বেসরকারিকরণ রুখে দিলেন উত্তরপ্রদেশের বিদ্যুৎকর্মীরা

উত্তরপ্রদেশ পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ নিগমের বেসরকারিকরণ বন্ধ, সমস্ত ঠিকা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ এবং মাসে ২২ হাজার টাকা মজুরি সহ অন্যান্য দাবিতে ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত উত্তরপ্রদেশ বিদ্যুৎ কর্মচারী সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির উদ্যোগে গত বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ধারাবাহিক ‘ওয়ার্ক বয়কট’ শুরু হয়৷ সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে উত্তরপ্রদেশ সরকার কর্মচারীদের সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়৷

২০২২–এর ৩ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশ বিদ্যুৎ দপ্তর কর্তৃপক্ষ এবং সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ স্বাক্ষরিত চুক্তিতে পরিষ্কার বলা হয়, উত্তরপ্রদেশ পূর্বাঞ্চলীয় পাওয়ার কর্পোরেশনের বেসরকারিকরণ বন্ধ সহ অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে৷

বিস্ময়ের বিষয়, তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও কর্তৃপক্ষ চুক্তি চালু না করে পুনরায় বিভিন্ন সাবস্টেশন বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির পক্ষ থেকে ১৫ মার্চ রাত ১০টা থেকে ১৬ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়ার্ক বয়কট (কর্মবিরতি) এবং পরবর্তী ৭২ ঘণ্ঢা ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়৷ ১৬ মার্চ রাজধানী লক্ষ্মৌ শহরে বিদ্যুৎকর্মীদের সমাবেশে ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এআইইউটিইডসি এবং এআইপিএফ-এর সর্বভারতীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড রমেশ পরাশর৷ অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমর সিনহা এক বিবৃতিতে দেশের সমস্ত বিদ্যুৎ গ্রাহককে এই আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান৷ কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনও প্রকার আলোচনায় না বসে আন্দোলন ভাঙার জন্য একতরফাভাবে ‘এসমা’ জারি করে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেয়৷ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে ঠিকা ও স্থায়ী কর্মী সহ প্রায় ১৩৩২ জনকে ছাঁটাই করে৷ কর্মচারীদের অনমনীয় ও ঐক্যবদ্ধ মনোভাবের ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় প্রায় ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি হয়৷ সরকার এনটিপিসি সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের উত্তরপ্রদেশে ধর্মঘট ভাঙার জন্য আদেশ জারি করলেও সংশিষ্ট কর্মীরা তা প্রত্যাখান করে৷ প্রবল অসুবিধা সত্ত্বেও রাজ্যের মানুষ এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান৷ এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট ৬০ ঘণ্ঢা পার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়৷ ১৯ মার্চ বিদ্যুৎমন্ত্রী সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বেসরকারিকরণের কর্মসূচি প্রত্যাহার ঘোষণা করে অবিলম্বে ৩ ডিসেম্বরের চুক্তি কার্যকর করার জন্য ডত্তরপ্রদেশ পাওয়ার কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন এবং ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীদের ডপর সমস্ত রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হবে৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের মধ্যে বিএমএস অনুমোদিত বিদ্যুৎ কর্মীদের ইডনিয়ন শুধু সামিল হয়নি তাই নয়, তারা ধর্মঘট ভাঙার জন্য ধারাবাহিক প্রচার সংঘটিত করেছে৷ কিন্তু কর্মচারীদের প্রবল প্রতিরোধের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় তারা৷ এই আন্দোলন নিঃসন্দেহে সরকারি ক্ষেত্রের বেসকারিকরণ বিরোধী অন্যান্য আন্দোলনকে অনুপ্রেরণা জোগাবে৷