মোরাদাবাদে পিতল মজুরদের আন্দোলনের জয়

মোরাদাবাদের পিতল শিল্প এ দেশ তথা সারা বিশ্বেই বিখ্যাত৷ কোভিড–১৯ এর কারণে ২২ মার্চ থেকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য জুডে ছিল সম্পূর্ণ লকডাউন৷ লকডাউনের কারণে মার্চ এবং এপ্রিল মাসের মাইনে অন্যান্য শিল্প শ্রমিকদের সঙ্গে পিতল শিল্পের শ্রমিকদেরও দেয়নি মালিকরা৷ এই সময়কালে পুরো বেতনের দাবিতে পিতল মজদুর ইউনিয়ন জেলা প্রশাসন, শ্রম দপ্তর এবং উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়৷ এর ফলে মে মাসে কর্তৃপক্ষ মার্চ এবং এপ্রিল মাসের মাইনে দিয়ে দেয়৷ ৮ মে–র পর কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানাগুলিতে কাজ শুরু হয়৷ করোনা মহামারিকে অজুহাত করে এই সময়ে পিতল শিল্পের মালিকরা একটা বড় সংখ্যক শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করে৷ এটা শ্রমিক ছাঁটাই কর্মসূচির প্রথম পদক্ষেপ৷ এর বিরুদ্ধে আবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, শ্রম দপ্তর এবং রাজ্য সরকারের কাছে স্মারকলিপির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ তা সত্ত্বেও মালিকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে৷ যাদের কাজে নেওয়া হয়নি তাদের মে মাসের বেতনও দেওয়া হয়নি৷ এ নিয়ে বারবার উপরমহলে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় ২৮ জুন পিতল মজুররা এক দিনের সত্যাগ্রহ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন৷ পুলিশ প্রশাসন এই সত্যাগ্রহ বন্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন৷ ২৮ জুন সকাল থেকে বিশাল সংখ্যক পিতল মজুরের উপস্থিতিতে মোরাদাবাদের সুভাষ পার্কে সত্যাগ্রহ শুরু হয়৷ দুপুর ১২টা নাগাদ বিশাল সংখ্যক পুলিশ এসে জবরদস্তি করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন তুলে নিতে বাধ্য করে৷ এরপর কর্মচ্যুত শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা জেলা প্রশাসনের সামনে ৭ জুলাই থেকে অনশন ধর্মঘট আন্দোলনে সামিল হবেন৷ সেই মতো প্রশাসনকে নোটিশ দেওয়া হয়৷ এতেও প্রশাসন নীরব থাকলে এআইইউটিইউসি অনুমোদিত পিতল মজদুর ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে মোরাদাবাদ জেলা কালেক্টরেটের সামনে নির্দিষ্ট দিনে অনশন ধর্মঘট শুরু হয়৷ মোরাদাবাদ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ৩ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসন ভবন চত্বরে সমস্ত প্রকার ধরনা বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ এই পরিস্থিতিতেও পিতল মজুররা অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যান৷ ধর্মঘটের প্রথম দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবস্থানস্থলে মধ্যস্থতা করার জন্য প্রতিনিধি পাঠানো হয়৷ দীর্ঘ আলোচনার পর জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহৃত হয়৷ আশ্বাস মতো পর দিন ৮ জুলাই প্রথমে জেলা শিল্প কার্যালয়ের মুখ্যসচিব এবং পরে উপ–শ্রমআধিকারিকের সামনে কারখানা মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, সব শ্রমিককে তাদের কাজ ফিরিয়ে নেওয়া হবে৷ আন্দোলনের এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পিতল মজদুরদের মধ্যে এই আশা এবং বিশ্বাসের সঞ্চার হয়েছে যে, সঠিক দিশায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের শেষ পর্যন্ত জয়ের দরজায় পৌঁছে দিতে পারে৷