নির্বাচনী বন্ডের সীমাহীন দুর্নীতির পরেও কি এই সব দলকে ভোট দেবেন?

নরেন্দ্র মোদিজি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাকি সারা দেশে চৌকিদারি করছেন? কথায় কথায় ইডি, সিবিআই বিরোধী নেতাদের বাড়িতে কড়া নাড়ছে। মানুষ এতদিন ভেবেছে এইবার দুর্নীতি দূর করতে কোমর বেঁধে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার! এখন দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট, এই কড়া নাড়ার পিছনে আছে আরও বড় দুর্নীতির খেলা। হয় দল পাল্টে বিজেপির জামা গায়ে গলিয়ে নাও, না হয় কোটি কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে শাসক দলের ফান্ড ভরাও। একমাত্র তা হলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা আর তোমায় দেখতে পাবে না! নির্বাচন কমিশন আগামী লোকসভা নির্বাচনে কালো টাকা আটকানোর জন্য এই ইডি, সিবিআই, আয়কর দপ্তরকেই দায়িত্ব দিয়েছে নজরদারির। কিন্তু যে হাজার হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে ঢুকে বসে আছে কেন্দ্রের এবং নানা রাজ্যের শাসক দলগুলির তহবিলে, তার দাতা কারা, উৎস কী– এ সব হিসাব কে নেবে? দলগুলির বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কার? কেন্দ্রীয় সরকারের তো! অথচ তার নির্দেশেই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ডের তথ্য সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছিল। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসবিআই-এর দেওয়া তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাত ঘুরে প্রকাশিত হলেও দেখা গেল, কোন দল কোন পুঁজিপতির থেকে টাকা নিয়েছে সেই আসল তথ্যটাই গোপন রাখা হল। ঠিক এটাই তো চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার! নির্বাচনী বন্ড তারা চালুই করেছিল এই তথ্যটা গোপন রাখতে। কিছু দল কাদের থেকে টাকা পেয়েছে তা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। কিন্তু সব চেয়ে বেশি যারা পেয়েছে সেই বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস তা জানায়নি।

দেখা যাচ্ছে বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চাঁদা (১৩৬৮ কোটি টাকা) দিয়েছে লটারি কোম্পানির মালিক, বহু কেলেঙ্কারিতে যুক্ত সান্টিয়াগো মার্টিনের মালিকানাধীন ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিস। এ ছাড়া আছে সীমান্তে সড়ক এবং পরিকাঠামো তৈরির বিপুল টাকার বরাত পাওয়া মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং (৯৮০ কোটি টাকা), কোভিডের ভ্যাক্সিন বিক্রির একচেটিয়া বরাত পাওয়া সিরাম ইনস্টিটিউট, মিত্তল গোষ্ঠী, ভারতী এয়ারটেল, সিইএসসি-র মালিকানাধীন হলদিয়া এনার্জি ইত্যাদি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল বেশ কিছু কোম্পানি নির্বাচনী বন্ড কিনে যে পরিমাণ চাঁদা দিয়েছে তা তার মোট মুনাফার থেকে অনেক গুণ বেশি। ছোট ছোট কোম্পানি, যাদের অনেকগুলিই হল শেল কোম্পানি বা ভুয়ো কোম্পানি, তারা বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিয়েছে। এই সব কোম্পানি আসলে কোনও বড় শিল্পপতির মুখোশ। একচেটিয়া পুঁজির মালিক ধনকুবেররা এই সব কোম্পানির মুখোশের আড়ালে বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের তহবিলে টাকা ঢেলেছে। ফিউচার গেমিং গোষ্ঠী তার মুনাফার ৬ গুণ বেশি টাকা বন্ডে ঢেলেছে, কুইক সাপ্লাই চেন (এদের সাথে রিলায়েন্সের যোগাযোগ আছে বলে শোনা যায়) যা চাঁদা দিয়েছে তা তাদের মুনাফার ৩ গুণ বেশি (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬-০৩-২৪ ও দ্য টেলিগ্রাফ, ১৫-০৩-২৪)।

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ২০১৩-তে চালু করেছিল ‘নির্বাচনী তহবিল’ ব্যবস্থা। বলা হয়েছিল, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলকে সরাসরি চাঁদা দেবে না। তারা নির্বাচনী তহবিল ট্রাস্ট কোম্পানিকে টাকা দিয়ে পছন্দের দলের নাম জানিয়ে দেবে। তহবিল ম্যানেজমেন্ট তা রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়ে দেবে। এই রকম একটা তহবিল ‘প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট’।

