মণিপুরের আগুন নেভাতে চান না বলেই কি প্রধানমন্ত্রী নীরব

আমেদাবাদ, ৩০ জুন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী কি মণিপুর রাজ্যটার কথা জানেন? প্রধানমন্ত্রী এমনকি দিল্লিতে বসেও মণিপুরের একাধিক প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করার জন্য পাঁচটা মিনিটও সময় দেননি। তাঁর ‘মন কি বাত’-এ ‘মণিপুর কি বাত’ একেবারে শূন্য। না হলে ৩ মে থেকে সে রাজ্যের মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের অবিরাম দাঙ্গা, রক্তপাত, মৃত্যু দেখে তিনি এত নির্বিকার থাকতে পারেন কী করে?

একটা ছোট্ট রাজ্যে দু’মাসের বেশি সময় ধরে চলা দাঙ্গায় কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছেন তার সঠিক হিসাব কেউ রেখেছে কিনা সন্দেহ। সরকারি হিসাবে তা প্রায় দেড়শোর ঘরে। ৬০ হাজারের বেশি নিরাশ্রয়। দুই সম্প্রদায়ের ঘৃণা এবং বিদ্বেষ কতটা তীব্র হতে পারে তার একটা নজির বোধহয় সাত বছরের বালক তনসিং হ্যাংসিং ও তার মা এবং এক প্রতিবেশী মহিলাকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই পুড়িয়ে মারার ঘটনা। তনসিংয়ের বাবা কুকি, মা মেইতেই। অথচ দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের বলি হয়েছে সে। বিদ্বেষের বিষে অন্ধ জনতা আহত এক সাত বছরের বালককেও পুড়িয়ে মারতে ইতস্তত করেনি। মণিপুরের মতো শান্তিপ্রিয় রাজ্যে এমন পরিবেশ তৈরি হল কী করে?

ইতিমধ্যে আর এক কু-নাট্য দেখেছে দেশ– মণিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং হঠাৎ পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ৩০ জুন রাজভবনে যেতে উদ্যত হয়েছিলেন। দেখা গেল সরকার সমর্থক মহিলা বাহিনী তাঁর পথ আটকাল, বিজেপির এক এমএলএ পদত্যাগপত্র প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলে তাঁকে পদত্যাগ থেকে বিরত করলেন। কিন্তু এই ‘হঠাৎ’ সিদ্ধান্তের কথা মহিলারা আগেই জানলেন কী করে? না জানলে পদত্যাগ না করার আবেদন জানানো ব্যানার তৈরি করে তাঁরা খুব সকালেই পৌঁছে যেতে পারলেন কী করে? ব্যাপারটা যে একেবারেই সাজানো, বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।

স্বার্থ আছে বৃহৎ পুঁজির

কিন্তু যে প্রধানমন্ত্রী রোজ একাধিক টুইট করেন, তিনি মণিপুরের ব্যাপারে মুখে তালা লাগিয়েছেন কেন? কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের নাটক করতে হচ্ছে? মণিপুরের ঘটনাবলি একটু খুঁটিয়ে দেখলেই কারণটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আজ মণিপুরের কুকি কিংবা মেইতেই সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই জাতিদাঙ্গার জন্য বিজেপি সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। একদিকে বিজেপির ভোট রাজনীতির স্বার্থে জাতিসংঘর্ষে উস্কানি দেওয়া, অন্য দিকে বৃহৎ পুঁজিমালিকদের স্বার্থে মণিপুরের পাহাড়ের জঙ্গল, জমি থেকে আদিবাসীদের হঠানো, এই দুই ষড়যন্ত্র মিলে মণিপুরের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত যেভাবে মণিপুরের জন্য চোখের জল ফেলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের স্বার্থবাহী ‘লুক ইস্ট’ নীতির পক্ষে সওয়াল করে মণিপুর হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাস্তা খোলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাতে মণিপুরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজেপির মদতপুষ্ট ‘এথনিক ক্লিনসিং’-এর কারণ নিয়ে সন্দেহ আরও দানা বেঁধেছে।

