রেশনে অখাদ্য চাল–গম সরকারি অপদার্থতার নজির

70 Year 29 Issue 9 March 2018

রেশনের চাল— সরকারি প্রচারের ঢাকের জোরে মনে হয় দারুণ ব্যাপার আর মন্ত্রী আমলাদের ভাবে মনে হয় রেশনের চালের আবার কাঁড়া–আঁকড়া কী? বাস্তবই যেমন— রেশনের চাল মানেই প্রচুর পরিমাণে ধুলো, তার সাথে মাটির ঢেলা, কাঁকর৷ মনে হবে গুদাম ঝাঁট দেওয়া বস্তা৷ গম কালচে, মাটির ঢেলা, পাথরের টুকরোয় ভরা— মেশিন খারাপ হবে বলে আটাকল ফেরত পাঠায়, বেছে আনতে বলে৷ অথচ রেশনের ভাল চাল–গম খোলা বাজারে বিক্রি হয়৷

কিছুদিন ধরেই জেলায় জেলায় এ নিয়ে অভিযোগ উঠছে৷ সরকার এতদিন তাতে কর্ণপাত করেনি৷ কিন্তু সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ মানুষের ক্ষোভ ভোটের ফলে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে৷ তাই কিছু দিন নড়ে বসেছে প্রশাসন৷ সমস্ত ফুড ইনস্পেক্টরদের সাথে দু’দফায় বৈঠক করেছেন খাদ্যমন্ত্রী৷ ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলারদের নিয়ে মিটিং করে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছেন৷ শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রের সরকারও নাকি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে৷ পাছে বহু বিজ্ঞাপিত ‘খাদ্য সাথী’ প্রকল্পের নামে অখাদ্য চাল–গম সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দল পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফয়দা তোলার চেষ্টা করে, তা আটকাতে খাদ্যমন্ত্রী আগাম তোপ দেগেছেন ওই প্রতিনিধিদলকে৷

রাজ্যের অনুমতি ছাড়া গুদামগুলিতে যেন তাদের ঢুকতে দেওয়া না হয়৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের এক হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যকে দেয়নি৷ আবার বিজেপি নেতারা প্রচার চালাচ্ছেন কেন্দ্রের টাকা দিয়ে তৃণমূল সরকার তাদের ‘খাদ্য সাথী’ প্রকল্প চালাচ্ছে৷

এই চাপান–উতোর থেকে এটা পরিষ্কার, আপামর মানুষের খাদ্য জোগানের ‘সুরক্ষা’ বা ‘সাথী’ হওয়ার প্রকৃত সদিচ্ছার থেকেও ভোটের প্রচারে একে ব্যবহার  করাটাই দুই সরকারে ক্ষমতাসীন দলের মূল লক্ষ্য৷ না হলে রেশনব্যবস্থাটা আজ একটা প্রহসনে দাঁড়াবে কেন? রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের অধীনে জনগণের টাকায় পোষা এক হাজার চারশো জন ইন্সপেক্টর আছে এবং তাদের মাথার উপরে মন্ত্রী–আমলা থাকতে রেশন ব্যবস্থার  রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই দুর্নীতি চলে কী করে? আসলে ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, ইন্সপেক্টরদের সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে এক চক্র কাজ করে, যাদের প্রশ্রয়দাতা হিসাবে থাকে পুলিশ প্রশাসন ও শাসকদলের ‘দাদা’রা৷ ফলে রেশনে বরাদ্দ চাল–গম মাঝপথে চলে যায় খোলা বাজারে৷ তার বদলে রেশন শপে ঢুকে যায় নিম্নমানের চাল–গম৷

এমনিতেই এপিএল, বিপিএল বিভাজন, নানা ক্যাটিগরির ডিজিটাল কার্ড ইত্যাদির ফলে বহু মানুষই রেশন ব্যবস্থার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার রেশনে চিনি, কেরোসিনের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে৷ তার উপর নিম্নমানের চাল–গম সরবরাহ আসলে মানুষকে খোলা বাজারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে৷ গণবণ্টন ব্যবস্থাগুলি তুলে দিয়ে সরকারও আসলে কর্পোরেটবান্ধব হতে চাইছে৷

আজ জেলায় জেলায় রেশন গ্রাহকরা বিক্ষিপ্তভাবে নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের আগামীদিনের এই বিপদ সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে৷ আপামর মানুষের প্রকৃত খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে রেশন দোকান ভিত্তিক ‘রেশন গ্রাহকদের খাদ্য সুরক্ষা কমিটি’ গঠন করে দীর্ঘস্থায়ী সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে৷