বলা হয়েছিল কোন শিল্পপতি কোন দলকে টাকা দিয়েছে তা গোপন থাকায় সরকারের নীতিতে শিল্পপতিরা প্রভাব ফেলতে পারবে না। চাঁদার বিনিময়ে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়াও বন্ধ হবে। সরকারে বসে বিজেপি এই তহবিলের সমালোচনা করে আরও স্বচ্ছতার দাবি করে ২০১৭-১৮-তে চালু করেছিল ‘নির্বাচনী বন্ড’। এতে এসবিআই থেকে এক হাজার থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত নানা মূল্যের বন্ড কিনে পুঁজিপতিরা তা রাজনৈতিক দলকে দেবে। এই ব্যবস্থায় গোপনীয়তার আঁটঘাট আরও জোরদার হয়েছে। কোন দল কার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছে এই ব্যবস্থায় তা পুরো গোপন থাকে। বিজেপি বলেছিল নির্বাচনী বন্ডের ফলে সুযোগ নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলকে টাকা দেওয়া বন্ধ হবে।

বাস্তবটা কি তাই? পুঁজিপতিরা রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয় কেন? সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায় করা, সরকারি নীতি নিজেদের স্বার্থে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্য না থাকলে তারা এক পয়সাও দেবে? তারা বিরোধী দলগুলিকেও টাকা দেয় যাতে সরকারের গদিতে থাকা দল ভোটে হেরে গেলে পরবর্তীকালে যারা আসবে, তারাও কেনা হয়ে থাকে। আরও কিছু উদ্দেশ্য থাকে, প্রথমত, সাধারণ মানুষের চোখে পুঁজিবাদের নির্মম শোষণকে একটু সহনীয় করে দেখাতে গণতন্ত্রের ঠাটবাট বজায় রাখা তাদের দরকার। এ জন্য বিরোধী পক্ষকেও বাঁচিয়ে রাখা পুঁজিপতিদেরই প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, নানা পুঁজিপতি গোষ্ঠী তাদের স্বার্থের উমেদারির জন্য সংসদীয় দলগুলিকে নিয়োগ করে। রাজ্যে বা কেন্দ্রে এই উমেদারির মজুরি হিসাবে কোটি কোটি টাকা এইসব দলের তহবিলে ঢালে পুঁজিপতিরা। এটাও তাদের ব্যসায়িক লগ্নি ছাড়া কিছু নয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও বলেছে নির্বাচনী বন্ড হল কিছুর বিনিময়ে কিছু পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা।

এস ইউ সি আই (সি) সেই স্বাধীনতার পর থেকেই বলে আসছে, বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে পুঁজিপতি শ্রেণি। তারাই ঠিক করে কোন দলকে ক্ষমতায় বসাবে, কাকে বিরোধী আসনে রাখবে। সেই অনুসারে টাকা-প্রশাসনিক ব্যাকিং-প্রচারমাধ্যম-পেশিশক্তি কার পক্ষে কাজ করবে তা নির্ধারিত হয়। সে জন্য এই ব্যবস্থায় ভোট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনমতের সঠিক প্রতিফলন নয়।

নির্বাচনী বন্ডে পুঁজিপতিরা ঢেলেছে ১৬,৫১৮ কোটি টাকা। তার অর্ধেক পেয়েছে বিজেপি। বন্ড চালু হওয়ার প্রথম পাঁচ দিনেই বিজেপি ২১০ কোটি টাকা পেয়েছে, কংগ্রেস পেয়েছে ৫ কোটি টাকা। ২০১৯-এর ভোটের মুখে বিজেপি সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে। কংগ্রেস যদিও মোটামুটি ১৭০০ কোটি টাকা পেয়ে তৃণমূলের পরেই আছে। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে মোট ১,৭১৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫২৮ কোটি টাকা পেয়েছে ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পরে। এই ঘটনা কী বোঝাচ্ছে? পুঁজিপতিরা সেই দলের পিছনেই টাকা ঢেলেছে ভোটে যাদের তারা জেতাতে চেয়েছে।

নির্বাচনী বন্ড চালুর পরেও বিজেপি কিন্তু নির্বাচনী তহবিল থেকে টাকা নিয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রুডেন্ট তহবিল থেকে তারা ২,২৫৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ফিউচার গেমিং, মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং, সিরাম ইনস্টিটিউট, মিত্তলদের নানা কোম্পানি, ভারতী এয়ারটেল, হলদিয়া এনার্জি, গোয়েঙ্কাদের ফিলিপস কার্বন ব্ল্যাক, ডিএলএফ, জিএমআর ইত্যাদিরা বিজেপি সহ নানা রাজ্যের শাসক দলকে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে। কংগ্রেসের চালু করা নির্বাচনী তহবিল ব্যবস্থাকে পাল্টে কালো টাকার গতি রোধ করবে বলে নির্বাচনী বন্ড এনেছিল বিজেপি। তারা তবে এই তহবিল থেকে টাকা নিয়েছে কেন? আসলে জনগণকে ধোঁকা দেওয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য।

