডেন, মাইকেল শোয়াব-এর মুক্তি চাই। শ্রমিক আন্দোলনের চাপে সরকার তাঁদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৮৯৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি বছর ১ মে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসাবে পালিত হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮৯০ সালের ৪ মে (তখনকার সিদ্ধান্ত অনুসারে মে মাসের প্রথম রবিবার) লন্ডনের হাইড পার্কে শ্রমিকদের এক বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ফ্রেডরিক এঙ্গেলস। মে দিবসের সংগ্রামের অমর শহিদ অগাস্ট স্পাইস অসীম সাহসের সঙ্গে আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘তোমরা যদি ভেবে থাক যে আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শ্রমিক আন্দোলন ধ্বংস করবে– তবে ফাঁসি দাও। কিন্তু এই স্ফুলিঙ্গ থেকে যে আগুন জ্বলবে, তা তোমরা নেভাতে পারবে না কিছুতেই।” মে দিবস উদযাপন তাই আনুষ্ঠানিকতা নয়। দেশে দেশে শ্রমিকের শোষণ মুক্তির সংগ্রামকে তীব্র করাই এর লক্ষ্য।

একমেরু বিশ্বে পুঁজির শোষণ নির্মম

মে দিবসের মহান সংগ্রামের পর ১২৭ বছর পার হয়ে গেছে। গত শতকে বিশ্বের বুকে শ্রমিক শ্রেণির যে রাষ্ট্রগুলি সৃষ্টি হয়েছিল তাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবির। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকল মানুষের কাজের অধিকার ছিল, উপযুক্ত মজুরি ছিল, বেকারত্ব ছিল না, ছাঁটাই ছিল না। সকল কর্মীর রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃত ছিল। কর্মীদের ছুটি, স্বাস্থ্যের অধিকার, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, তাদের সন্তানদের জন্য ক্রেশ, অসুস্থদের জন্য স্যানেটোরিয়ামের সুযোগ, অবসর জীবনে উপযুক্ত পেনশন, কাজ করতে গিয়ে অঙ্গহানি ঘটলে সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল। ফলে সমগ্র পুঁজিবাদী দুনিয়ায় খেটে-খাওয়া মানুষের মধ্যে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে গভীর আগ্রহ গড়ে ওঠে। সমাজতন্ত্রের প্রতি এই আকর্ষণ থেকে চোখ ঘোরাতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি ‘জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রে’র মুখোশ পরে। শ্রমিকদের কিছু অধিকারের স্বীকৃতি তারা দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সমাজতন্ত্রের সাময়িক বিপর্যয়ের পর আজ দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের সেই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে একমেরু বিশ্বে শ্রমিক শোষণ আজ তীব্র, নির্মম, ভয়ঙ্কর়। সেই শোষণের ফলে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমছে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তার ফলে জনসংখ্যা যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার বিপরীতে শিল্প ভুগছে অতিরিক্ত-উৎপাদনের মারণ ব্যাধিতে। অর্থনৈতিক মন্দা গোটা বিশ্ব-পুঁজিবাদের সাধারণ বৈশিষ্টে্য পরিণত হয়েছে।

কোভিড অতিমারীর সময় ভারতে পুঁজিপতিদের মুনাফা অটুট রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক লক্ষ কোটি টাকা তাদের অনুদান দিলেও শ্রমিকদের প্রায় কিছুই জোটেনি। ওই সময়ে প্রতি ঘণ্টায় আম্বানি ৯০ কোটি টাকা লাভ করলেও দেশের শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন। এর পরেও চলছে লক্ষ লক্ষ ছাঁটাই, কর্মী সঙ্কোচন। রেল, ব্যাঙ্ক, ডাক, বিমা, বিমান, পরিকাঠামো– সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারি মালিকদের কাছে বেচে দেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে আড়াই লক্ষ চটকল শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ কর্মী স্থায়ী। ৮৫ শতাংশ অস্থায়ী কর্মী অনেক কম বেতনে কাজ করেন। চটকলে মালিকরা এখন প্রস্তাব দিচ্ছে ৮ ঘণ্টার পর আরও ৪ ঘণ্টা ‘বাধ্যতামূলক’ ওভারটাইম করতে হবে। কিছু কর্মীর কাজের সময় ১২ ঘণ্টা করেও দেওয়া হয়েছে। চা-বাগানগুলিতেও চলছে নির্মম শোষণ। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে দেড় লক্ষ চা শ্রমিকের দৈনিক বেতন মাত্র ২৫০ টাকা, মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা। অথচ চা-বাগানের মালিকরা বিপুল সম্পত্তির অধিকারী ওই শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়েই।

সংগঠিত শিল্পের শ্রমিকেরা খাতায়-কলমে যেটুকু সুযোগ পান, অসংগঠিত ক্ষেত্রে সেটুকুও নেই। অথচ সরকারের বিন্দুমাত্র নজর নেই। এই রাজ্যে সিপিএম-ফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এইসব কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে যে নির্মাণ-কর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের জন্যও কোনও সরকারি সুরক্ষা নেই। পাথর ক্র্যাশারগুলোতে কিংবা অ্যাসবেস্টস কারখানায় ফুসফুসের দুরারোগ্য সিলিকোসিস, অ্যাসবেস্টোসিস ইত্যাদি রোগে যে শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের উপযুক্ত শারীরিক সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া বা বিমা করানো, ওই শিল্পগুলিতে সুরক্ষা-বিধি মেনে চলতে মালিকদের বাধ্য করা– কোনও কিছুতেই সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই।

