Breaking News

‘বিকাশ পুরুষের’ রাজত্ব খাবার জোগাড় করতেই রোজগারের টাকা শেষ!

ফাইল ফটো

মোদি সাহেবের রাজত্বে বিগত পাঁচ বছরে (২০১৯-’ ২৪) একজনের নিরামিষ থালির খরচ বেড়েছে ৭১ শতাংশ। কিন্তু স্থায়ী চাকুরেদেরও মাইনে এই সময়ে খুব বেশি হলে বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। অস্থায়ী, ক্যাজুয়াল কর্মী যাঁরা তাঁদের কথা বোধহয় না তোলাই ভাল।

মহারাষ্ট্রকে মডেল ধরে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার একটি সমীক্ষা সম্প্রতি দেখিয়েছে, চাল, ডাল, আটা, তেল, আলু, সবজি, মশলাপাতির খরচ মোদি সাহেবের দ্বিতীয়বার ক্ষমতা দখলের বছরের তুলনায় বেড়েছে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০০ শতাংশ হারে। ডাল, তেল এবং আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কা ইত্যাদি মসলার দাম বাড়ার হার তার থেকেও বেশি। মহারাষ্ট্রে একজন স্থায়ী কর্মীর গড় মাইনে পাঁচ বছরে বেড়েছে ৬,৩০০ টাকার মতো। কিন্তু দু’বেলা শুধু নিজের মূল খাবারটার জন্য (নিরামিষ থালি) পাঁচ বছর আগে এইরকম চাকুরেদের ব্যয় করতে হত আয়ের ৮.০৬ শতাংশ।

২০২৪-এ তা হয়েছে আয়ের ১০.১০ শতাংশ। সমীক্ষা দেখাচ্ছে, মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোট সরকার যতই প্রচার করুক না কেন ক্যাজুয়াল কর্মীদের মজুরি ২১৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬৪ টাকা হয়েছে, খাবারের দাম বৃদ্ধির নিরিখে তাদের মজুরি আদৌ বাড়েনি। তারা পাঁচ বছর আগে একজনের দু’বেলা নিরামিষ খাবারের জন্য আয়ের ২১.১৫ শতাংশ ব্যয় করত, এখন করে আয়ের ২১.৭২ শতাংশ।

এই হিসাব একটিমাত্র রাজ্যকে মডেল ধরে করা হলেও সারা ভারতের চিত্রই কমবেশি এমন। দ্য হিন্দু পত্রিকাটি মহারাষ্ট্রকে মডেল ধরেছিল সেখানকার তথ্য পাওয়া কিছুটা সহজ বলে। আমিষ খাবারের হিসাব এবং গোটা পরিবারের দু-বেলার খাওয়া খরচ এখানে ধরা হয়নি। দেখা যাচ্ছে একজনের শুধু দু-বেলার মূল দুটি খাবারেই আয়ের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যাচ্ছে। পাঁচজনের পরিবার ধরলে একেকটা পরিবারে কার্যত খাবার জোগাড় করতেই রোজগারের সমস্তটা চলে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের করা সমীক্ষা দেখিয়েছে, মোদিজি যাই গ্যারান্টি দিন না কেন, একটাই গ্যারান্টি আছে যা একেবারে একশো শতাংশ মিলবেই– জিনিসের দাম কমবে না। ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার যতই জিডিপি বৃদ্ধির গল্প শোনাক না কেন, দেশের মানুষের প্রকৃত আয় যে কমছে তা বাস্তব পরিস্থিতির দিকে তাকালে যে কেউই বুঝতে পারবেন।

সরকারের হাউজহোল্ড সার্ভের রিপোর্টই বলছে পরিবারগুলোতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকা দূরের কথা, ক্রমাগত ব্যয় বেড়ে চললেও আয় সে তুলনায় বাড়ছে না। একাধিক সংস্থার সমীক্ষা দেখাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে তো বটেই শহরাঞ্চলেও সাধারণ বাড়িতে একটু সাবান শ্যাম্পুর মতো অতি সাধারণ ভোগ্যপণ্যের কেনাকাটাতেও টান পড়ছে। কোম্পানিগুলো ক্রমাগত অতি ছোট প্যাকে-পাউচে রান্নার তেল, মশলা, সাবান, শ্যাম্পু বিক্রি করেও বাজারের হাল ফেরাতে পারছে না।

 কর্মসংস্থানের নামে যতটুকু কাজ সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মজুরি খুবই নগণ্য। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই ন্যূনতম মজুরির হার দৈনিক মাত্র ১৭৮ টাকা ধার্য করে রেখেছে গত পাঁচ বছর ধরেই। ফলে সারা ভারতেই মজুরি বাড়ার হার অত্যন্ত কম। যেখানে সামান্য কিছু মজুরি বাড়ছেও, মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে মজুরি আসলে কমেছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার কোনও ইচ্ছা বা উদ্যোগ সরকারের নেই। বরং বৃহৎ মালিকদের স্বার্থে দাম বাড়ানোর জন্যই তারা চেষ্টা করে চলেছে। জ্বালানি তেলের দাম সারা বিশ্বে যখন কমেছে ভারতে বিজেপি সরকার তা কখনও কমতে দেয়নি। এর ফলে বৃহৎ পুঁজিমালিকদের লাভ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ওদের বিপুল আয় দেখিয়ে সরকার জাতীয় আয় বৃদ্ধির মিথ্যা হিসাব নিয়ে বড়াই করছে।

মোদিজি নিজে এই বাস্তবটা এত ভাল জানেন যে, তিনি এখন হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ছাড়া অন্য কোনও বিষয় মুখে পর্যন্ত আনছেন না। তাঁর একটা সুবিধা আছে, এই ভোটের প্রচারে তাঁর বিরোধী যারা, সেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা সকলেই এবং তাঁর নিজের দল বিজেপি সহ এনডিএ জোটের সব শরিকই পুঁজিপতিদের কাছে নিজেদের বন্ধক রেখে রাজনীতি করে। ফলে ভোটে তারা এই সব নিয়ে কিছু গলা ফাটালেও আন্দোলনের কথা বলবে না। মূল্যবৃদ্ধি রোখার জন্য, প্রকৃত মজুরি বাড়াবার জন্য কিছুই করবে না। দেশে শক্তিশালী বামপন্থী আন্দোলন থাকলে মোদিজি এই ময়দান সহজে পার হতে পারতেন না। কিন্তু সিপিএমের মতো সংস্কারবাদীরা বামপন্থার ঝান্ডাকে ছেড়ে হিন্দিবলয়ে দক্ষিণপন্থীদের কার্যত ওয়াক ওভার দিয়েছে। এ সবের বিপরীতে মূল্যবৃদ্ধি সহ সাধারণ মানুষের দাবিগুলি নিয়ে দেশ জুড়ে লড়াই আন্দোলন করছে এসইউসিআই(সি)। ভোটের ময়দানে গণআন্দোলনের এই শক্তিকে আরও ক্ষমতাশালী করার মধ্যেই সত্যিকারের জনস্বার্থ নিহিত আছে।