অদ্ভূত একটা সমাপতন এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর মধ্যে যে ৩০টি সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিয়েছে তাদের ১৪টিই টাকা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, বা আয়কর দপ্তরের তদন্ত শুরু হওয়ার ঠিক পরে। এছাড়া চাঁদা দেওয়ার পরেই কোটি কোটি টাকা সরকারি বরাতের উদাহরণ হিসাবে সংবাদমাধ্যমে নানা কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। কংগ্রেস সরকারের আমলে সিবিআইকে খাঁচার তোতা বলে ভৎর্সনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি, আর্থিক তদন্ত সংস্থাগুলির ন্যূনতম স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার সব চিহ্ন মুছে দিয়ে বিজেপি সরকার এগুলিকে শাসকদলের রাজনৈতিক ফয়দা এবং তোলা আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত করতে চাইছে। তাদের সুবিধা হল, বিজেপি বিরোধী বলে পরিচিত সব ভোটবাজ সংসদীয় দলগুলির নেতারা নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আছেনই। বিজেপি সেটাকে ব্যবহার করতে পারছে চাপের কৌশল হিসাবে। মজার ব্যাপার হল, এই দুর্নীতিগ্রস্তরা বিজেপিতে নাম লেখালেই ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরের আর দেখা পাওয়া যায় না। বড় বড় মালিকদের বশে রাখার জন্যও বিজেপি একই কৌশল নিচ্ছে। আগে কংগ্রেসও তাই করত। বিজেপির হাতে এর গতি বেড়েছে বহুগুণ।

এর মধ্য দিয়ে শাসক বিজেপির দুর্নীতিই শুধু সামনে এসেছে তা নয়, আর একটা সত্যও প্রকাশ হয়ে গেছে– এস ইউ সি আই (সি) দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, সংসদীয় দলগুলি পুঁজিপতিদের টাকাতেই চলে এবং নির্বাচনে জিতে তারা এদের স্বার্থই রক্ষা করে, জনগণের স্বার্থ নয়। অর্থাৎ জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় গিয়ে এই সব দল পুঁজিপতিদের পলিটিকাল ম্যানেজার হিসাবে কাজ করে। সেই কথাটাই আজ আরও একবার স্পষ্ট হল।

‘পবিত্র সংসদীয় ব্যবস্থা’-র এই হল আসল ক্লেদাক্ত চেহারা। প্রকাশ্যে যে কালো দেখা যাচ্ছে তাতে পর্দার পিছনে থাকা কালোর পরিমাণ ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দেওয়ার সময় মানুষকে ভাবতে হবে, এই দলগুলোর নীতিহীন ভাবে জোগাড় করা টাকার স্রোত দেখে কি এদের প্রতি আপনার ঘৃণা হবে না? আবারও ভোটের নামে সর্বনাশা জাঁকজমকের জোয়ারে ভাসবেন, না এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের যথার্থ শক্তিকে জয়ী করবেন?

নির্বাচনী বন্ডঃ জনগণের সঙ্গে চরম প্রতারণা

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন থেকে বিজেপি যে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢেলে জনমতকে প্রভাবিত করে আসছে তা সবাই জানেন। কিন্তু সেই টাকা তো জনগণ তাদের দেয়নি! তা হলে কোথা থেকে সেই টাকা তারা পেল, তা দেশের মানুষের কাছে একটি গুরুতর প্রশ্ন হিসাবে ছিল। নির্বাচনী বন্ড দুর্নীতি সেই প্রশ্নের উত্তরটি প্রকাশ্যে এনেছে। এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ডের তথ্য থেকে বিজেপির অন্তত ছয় রকম দুর্নীতির কৌশল প্রকাশ পেয়েছে।

১। কুইড প্রো কুও বা লেনা-দেনা পদ্ধতিঃ বেশ কিছু কোম্পানি নির্বাচনী বন্ডে দান করেছে এবং তারপরই সরকারের থেকে বিশাল সুবিধা পেয়েছে। যেমন– ক। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা। এরা নির্বাচনী বন্ড মারফত দিয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এপ্রিল, ২০২৩-এ দিয়েছে ১৪০ কোটি এবং মাত্র এক মাস পরেই ১৪,৪০০ কোটি টাকার থানে-বরিভালি টুইন টানেল প্রকল্প হাতে পেয়েছে। খ। জিন্দাল পাওয়ার। এরা ৭ অক্টোবর ২০২২-এ দিয়েছে ২৫ কোটি টাকা, এবং মাত্র তিন দিন পর ১০ অক্টোবর গারে-পালমা কয়লা খনির বরাত পেয়েছে। এমন আরও আছে।

