বেতন নেই, সামান্য ভাতায় ছাঁটাইয়ের কোপ–২৮ জানুয়ারি পার্লামেন্ট অভিযানের ডাক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের কোনও বেতন দেয় না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ সাম্মানিক ভাতা দেয় নামমাত্র, যা দিয়ে চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই দায়৷

কত টাকা ভাতা পান অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা? তাঁরা কেন্দ্রের কাছ থেকে পেতেন ৩০০০ টাকা, রাজ্যের কাছ থেকে ১৮৫০ টাকা৷ বহু আন্দোলনের চাপে কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী ১৫০০ টাকা এবং মুখ্যমন্ত্রী ১০০০ টাকা ভাতাবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন৷ ফলে ভাতা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৫০ টাকা৷ এর মধ্যে রাজ্য সরকারের প্রদেয় বর্ধিত ১০০০ টাকা সহ ২৮৫০ টাকা দেওয়াও শুরু হয় ১ নভেম্বর৷ যদিও কেন্দ্রের বর্ধিত টাকা দেওয়া শুরু হয়নি৷ এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তর ৫ নভেম্বর ২০১৮ এক সার্কুলারে ঘোষণা করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মাসে পাবেন ৬৭৫০ টাকা৷ অর্থাৎ ৬০০ টাকা কম পাবেন তাঁরা৷

একইভাবে সহায়িকাদের পাওয়ার কথা কেন্দ্রের থেকে ২২৫০ টাকা, রাজ্যের থেকে ২৮৫০ টাকা, মোট ৫১০০ টাকা৷ কিন্তু ৫ নভেম্বরের সার্কুলারের ঘোষণা অনুযায়ী তাঁরা পাবেন ৪৮০০ টাকা৷ অর্থাৎ, সহায়িকারা কম পাচ্ছেন  ৩০০  টাকা৷  প্রতারণামূলক  এই  ঘোষণায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ আসন্ন লোকসভা ভোটে এই ক্ষোভ প্রভাব ফেলতে পারে আন্দাজ করে রাজ্য সরকার এখন বলছে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের ভাতা এক টাকাও কমেনি৷

এআইইউটিইউসি অনুমোদিত ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক মাধবী পণ্ডিত বলেন, এটা রাজ্য সরকারের চালাকি৷ ভাতা যদি না কমে থাকে তাহলে সরকার অবিলম্বে ৫ নভেম্বরের ভাতা কমানোর সার্কুলার প্রত্যাহার করুক৷ তিনি রাজ্য সরকারের এই প্রতারণামূলক প্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে অবিলম্বে এই কালা সার্কুলার প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন তীব্রতর করার আহ্বান জানান৷

তাঁর কথায়, সাম্মানিক ভাতা কমানোর এই চক্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল উভয় সরকারই দায়ী৷ প্রধানমন্ত্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের যে ১৫০০ টাকা এবং সহায়িকাদের যে ৭৫০ টাকা ভাতা বৃদ্ধি ঘোষণা করেছিলেন, তা থেকে সরে এসে কেন্দ্রের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তর ২০ সেপ্ঢেম্বর ২০১৮ সার্কুলার দিয়ে জানায় এই বর্ধিত টাকার অংশ রাজ্য সরকারকে দিতে হবে৷ পরে জানা যায় এর পরিমাণ ৪০ শতাংশ৷ কিন্তু রাজ্য সরকার এর প্রতিবাদ না করে ভাতা কাটার কালা সার্কুলার কর্মী ও সহায়িকাদের উপর চাপিয়ে দেয়৷ ১৫০০ টাকার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৬০০ টাকা কেন্দ্র না দিয়ে দায় চাপিয়েছে রাজ্যের ঘাড়ে৷ রাজ্যও এই ৪০ শতাংশ টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি৷ তিনি বলেন, হরিয়ানা রাজ্য যদি ৮৪২৯ টাকা ভাতা দিতে পারে, দিল্লি দিতে পারে ৭০০০ টাকা তাহলে পশ্চিমবঙ্গ পারবে না কেন? ফলে কেন্দ্র–রাজ্যের যৌথ চক্রান্তে এই কর্মী ও সহায়িকারা বঞ্চিতই হচ্ছেন৷ তিনি বলেন, এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে ১৬ নভেম্বর  ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাজ্যে বিক্ষোভ দেখান হয়েছে, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ পার্লামেন্ট অভিযান করা হবে৷

(৭১ বর্ষ ১৫ সংখ্যা ২৩ – ২৯ নভেম্বর, ২০১৮)