এস ইউ সি আই (সি)-র বড় হওয়ার পদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা

আমাদের দলের বড় হওয়ার পদ্ধতির সাথে অন্যান্য দলের বড় হওয়ার পদ্ধতিগত পার্থক্য আছে। তারা সংগঠন বাড়াচ্ছে শাসক দলের সুবিধা নিয়ে। সব সংসদীয় দলই এটা করে। শাসন ক্ষমতায় থাকবার সুযোগ নিয়ে, তার সুবিধা নিয়ে তারা দলবল বাড়ায়। আমরা এ ভাবে ভাবি না। আমাদের বড় হবার নীতিটা আমরা অন্য ভাবে ভাবছি। আমরাও বড় হতে চাই, বড় হচ্ছি, কিন্তু অন্য পদ্ধতিতে। শ্রমিক-চাষিদের কমিটিগুলো গঠন করে গণসংগ্রাম ও শ্রেণিসংগ্রামের পথে কর্মী তৈরি করতে এবং সাধারণ কর্মীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরি করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। গণসংগঠনগুলোর মধ্য থেকে, কৃষক-শ্রমিকদের মধ্য থেকে কর্মী তৈরি করে, আমরা নেতৃত্বে নিয়ে আসবার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি যাতে চাষির ঘর থেকে, শ্রমিকের ঘর থেকে কর্মী তৈরি করা যায়, নেতৃত্ব তৈরি করা যায়। …

এই পরিস্থিতিতে আদর্শগত সংগ্রামের হাতিয়ারকে ব্যবহার করে আলোচনার মধ্য দিয়ে খুব গভীরভাবে নাড়া দিয়ে দেশের প্রগতিশীল শক্তিগুলিকে একত্রিত করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, বিপ্লবই আসলে বিকল্প। কিন্তু বিপ্লবের জন্য বিপ্লবী পার্টি চাই। আর কার কত শক্তি, তাই দিয়ে বিপ্লবী পার্টি বিচার করতে যাবেন না। কারণ, অবিপ্লবী পার্টিরও শক্তিবৃদ্ধি হয়। না হলে মুসলিম লিগের শক্তিবৃদ্ধি হত না, জনসংঘের শক্তিবৃদ্ধি হত না, সভ্যতার চরম শত্রু হয়েও হিটলারের পার্টি গোটা জার্মানিকে তার পেছনে জড়ো করতে পারত না। শুধু মালিকদের সমর্থনে এটা হয় না। কারণ দেশে মালিকরা আর ক’জন? জনসাধারণ সমর্থন না করলে তাদের শক্তি টেকে কী করে, বাড়ে কী করে? জনগণ বহু কারণেই তাদের সমর্থন করতে পারে ও করে, যদি না সত্যিকারের বিপ্লবী চেতনা তাদের মধ্যে দেওয়া যায়। তাই আপনাদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বুঝতে হবে, বিপ্লবী পার্টি বুঝতে হবে, বুঝতে হবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হল একমাত্র হাতিয়ার।

এই বিজ্ঞানটা আয়ত্ত করতে পারলে, তার প্রয়োগ কৌশলটা আয়ত্ত করতে পারলে আপনারা জনগণকে এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক বোঝাতে পারবেন। আপনারা বোঝাতে পারবেন যে, মার্কসবাদের নামে বাকি পার্টিগুলো শুধুমাত্র শব্দগত পার্থক্য ছাড়া একই কথা বলে কী ভাবে জনগণকে ঠকাচ্ছে। এ জিনিস বুঝিয়ে এইসব দলের প্রভাব থেকে জনগণকে তখনই আপনারা মুক্ত করতে পারবেন, যখন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথার্থভাবে আপনারা আয়ত্ত করতে পারবেন।

তা ছাড়া আমাদের দল সঠিক কি না, সঠিক হলে কী ভাবে সঠিক এবং বিপ্লবকে আমরা কী ভাবে দেখছি এবং কী ভাবে করতে হবে, সেটা বুঝতে পারবেন এবং সেইভাবে বিপ্লবের প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

(নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষায় ভারতের পুঁজিবাদ বিরোধী বিপ্লব, পঞ্চম খণ্ড, শিবদাস ঘোষ রচনাবলি)