Breaking News

দণ্ডসংহিতার স্বৈরাচারী পদক্ষেপ রুখলেন ট্রাক চালকরা

লক্ষ্ণৌ, ২ জানুয়ারি ২৪

দেখি কে আমাদের আটকায়! এমনই বেপরোয়া ভাব বিজেপির। একদিকে সংসদে তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা, অন্য দিকে বিরোধী সংসদীয় দলগুলির অনৈক্য, তাদের ছন্নছাড়া মনোভাব এবং বামপন্থী আন্দোলনের দুর্বলতা। এই সুযোগে বিজেপির ‘নেই পরোয়া’ মনোভাব। এই ঔদ্ধত্য এমনই যে সম্প্রতি ১৪৬ জন বিরোধী সাংসদকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ভাবে, বিনা কারণে সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছে। সংসদকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে, কোনও বিতর্ক, কোনও আলোচনার সুযোগ না দিয়ে উভয় কক্ষে পাস করিয়ে নিয়েছে দণ্ডসংহিতা বিল।

সংসদে গায়ের জোরে আইন পাস করানো এক জিনিস। কিন্তু তা মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে জোর করে মানাতে গেলে জনগণও যে প্রতিরোধ করতে পারে, এই কথাটাই শাসক শ্রেণি ক্ষমতার দম্ভে ভুলে যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটাই আবারও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরলেন ট্রাক চালকরা।

কী ভাবে? হঠাৎ ট্রাকচালকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল কেন দণ্ডসংহিতার বিরুদ্ধে? কারণ দণ্ডসংহিতার ১০৬/২ ধারায় বলা হয়েছে, ধাক্কা মেরে পালালে গাড়ি চালকের ১০ বছর পর্যন্ত জেল ও ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে। এর বিরুদ্ধেই ট্রাক ও বাণিজ্যিক গাড়ির চালকরা ১ জানুয়ারি থেকে এক মাসের সারা ভারত ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের প্রথম দিনেই সারা দেশে লাখ লাখ ট্রাক বন্ধ রেখে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধে সামিল হন ট্রাক চালকরা। টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।প্রবল চাপের মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার।পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মোদি সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লাকে পরিবহন সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় পাঠাতে বাধ্য হয়।

আলোচনায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সাথে প্রশ্ন তোলেন, কেন তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এমন কঠোর আইন করা হয়েছে। যে অপরাধে দু’বছরের জেল ছিল, তা বাড়িয়ে কেন ১০ বছর করা হয়েছে? আর ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা কি দেওয়া সম্ভব ১০-১৫ হাজার টাকা মজুরি পাওয়া চালকের পক্ষে? তা দিতে পারলে ট্রাকের মালিকই তো হয়ে যেতেন চালকরা। এ সব জেনেও কেন এমন আইন করা হয়েছে?

এই আইনের ফলে ট্রাকচালক পুলিশকে দুর্ঘটনার খবর জানিয়েছিলেন কি না, তার উপর নির্ভর করবে জরিমানা ও কারাদণ্ডের পরিমাণ। ফলে পুলিশের ঘুষ খাওয়ার রাস্তা আরও প্রশস্ত হবে বলে অভিযোগ করছেন ট্রাকচালকরা। এই আইন কার্যত ট্রাক চালকদের হাতে মারার কল ছাড়া আর কিছু নয়।এই আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলন লাগাতার চলবে, গাড়ির চাকা ঘুরবে না, পণ্য পরিবহন হবে না।তাতে অর্থনীতি থমকে দাঁড়ালে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার।

ট্রাক চালকদের এই দৃঢ় অবস্থানেই কাজ হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝতে পেরে স্বরাষ্ট্র সচিব আশ্বাস দেন, ১০৬/২ ধারাটি কার্যকর করার আগে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে।

ট্রাক চালকদের এই জয় মনে করিয়ে দেয় দিল্লির কৃষক আন্দোলনের কথা।এই দুটি আন্দোলন যুগপৎ দেখিয়ে দেয়, শত শত এমএলএ, এমপি– তাঁরা দণ্ডসংহিতা বিল বাতিলের জন্য যা করতে পারেননি, ট্রাক চালকরা তা করে দেখালেন।এখানেই সংগঠিত জনতার শক্তির জোর। আন্দোলনের জোর। আন্দোলনই জনগণকে তেজোদীপ্ত করে তোলে।শাসকের আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড় করায়। আন্দোলনই শাসকের দম্ভ চূর্ণ করে দাবি আদায় করে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করে।