ভোটব্যাঙ্কের জন্য সর্বনাশা রাজনীতি

মণিপুরের উপত্যকা অঞ্চলে বসবাসকারী মেইতেইরা জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ। মূলত পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা কুকি গোষ্ঠীভুক্ত জো, হমার, চিং ইত্যাদি জনজাতিরা ২৮ শতাংশ, বাদবাকি নাগা সহ অন্যান্যরা। বিজেপি দেখেছে মণিপুরের রাজ্য সরকারের গদি দখল করতে হলে তাদের মেইতেইদের ত্রাতা সাজতে হবে। তাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে সামনে রেখে বিজেপি সেই কাজটাই করতে চেয়েছে। এ জন্য তারা মেইতেইদের মধ্যে পাহাড় নিবাসী জনজাতি বিশেষত কুকিদের বিরুদ্ধে উগ্র প্রচার চালিয়েছে দীর্ঘদিন। অন্য দিকে কুকি সংগঠনগুলি বলেছে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি মানবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে ভোট কিনেছে। অথচ এখন কুকি গোষ্ঠীভুক্ত সকল জনজাতির গায়ে বিজেপি একতরফাভাবে বহিরাগত তকমা দেগে দিয়েছে। মণিপুরের ৬০ আসনের বিধানসভায় ৩৯টি আসন উপত্যকার ভাগে পড়ছে। পাহাড়ে মাত্র ১১টি, তার ১০টি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। ভারতভুক্তির পর থেকে যতজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা সকলেই উপত্যকাবাসী মেইতেই গোষ্ঠীর। পাহাড়ি জনজাতির সামান্য কিছু জন এসটি তকমার সুযোগে শিক্ষা এবং চাকরির নাগাল পেলেও বিরাট অংশের মানুষ পুরোপুরি বঞ্চিত। মেইতেইদের ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলেও এই গোষ্ঠীর সাধারণ মানুষের দারিদ্র, বেকারত্ব ভয়াবহ। বিজেপি মেইতেইদের বোঝাতে চেয়েছে এসটি তকমা পেয়ে গেলে মেইতেইরা চাকরি পাবে, দামি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ পাবে, তাদের জমি সমস্যারও সমাধান হবে। এই কারণে মণিপুর হাইকোর্টের মামলায় রাজ্য সরকার এমন ভূমিকা নেয় যে, মেইতেই জনগোষ্ঠীকে এসটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার রায় পেয়ে যায় তারা। যার সমালোচনা সুপ্রিম কোর্টও করেছে। মণিপুরের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে দারিদ্র এতটাই বেশি যে, এইটুকু আশা দেখিয়েই বিজেপি মেইতেইদের উন্মত্ত করে তুলতে পেরেছে। অন্যদিকে কুকিদের যেটুকু আছে তা হারানোর ভয় দেখিয়ে তাদেরও খেপিয়ে তুলতে সফল হয়েছে। বিজেপি চেয়েছে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে এমন পরিবেশ তৈরি করতে, যাতে তারা নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য একে অপরকে দায়ী করে। চেয়েছে মেইতেইদের মধ্যে এক ধরনের বিপন্নতার বোধ সৃষ্টি করে তাদের কুকিদের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে। এই জন্য ২০১৭-তে ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই তারা আওয়াজ তুলছে, কুকিরা সবাই অনুপ্রবেশকারী। সমস্ত কুকি গ্রামকেই তারা বেআইনি আখ্যা দিচ্ছে। ভারতীয় নাগরিক কুকিদেরও বিজেপি মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী এবং বেআইনি ড্রাগ ব্যবসায়ী হিসাবে দেখাচ্ছে।

জনগণের কাঠগড়ায় বিজেপি সরকার

বিজেপি সরকারের এই ভূমিকা দেখে মণিপুরের নাগরিক সমাজের ‘অভিভাবক’ হিসাবে পরিচিত মহিলাদের সামাজিক সংগঠন ‘মেইরা পাইবিস’ মেইতেই যুবদের লড়াইয়ে পাঠানো এবং তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য রাজ্যের বিজেপি সরকারকেই দায়ী করেছে। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিকের কাছে আধাসামরিক বাহিনীর এক অফিসার বলেছেন, ৩ মে থেকে শুরু করে জুন মাসের মধ্যেই ২০০-র বেশি কুকি গ্রাম উচ্ছেদ করেছে সরকারের মদতপুষ্ট মেইতেইদের সশস্ত্র বাহিনী। এর জন্য মেইতেই জঙ্গিগোষ্ঠী ‘মেইতেই লিপুন’ এবং ‘আরামবাই তেঙ্গল’-এর হাতে অস্ত্র তুলে দিতে সরকার সাহায্য করেছে পরোক্ষে। তারা পুলিশ বা আধাসামারিক বাহিনীর অস্ত্রাগার লুঠ করলেও পুলিশ বাধা দেয়নি।