এর পাশাপাশি রয়েছে স্কিম ওয়ার্কারদের বঞ্চনার কাহিনী। আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, মিড ডে মিল কর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি নেই। নেই ন্যায্য বেতন, ছুটির অধিকার, অবসরকালীন পেনশন সহ অন্যান্য সুযোগ। মিড ডে মিল কর্মীদের এমনকি বছরে ১২ মাস খাটিয়ে মাত্র ১০ মাসের বেতন দেওয়া হয়।

বর্তমানে বাইক ট্যাক্সি বা ক্যাব চালক, ডেলিভারি-কর্মীদের মতো বেশ কিছু নতুন ধরনের কর্মী সৃষ্টি হয়েছে। ডেলিভারি কর্মীদের নাম হয়েছে গিগ কর্মী। এঁদেরও সরকারি স্বীকৃতি নেই, নেই কোনও সুরক্ষাকবচও। দ্রুত যেতে গিয়ে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে আকছার। রঙিন ছাতা নিয়ে রোদে-বৃষ্টিতে বহুজাতিক মোবাইল পরিষেবা কোম্পানির কমিশনভিত্তিক কাজ করেন একদল যুবক-যুবতী। এয়ারটেল, ভোডাফোন, টাটা, জিও-র দেশি-বিদেশি মালিকেরা এই হতভাগ্যদের নিজেদের কর্মী বলেও মনে করে না। অথচ এঁরাই ঘাম ঝরিয়ে এদের মুনাফা সৃষ্টি করেন। বহুতল শপিং-মলে সারা দিন যাঁরা পরিশ্রম করেন, তাঁদের ন্যায্য মজুরি নেই, ছুটি নেই, সরকারি স্বীকৃতি নেই, বহু ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন করার অধিকার পর্যন্ত নেই। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা যে কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেদের নিংড়ে দেন, তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু?

একদিন ‘মে-দিবস’-এর আন্দোলনকারীরা আওয়াজ তুলেছিলেন দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি আমরা মালিকদের জন্য খাটব না। বহু সংগ্রাম এবং প্রাণের বিনিময়ে সেই দাবি অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু ভারতে বা পৃথিবীর প্রায় কোথাও সেই অধিকার আজ অক্ষত নেই। বেশি দূর যেতে হবে না, লোকাল ট্রেনে ‘কর্মখালি’র যেসব বিজ্ঞাপন চোখে পডে, সেখানে দিনে দশ-বারো ঘণ্টা কাজের কথা খোলাখুলি লেখা থাকে। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে কর্মীদের বারো ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। দোকানে বা অলঙ্কার শিল্পেও বহু দিন ধরেই কাজের সময় দশ থেকে বারো ঘণ্টা। অনেক দিন আগেই মহান লেনিন বলেছিলেন, ‘‘শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের বিনিময়ে যে পুঁজি সৃষ্টি করে সেই পুঁজিই তাদের পেষে, ক্ষুদ্র মালিকদের বরবাদ করে, আর বিশাল বেকার বাহিনী তৈরি করে।” সেই বেকার বাহিনীর দৌলতেই মালিক কম মজুরিতে শ্রমিককে খাটায়, দালাল মজুর সৃষ্টি করে, তাদের দিয়ে আন্দোলন ভাঙায়। সুতরাং, গোটা পৃথিবীর মতো ভারতের শ্রমিক শ্রেণিও আজ তীব্র নির্মম শোষণের শিকার।

নতুন শ্রম কোড শোষণের তীব্রতা বাড়াবে

২০১৯ এবং ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ২৯টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইন বাতিল করে ৪টি শ্রম কোড নিয়ে এসেছে। ফলে এক বিরাট সংখ্যক শ্রমিক আর কর্মচারী হিসাবে গণ্য হবেন না এবং ন্যায্য মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। শ্রম কোড সংশোধনের ফলে শ্রমিকদের বঞ্চনার তালিকা সুদীর্ঘ। এই সংশোধনের লক্ষ্যই হল শ্রমিকদের আরও শোষণ করে মালিকদের মুনাফার পাহাড় সুউচ্চ করা।

শোষণের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছে শ্রমিক আন্দোলন

কিন্তু শ্রমিকদের উপর শোষণ-নির্যাতনই শেষ কথা নয়। এর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের লড়াইও অবশ্যম্ভাবী। একদিকে যেমন মালিকদের পোষা সরকারের দ্বারা শ্রমিকের অধিকার হরণ, ছাঁটাই, লকআউট, দমন-পীড়ন, আইন পরিবর্তন চলছে, তেমনই অপর দিকে শ্রমজীবী মানুষ ক্রমাগত আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। একের পর এক ঐতিহাসিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকার ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন ঘোষণা করেছিল ‘আমরাই ৯৯ শতাংশ’। আজও ইউরোপ জুড়ে চলছে গণবিক্ষোভ। এশিয়ার নানা দেশেও আছড়ে পড়ছে শ্রমিক বিক্ষোভের ঢেউ। ফ্রান্সে পেনশন বিলের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে আর এক বিশাল গণআন্দোলন। পাঁচ লক্ষ মানুষ ওই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন।

ভারতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন ডাক দিয়ে গেছে কৃষিক্ষেত্রে একচেটিয়া পুঁজিকে রোখার। ৭১৫টি প্রাণের বিনিময়ে এই আন্দোলন কেবল সরকারি চক্রান্তকে প্রতিহতই করেনি, ভারত তথা বিশ্বের সামনে এক প্রেরণা হিসাবে কাজ করছে। এই আন্দোলনগুলিই গভীর অন্ধকারের মধ্যে আলোকবর্তিকা। মে দিবসের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সঠিক নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হয়ে যদি এই ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা যায় তা হলেই শ্রমিক-কর্মচারীদের উপর নেমে আসা সর্বব্যাপক আক্রমণকে প্রতিহত করা যাবে।