পাঠকের মতামত — প্রধানমন্ত্রীর সময় কোথায়!

সকলেই দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিজির সমালোচনা করে বলছেন যে, তিনি কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। এ ভাবে তাঁকে বলাটা কি ঠিক?

তিনি যে প্রতিশ্রুতি পালন করবেন তার জন্য তাঁর সময় কোথায়? এতগুলি মন্ত্রী– কেউ কি কাজ করেন? ধরুন রেলমন্ত্রী, তিনি যদি কাজ করতেন, তা হলে কি মোদিজিকে যত ট্রেন, যত স্টেশনের আধুনিকীকরণ– সমস্ত কিছুর উদ্বোধনে দৌড়তে হত? এরপর আসুন অর্থমন্ত্রকে। সেখানেও কি কাজ হয়? হলে যত প্রকল্প সবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পেশ করার সময় মিনিটে মিনিটে মোদিজির নাম উল্লেখ করতে হত কি? প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দপ্তর যদি কাজ করত তবে কি মোদিজিকে চাঁদে রকেট পাঠানোর বা মঙ্গল অভিযানের আসরে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হত তদারকির জন্য? ক্রীড়ামন্ত্রীও কি কোনও দায়িত্ব পালন করেন? তা না হলে, ক্রীড়াবিদরা মেডেল জিতলে কি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অভিনন্দন জানাতে হয়, না তাঁদের চা-চক্রে আপ্যায়িত করতে হয়? প্রতিরক্ষা দপ্তর রয়েছে, কিন্তু ফরাসি দেশ থেকে রাফায়েল বিমান বা ইসরাইল থেকে অস্ত্র কেনার জন্য যাচ্ছেন কে? প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। শিক্ষা দফতরও তথোচিত। নয়তো ছাত্ররা কী ভাবে পরীক্ষায় উত্তর লিখবে, তার জন্য খেটেখুটে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ নামক টিভি প্রোগ্রাম করতে হয়? ভাবুন তো, উনি দিনে আঠেরো ঘণ্টা কাজ করেন।

 এর মধ্যে আবার ভারতের ডংকা বাজাতে তাঁকে এ-দেশ ও-দেশ ছুটতে হয়। আজ আমেরিকা তো কাল মিশরে, পরশু দক্ষিণ আফ্রিকা, না হয় অস্ট্রেলিয়া– একটার পর একটা লেগেই আছে। ভারত কী ভাবে বিশ্বগুরু হয়ে উঠেছে অথবা পাঁচ ট্রিলিয়ান অর্থনীতিকে কী ভাবে ছুঁই ছুঁই করছে, সেটা জানাবে কে? আর কারও বিশ্বাসযোগ্যতা আছে? আর কেউ বিদেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে অনায়াসে জড়িয়ে ধরতে পারেন, বন্ধুত্বের নিবিড়তা থেকে? আবার তার উপর রয়েছে, হিন্দুত্বের ধ্বজাকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা।

দেশের স্বার্থে কী না করছেন প্রধানমন্ত্রী? কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাম-মন্দির বানাচ্ছেন, অযোধ্যায় আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন, বিমানবন্দর তৈরি করছেন, নব কলেবরে সংসদভবন তৈরি করছেন এবং স্বয়ং তার কাজের অগ্রগতির খতিয়ান নিয়েছেন, জলজঙ্গল পাহাড় নির্বিচারে ধ্বংস করে চারধাম যাত্রার পথ সুগম করছেন। আবার ভগবানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য প্রেস-মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হয় অমরনাথের গুহায় নয় তো কন্যাকুমারীর সমুদ্র সৈকতে একান্ত ধ্যানে মগ্ন হতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, কোন সুদূর আরব আমিরশাহীতে মন্দির তৈরি হয়েছে, তার ফিতে কাটার জন্য সেখানেও পাড়ি দিতে হয়! আবার সমুদ্রের অতলে নিমজ্জিত হওয়া মন্দিরেপুজো দেওয়ার জন্য ‘স্কুবা ডাইভ’ পর্যন্ত করতে হয়! একটা মানুষের পক্ষে এতদিক সামাল দেওয়া সম্ভব?

তার উপর আবার বনমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকা থেকে চিতা ধরে এনে শিকারির বেশে তাদের জঙ্গলে ছাড়া আছে, গণ্ডার ধ্বংসে বিচলিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে ‘কাজিরাঙ্গার’ জঙ্গলে ঘোরা আছে, আবার দেশের সীমান্তে পাহারারত সেনাবাহিনীর যোশ বজায় রাখার জন্য মিলিটারি পোশাকে তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া আছে। উফ, কী অসম্ভব পরিশ্রমটাই না করতে পারেন মানুষটা!

এরপর আবার নির্বাচন! আজ মধ্যপ্রদেশ তো কাল কর্ণাটক, পরশু রাজস্থান, তার পরদিন পশ্চিমবাংলা– দেশের এপার থেকে ওপার তাঁকে চষে বেড়াতে হচ্ছে। কোথায় কে বজরংবলীর অসম্মান করল, কোথায় কে সেঙ্গাল লুকিয়ে রাখল, কোথায় কে সনাতন ধর্মকে অপমান করল– সবই তাঁকে সামাল দিতে হচ্ছে। নির্বাচনে তিনি সশরীরে আবির্ভূত না হলে ভোটের বাক্স খালি যাবে। কাজেই একবার হেলিকপ্টার, একবার সেনার বিশেষ বিমান, না হলে জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষায় মোড়া রোড-শো।

দেশের জন্য এত কাজ করা, এতদিক ম্যানেজ করা– এরপর তাঁর সময় কোথায় বলুন তো প্রতিশ্রুতি রক্ষার? কোনটা বেশি বড়– দেশ না প্রতিশ্রুতি!

কে পাঠক, কলকাতা-৩১