২৭ মার্চ হয়েছিল হাইকোর্টের রায়, তা নিয়ে কুকিদের বিক্ষোভও ছিল, দাঙ্গা তো লাগেনি! এরপর এক মাসের বেশি সময় পার করে ৩ মে এসে দাঙ্গা শুরু হল কেন? তথ্য বলছে, চূড়াচাঁদপুরে ৩ মে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকে আদিবাসী ছাত্রদের মিছিলে আরামবাই তেঙ্গল যে হামলা চালাতে চলেছে, তা সরকার এবং পুলিশের অজানা ছিল না। কিন্তু তারা কোনও পক্ষকেই আটকানোর চেষ্টা করেনি। এরপর একের পর এক চার্চে আগুন লাগিয়ে বিষয়টাকে হিন্দু বনাম খ্রিস্টান করে তুলতেও চাওয়া হয়েছিল। মণিপুরের এক শিক্ষাবিদকে উদ্ধৃত করে দ্য টেলিগ্রাফ ১ জুলাই লিখেছে, বিজেপি মেইতেই ঘরের মায়েদের বুঝিয়েছিল– কুকিদের হাতে উপত্যকার সব জমি, চাকরি দখল হয়ে যাবে, এই পরিস্থিতিতে তাদের সন্তানদের স্বার্থেই ছেলেদের পাঠাতে হবে কুকিদের বিরুদ্ধে লড়তে, পুলিশ পিছন থেকে সাহায্য করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কুকিরাও সশস্ত্র। তাদের যেমন প্রাণ যাচ্ছে, তেমনই তাদের গ্রামরক্ষী বাহিনীর হাতে মেইতেই যুবকরাও প্রাণ হারাচ্ছেন। ফলে মেইতেই মায়েরা এখন বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছেন তাঁদের সন্তানকে বলি দেওয়ার জন্য।

সবেতেই কংগ্রেসের অনুসারি বিজেপি

বিজেপির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে মেইতেই জাতিসত্তার প্রতীক হিসাবে তুলে ধরে বিজেপি প্রচার চালিয়েছে। রাজ্যের সরকারের প্রধানের সাম্প্রদায়িক এই ভূমিকা দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ বাড়াতে আরও বেশি করে সাহায্য করেছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক সফর দেখিয়ে তাঁকে এখন মণিপুরের ত্রাতা সাজানোর চেষ্টা একদল করছে। যদিও বীরেন সিং মুখ্যমন্ত্রিত্বে বসার মাত্র পাঁচমাস আগে ছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের সহসভাপতি। মোদিজির ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ স্লোগানের অপূর্ব রূপায়ণ বটে! ১৯৪৯-এ মণিপুরের ভারতভুক্তির পর থেকে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারে বেশি সময় থেকেছে কংগ্রেস। ২০১৭ থেকে রাজ্য সরকারে আছে বিজেপি। এই উভয় দলই মণিপুরের সাধারণ মানুষের সাথে কার্যত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সংবিধানের ৩৭১সি ধারায় মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলের অধিবাসীদের ওপর কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাহাড় থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মত নেওয়া আবশ্যিক। আদিবাসীদের জমি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মত ছাড়া বহিরাগত কারও কাছে বিক্রি বা লিজে দেওয়া যায় না। কুকিদের ঐতিহ্য অনুযায়ী জমির ওপর অধিকার গোষ্ঠীগত, ব্যক্তিগত নয়। নাগা গোষ্ঠীগুলিরও অধিকাংশ জমি গোষ্ঠীগত মালিকানায়, তাদের কিছু ব্যক্তিগত জমিও আছে। ১৯৬০-এর মণিপুর ল্যান্ড রেভিনিউ অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্ম আইনে বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারের ওপর মণিপুরে স্থায়ী বাসিন্দাদের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের কংগ্রেস সরকার ১৯৮৮ এবং ২০১৫ তে দু’বার চেষ্টা করে জমি আইনে বদল এনে পাহাড়ি অঞ্চলেও আদিবাসীদের জমির ওপর বহিরাগত বৃহৎ ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিতে। উল্লেখ্য ২০১৫-তে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের এই আইনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এখন বিজেপি বনাঞ্চলে আদিবাসীদের অধিকারকে সম্পূর্ণ বাতিল করতে সচেষ্ট সারা ভারতেই। মণিপুরেও সব বনাঞ্চলকে তারা রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করে আদিবাসীদের উচ্ছদ চাইছে। এই কাজটি এবং বিজেপি যে কুকিদের নতুন গ্রামগুলিকে অনুপ্রবেশকারীদের গ্রাম বলে দাগিয়ে দিতে চাইছে এই কাজটাও শুরু করে গেছে কংগ্রেস। কুকি গোষ্ঠীগুলির রীতি হল পাহাড়ে মাঝে মাঝেই নতুন গ্রাম পত্তন করে পুরনো গ্রাম ছেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া ১৯৯৩-এ নাগা-কুকি দাঙ্গার পর তারা নতুন ৩৬০টি ছোট বসতি নতুন করে স্থাপন করেছে তা সরকারের অজানা নয়। সরকারের আরও জানা আছে, মিজোরাম, ত্রিপুরা এমনকি মায়ানমার ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা কুকি ট্রাইবদের পরস্পরের সাথে নিবিড় যোগাযোগ আছে। মায়নমারে অশান্তির ফলে সেখান থেকে কিছু শরণার্থী মণিপুরের পাহাড়ে এসেছেন এটাও সত্য। কিন্তু তাদের সাথে সমগ্র কুকি জনগণকে বহিরাগত বলে দাগিয়ে দেওয়া কোনওমতেই চলে না। বিজেপি এই কাজটা করছে অশান্তি তৈরির জন্যই।

