কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে

৫ই আগস্ট এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও দার্শনিক, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের ৪৪তম স্মরণদিবস৷ এই উপলক্ষে তাঁর রচনার একটি অংশ প্রকাশ করা হল৷

‘‘এই যে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় দেখছেন, এটা একটা ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ নয়৷ ‘স্পনটেনিয়াস’ (স্বতঃস্ফূর্ত) ‘সামথিং’ (কিছু একটা) নয়৷ এমন একটা ব্যাপার নয়, যেটা পূর্ব নির্ধারিত একটা ‘ফ্যাটালিস্টিক’ (অবশ্যম্ভাবী) ঘটনা – যেন হওয়ারই কথা ছিল, যেটা হবেই এবং তাই হচ্ছে৷ গভীরে গিয়ে দেখলে ধরা পড়বে, যদিও এটা ঘটছে লোকচক্ষুর অন্তরালে তবুও এর পিছনে রয়েছে শাসক সম্প্রদায়ের একটা পরিকল্পনা এবং প্রশ্রয়৷ মানুষকে এরা মুখে বলছে সৎ হও, ভাল হও৷ অথচ ‘প্র্যাকটিক্যাল পলিটিকস’–এর (বাস্তব রাজনীতির) দোহাই দিয়ে ক্ষুদ্র পার্টিস্বার্থে শুধু আশু প্রয়োজনটাকে সামনে রেখে, শাসকদলই শুধু নয়, বিপ্লবের তকমাধারী অনেক দলই মানুষের মধ্যে যে নীচ প্রবৃত্তিগুলো রয়েছে তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে৷

কাপুরুষোচিত আক্রমণের প্রবৃত্তিকে, দশজনে মিলে একজনকে মারার হীন কার্যকলাপকে, তত্ত্ব আলোচনা যুক্তিবিচারের বদলে অসহিষ্ণুতা প্রভৃতিকে সংগ্রাম ও লড়াই–এর নামে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ লোভ–লালসা ও নীচতা, যা একটা মানুষকে অমানুষ করে, তার বীরত্ব এবং যথার্থ মর্যাদাবোধকে নষ্ট করে দেয়, তাকেই আজ প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ টাকার বিনিময়ে কর্মীদের দিয়ে পার্টির বা ইউনিয়নের নিয়মিত কাজ করানো হচ্ছে এবং নির্বাচনের কাজ করানো হচ্ছে৷ এ সবই চলছে আজ বাস্তব রাজনীতির দোহাই দিয়ে৷ লক্ষ লক্ষ বেকারে আজ সারা দেশ ভরে গেছে, পেট চলছে না মানুষের৷ সেই সুযোগে এই রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ব্যবহার করছে, এইভাবেই তাদের ‘এমপ্লয়মেন্ট’(চাকরি) দিচ্ছে আপনারা জানেন যে, সব মানুষই দোষে গুণে মিশিয়ে মানুষ৷ মানুষের মধ্যে যে সমস্ত ভাল দিক রয়েছে অর্থাৎ তার মধ্যে যে সব ভালর দিক– সাহস, বীরত্ব, সহানুভূতি, উদারতা ও কর্তব্যের দিক রয়েছে, সেই দিকগুলোকে বাড়াতে সাহায্য করেই একমাত্র তার দোষকে দূর করা যায়৷ শুধুমাত্র দোষকে দূর হতে বললেই তা দূর হয়ে যায় না, বা মানুষকে সৎ হও, ভাল হও বললেই মানুষ সৎ ও ভাল হয় না৷ অথচ একদিকে সৎ হও, ভাল হও বলে এই উপদেশ আর অন্য দিকে বাস্তব রাজনীতির দোহাই পেড়ে যারা বা যে দলই হোক না কেন, বুকনি তাদের যাই হোক না কেন– মানুষের মধ্যে নীচ প্রবৃত্তিগুলোকে উস্কানি দিয়ে এবং এর দ্বারা তারা জেনে হোক, না জেনে হোক, নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে সৎ হোন বা অসৎ হোন সেটা অত বড় প্রশ্ন নয়, এর দ্বারা তারা আসলে গোটা দেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে, জাতির নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করার বুর্জোয়া শ্রেণির যে ষড়যন্ত্র তাকে সফল হতে সাহায্য করছেন৷’’

– ‘শ্রমিকের কাছে সর্বহারা রুচি সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে’ : নির্বাচিত রচনাবলি,  তৃতীয় খণ্ড

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা)