ট্রাম তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে পরিবহন দফতরে বিক্ষোভ

১ জুন দলের কলকাতা জেলা কমিটির উদ্যোগে ধর্মতলা ট্রাম ডিপো থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক হাজার মানুষের একটি মিছিল পরিবহন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। দাবি ছিল, গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ট্রাম তুলে দেওয়া চলবে না। পরিবেশবান্ধব, সস্তা, ঝুঁকিহীন এই যান ছাত্রছাত্রী, মহিলা, রোগী সহ বয়স্ক মানুষের অত্যন্ত উপযোগী। তবু রাজ্য সরকার এই ট্রাম পরিবহন ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের অজুহাত, ট্রাম ধীর গতির এবং যানজটের কারণ।

একটি ট্রামের গড় আয়ু ৬০-৭০ বছর। ট্রামের রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিবহন খরচ নামমাত্র এবং তা দূষণহীন। অন্য দিকে একটি সরকারি বাসের গড় আয়ু ৫-৮ বছর। ব্যাটারি চালিত যে বাসগুলি এখন চলে তার দাম কোটি টাকার বেশি এবং শুধু ব্যাটারির দাম ৬০-৭০ লক্ষ টাকা, যার গড় আয়ু মাত্র ২ বছর। কলকাতার রাস্তা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। তাই শহরকে বাঁচাতে যখন দরকার ছিল আরও বেশি গণপরিবহনে জোর দেওয়া তখন অটোমোবাইল ব্যবসায়ীদের চাপে কিছু অসাধু আমলা ও মন্ত্রী-নেতা ট্রাম পরিষেবাকে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সিপিএম সরকারের জমানায়, নব্বইয়ের দশকে ট্রাম কোম্পানি বাস নামিয়ে এবং টালিগঞ্জ ডিপোর জমি আবাসন ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, আজ তৃণমূল সরকারের আমলে পুরো ব্যবস্থাটিকেই তুলে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র পূর্ণ হচ্ছে।

সবারই জানা, ট্রাম লাইনের উপরে ঘন্টার পর ঘন্টা বাইক, অটো, রিক্সা বা সরকারি-বেসরকারি অকেজো বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বহু ক্ষেত্রে লরির লোডিং, আনলোডিং চলে পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে। রাস্তার দুদিকে ট্রাম লাইন পর্যন্ত পার্কিংয়ে ঠাসা। তবু ট্রাম নাকি যানজটের কারণ!

এ দিন এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় পরিবহন মন্ত্রী স্বীকার করেন, কিছু রুটে সরকার ট্রাম চালাতে চাইলেও ট্রাফিক পুলিশের বাধায় তা কার্যকর করা হচ্ছে না। কী অদ্ভুত যুক্তি, জনগণের ভোটে যে সরকার নির্বাচিত হয় তার পরিচালক তবে কি ট্রাফিক পুলিশ? আমাদের দল মনে করে পুলিশ-কর্পোরেশন ও কিছু নেতা-মন্ত্রীর অশুভ আঁতাতের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই গণপরিবহন ব্যবস্থা আমাদের রক্ষা করতেই হবে। তা না হলে পরিবেশ সহ দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ মানুষের বিপদ আরও বাড়বে। প্রতিনিধিদল মন্ত্রীকে জানান, নাগরিকরা ট্রাম চালুর পক্ষে। প্রতিদিন মহানগরীর রাজপথে দলের উদ্যোগে যে স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে এই মত তাঁরা জানিয়ে চলেছেন। তাই ট্রাম তুলে দেওয়ার অর্থ জনমতের বিপক্ষে যাওয়া। মন্ত্রী আপাতত কিছু রুটে ট্রাম চালু করার কথা জানান।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন কলকাতা জেলা সম্পাদক কমরেড সুব্রত গৌড়ী ও রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড কিসান প্রধান। কমরেড গৌড়ী বলেন, সরকার ট্রাম রুটগুলি দ্রুত চালু না করলে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।