বিজেপির ‘ভিশন ২০৪৭’ আসলে কর্পোরেট পুঁজির দৃষ্টিভঙ্গি

বীরেন সিং বিজেপিতে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ লাভ করার পর কংগ্রেসের আনা জমি আইনের পথেই চলেছেন। তিনি নরেন্দ্র মোদির অনুগামী হিসাবে ‘ভিশন ২০৪৭’ আনবার জন্য এখন ব্যস্ত। সেই ভিশনে পাহাড়ে গোষ্ঠীগত জমির মালিকানা ভেঙে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিজেপি। তারা প্রচার করছে এর উদ্দেশ্য– কুকিদের জমির মালিক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। অন্য দিকে মেইতেইদের এসটি তকমা পাইয়ে দিয়ে তাদের সুবিধা করে দেবে বলে বিজেপি যে প্রচার করছে, তার অন্যতম একটা প্রচার হল পাহাড়ে অ-আদিবাসীদের জমি কেনার সুযোগ করে দেওয়া। দরিদ্র মেইতেই জনগণ যাদের অধিকাংশই কৃষিকাজ ও মাছধরার কাজে দিবারাত্র ব্যস্ত থাকে, তারা দলে দলে জমি কেনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে এই গল্প কি সহজে কেউ বিশ্বাস করবে? আসলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে চিনের সাথে টক্কর দিয়ে মাল বিক্রি করতে মণিপুরের জমি কর্পোরেট কোম্পানির মালিক বৃহৎ পুঁজিপতিদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের দরকার এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ বনজ ও খনিজ সম্পদের ওপর থাবা বসানো। আরও জমি দরকার ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজিমালিক ও মার্কিন একচেটিয়াদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে। সাম্রাজ্যবাদী চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা ‘ওবর’-এর সাথে টক্কর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য ভারতীয় একচেটিয়া মালিকদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজি চেষ্টা করছে ‘লুক ইস্ট’ নাম দিয়ে মণিপুর হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে। তার জন্য মণিপুরের আদিবাসীদের জমি থেকে সরানোর পরিকল্পনা তাদের আছে। এই সব মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় মণিপুরের দুই গোষ্ঠীর খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইতে ফয়দা আছে বৃহৎ পুঁজিপতি গোষ্ঠীর। তাদের সেবাদাস বিজেপিও ভোটের ফয়দা দেখেছে। সে জন্যই কি নীরব থেকে আগুন জ্বলতেই দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি!