জনমুখী বিকল্প শিক্ষানীতির দাবিতে কর্ণাটক রাজ্য শিক্ষা কনভেনশন

কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এলে তারা বিজেপির তৈরি জাতীয় শিক্ষানীতি সে রাজ্যে বাতিল করবে। কংগ্রেস ভোটে জেতার পর জনসাধারণের মধ্য থেকে প্রতিশ্রুতি রক্ষার দাবি উঠতে থাকে। সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির কর্নাটক শাখা এই দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুকদেও থোরাটের নেতৃত্বে সরকার রাজ্য শিক্ষা কমিশন গঠন করে।

সেভ এডুকেশন কমিটির কর্ণাটক রাজ্য শাখা কয়েক মাস ধরে ২৪টি জেলার ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৮৩টি কলেজে সমীক্ষা করে ২৫৩৬ জন ছাত্র-শিক্ষকের মতামত নিয়ে বিকল্প শিক্ষানীতির প্রস্তাব তৈরি করে। কমিটি ১০ জানুয়ারি বাঙ্গালোরের গান্ধী ভবন হলে একটি কনভেনশনে শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-অভিভাবক-ছাত্রদের মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করে এবং কমিশনের চেয়ারম্যান সুকদেও থোরাটের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়– ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স চালুর বিপক্ষে ৯৪.৫ শতাংশ, পক্ষে ৫.৫ শতাংশ মত দিয়েছেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শিক্ষানীতিতেযে সব পাঠ্যবিষয়ের কথা বলা হয়েছে তার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নেই বলেন ৯৭.৪৬ শতাংশ, হ্যাঁ বলেছেন ২.৫৪ শতাংশ। ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্সে প্রথম বর্ষে বা দ্বিতীয় বর্ষে ড্রপ আউট হলে চাকরি পাবে কি না, এ প্রশ্নে না ৯৬.৩২ শতাংশ, হ্যাঁ ৩.৬৮ শতাংশ। ছাত্র বেতন যেভাবে বাড়ছে তা ঠিক কিনা তাতে না ৯৮.৫ শতাংশ, হ্যাঁ ১.৫ শতাংশ। কোয়ালিটি এডুকেশন সুনিশ্চিত করতে সরকারকে শিক্ষায় বেশি অর্থ দিতে হবে কি না এবং শিক্ষক পদ পূরণ করতে হবে কি না– হ্যাঁ ৯৭.৯৮ শতাংশ, না ২.০২ শতাংশ।

সেভ এডুকেশন কমিটির কর্ণাটক শাখার সুপারিশ– ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স বাতিল করে ৩ বছরের কোর্স আবার চালু করা, CUET বাতিল করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজেদেরই পড়ুয়া ভর্তির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, শিক্ষার ফান্ড বৃদ্ধির জন্য বড় বড় শিল্প মালিকদের উপর ১ শতাংশ সম্পদ-কর চাপানো, ভারতের ১০০ জন কোটিপতির উপর ২.৫ শতাংশ বা ১০ জন কোটিপতির উপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স চাপানো, যাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সরকারের অর্থসংস্থান ঘটবে। কমিটির সুপারিশ, কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করতে হবে আদায় হওয়া শিক্ষা-সেস শিক্ষার জন্য খরচ করতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে, সকল শূন্য শিক্ষকপদ পূরণ করতে হবে এবং অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী করতে হবে।

সভায় সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, আমাদের দাবি এই শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ বাতিল করে জনমুখী জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করতে হবে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে সেভ এডুকেশন কমিটির সারা ভারত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে পিপলস অল্টারনেটিভ এডুকেশন পলিসি (বিকল্প শিক্ষানীতি) চূড়ান্ত করা হবে এবং তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।

সভাপতিত্ব করেন সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির কর্নাটক রাজ্য শাখার সভাপতি অধ্যাপক আলামপ্রভু বেত্রাদুরু। বক্তব্য রাখেন সেন্ট যোশেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ ভিক্টর লোবো, বিজ্ঞানী আর এল মৌরিয়ন, কর্নাটক রিজিওনাল কমিশন ফর এডুকেশনের সম্পাদক ডঃ ফ্রান্সিস আশিসি আলমেদিয়া, ডঃ আব্দুুল সিভান, অধ্যাপিকা সবিতা বনাড়ি প্রমুখ। সকল বক্তা কর্ণাটক সেভ এডুকেশন কমিটির সুপারিশগুলিকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনা করেন কর্ণাটক রাজ্য সেভ এডুকেশন কমিটির সহ সভাপতি রাজাশেখর। বহু শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মেলনেট উপস্থিত হন। ৩০০ জনের বেশি উপস্থিত ছিলেন, যার বেশিরভাগই ছাত্রছাত্রী। ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ফ্লোর থেকে বক্তব্য রাখেন।