২। তোলা আদায় পদ্ধতিঃ এই কৌশলটি চিরপরিচিত। প্রথমে ইডি-সিবিআই-আইটি-র মাধ্যমে টার্গেট কোম্পানিতে অভিযান চালানো হয়, তারপর কোম্পানি ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত অনুদান দেয় নিজেদের বাঁচাতে। দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ ৩০ জন দাতার মধ্যে অন্তত ১৪ জনের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযান হয়েছে। ক। হেটেরো ফার্মা এবং যশোদা হাসপাতালের মতো কোম্পানি ইডি-সিবিআই-আইটির ক্রমান্বয় আক্রমণের পর অনেক বার অনুদান দিয়েছে। যতবার হানা, ততবার অনুদান। খ। আইটি বিভাগ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শিরডি সাই ইলেক্ট্রিক্যালসে অভিযান চালায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তারা নির্বাচনী বন্ডে ৪০ কোটি টাকা দেয়। গ। ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেলস দিয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তারা সবচেয়ে বড় দাতা। এখানে ঘটনাক্রম এ রকম–২ এপ্রিল ২০২২- ইডি ফিউচারে অভিযান চালায়। ৫ দিন পরে (৭ এপ্রিল) তারা দেয় ১০০ কোটি টাকা। অক্টোবর ২০২৩- আইটি বিভাগ ফিউচারে অভিযান চালায় এবং একই মাসে তারা দেয় ৬৫ কোটি টাকা। এমন উদাহরণ আরও আছে।

৩। কিকব্যাক পদ্ধতি- তথ্য থেকে আরও একটি নকশা উঠে এসেছে, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার পরপরই কোম্পানিগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজানুগ্রহের দাম চুকিয়েছে।ক। বেদান্ত- ৩ মার্চ ২০২১-এ রাধিকাপুর পশ্চিমে কয়লা খনি পেয়েছিল। পরের মাস এপ্রিলে তাঁরা দিলেন নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা। খ। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা- ২০২০ সালের আগস্টে পেয়েছে ৪৫০০ কোটি টাকার জোজিলা টানেল প্রকল্প। অক্টোবরে জোজিলা বন্ডে দিয়েছে ২০ কোটি টাকা। মেঘা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিকেসি বুলেট ট্রেনস্টেশনের চুক্তি পায়। একই মাসে ৫৬ কোটি টাকা দেয়। উদাহরণ আরও আছে।

৪। শেল কোম্পানির মাধ্যমে বন্ডে টাকা- আগে কোম্পানির লাভের একটি ছোট শতাংশই দান করা যেত। ইলেক্টোরাল বন্ড এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দূর করেছে। শেল কোম্পানিগুলির কালো টাকা দান করার পথ প্রশস্ত করেছে। শেল কোম্পানি মানে খোলস কোম্পানি। মানে খোলস আছে, শাঁস নেই। নাম আছে, কিন্তু আসলে কোম্পানিটির কোনও অস্তিত্ব নেই।

এ রকম অনেক সন্দেহজনক ঘটনা পাওয়া গেছে। যেমন, ৪১০ কোটি টাকা দান করেছে কুইক সাপ্লাই চেন লিমিটেড, যার সম্পূর্ণ শেয়ার মূলধন মাত্র ১৩০ কোটি! দানের টাকা যে আসলে অন্য কোনও বৃহৎ পুঁজিমালিক জোগাচ্ছে, বুঝতে অসুবিধা হয় কি?

৫। একের নামে অন্যের টাকা দেওয়ার পদ্ধতিঃ যেমন, লক্ষ্মীদাস বল্লভদাস মার্চেন্ট। ইনি একাই ২৫ কোটি দিয়েছেন। কোত্থেকে পেলেন? ইনি ব্যবসায়ী নন। লিংকডিনে ফেলে দেখা যাচ্ছে, ইনি রিলায়েন্সের ছটি কোম্পানির ডাইরেক্টর। তা হলে টাকা কি ইনি দিয়েছেন, নাকি আম্বানিরা? এ রকম আরও বহু ধনকুবের রয়েছেন গৌরী সেনের ভূমিকায়।নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ চলতে থাকলে বিজেপির আর্থিক দুর্নীতির এ রকম আরও অনেক প্রকরণস্পষ্ট হয়ে উঠবে।

(সূত্রঃ রিপোটার্স কালেক্টিভ)