সীমাহীন বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে দুর্বার আন্দোলনে আশা কর্মীরা

কোচবিহার

২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘আশা’ প্রকল্প চালু করেছিল৷ শিশু ও প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু বন্ধ করা এবং নিরাপদ মাতৃত্ব এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য৷ আশাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে রাত দিনের তোয়াক্কা না করে সরকারের ঘোষিত উদ্দেশ্যকে সফল করতে কাজ করে চলেছেন৷ এই কাজের মধ্য দিয়ে তাঁরা আজ শিশুমৃত্যু, মায়ের মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই প্রকল্পের ব্যাপক রদবদল করে প্রকল্প খাতে বরাদ্দ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে স্বেচ্ছাকর্মীর নাম দিয়ে এদের কাজ করানো হলেও ন্যায্য মজুরি তো দূরের কথা নূ্যনতম মজুরিটুকুও সরকার দিচ্ছে না৷

আশাকর্মীরা গ্রামীণ জনসাধারণ ও মায়েদের সচেতন করার ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা নানা মহল থেকে প্রশংসা পাচ্ছেন৷ কিন্তু আশাকর্মীরা শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতিটুকুও পাচ্ছেন না, বেতন তো নয়ই৷ স্বাস্থ্য সহ এদের প্রায় ৪০ ধরনের কাজ করানো হয়৷ সাম্মানিক ভাতা দেওয়ার কথা বলে দপ্তর বহির্ভূত বহু অদ্ভুত রকমের কাজও করানো হয়৷ কাজের কোনও সময়সীমা নেই, ২৪ ঘন্টাই প্রস্তুত থাকতে হয় কাজের জন্য৷ এদের উপযুক্ত ট্রেনিংও দেওয়া হয় না৷ কয়েকটি মামুলি ট্রেনিং দিয়ে অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিকভাবে অনেক কাজ করতে বাধ্য করানো হয়৷ এই অব্যবস্থার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে তাঁদের কাজ রূপায়ণ করতে না পারার ফলে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারা নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আশাকর্মীদের৷ শিশুমৃত্যু ঠেকানোর জন্য সরকারি নির্দেশ, গর্ভবতী

তমলুক

মায়েদের নিকটতম সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে প্রসবের জন্য৷ আশাকর্মীরা বিনিময়ে পাবেন সামান্য অর্থ৷ গভীর রাতেও আশাকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে মায়েদের উৎসাহিত করে পাহারা দিয়ে নিয়ে যান হাসপাতালে৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের দুর্বল পরিকাঠামো, সাহায্যকারী ডাক্তার–নার্সদের উদাসীনতা ও দুর্ব্যবহার পেয়ে বিপদের আশঙ্কায় আসন্নপ্রসবা মাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হন বেসরকারি নার্সিং হোমে৷ ফলে গর্ভবতী মহিলাকে দীর্ঘ কয়েক মাস পরিষেবা দেওয়ার পরও সরকারি ব্যর্থতার জন্য আশাকর্মীর প্রাপ্তি হয় শূন্য৷

রাজ্যের  মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নানা সভায়, প্রশাসনিক মিটিংয়ে এবং ভোটের আগে বহু আশার কথা ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে ২০১৩ সালে ১৫০০ টাকা নামমাত্র বেতন ঘোষণা করেছেন যা  সরকার নির্ধারিত নূ্যনতম মজুরিকেও লজ্জা দেয়৷  রাজ্যে একই ধরনের কাজ করে ক্যাজুয়াল কর্মী, কনট্র্যাকচুয়াল কর্মী,  ডেইলি  রেটেড  কর্মীরা  যে  নূ্যনতম  মজুরি  পান,  অন্তত সেটাও পাওয়ার দাবি রাখেন আশাকর্মীরা৷ বর্তমানে রাজ্যের দেয় ২০০০ টাকা সহ আইটেম অনুযায়ী কাজের ভিত্তিতে এক এক জন কর্মী  খুব  বেশি হলে  মাসিক  ২৫০০  থেকে  ৩০০০  হাজার  টাকা পান৷

এনএইচএম থেকে দেওয়া যে ফরম্যাটের উপর ভিত্তি রে আশাকর্মীরা কাজ করেন তা এমনভাবে তৈরি যাতে বেশি বেশি করে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যায়৷ সিএইচজি, লিঙ্ক ম্যান, টিডির মতো স্বাস্থ্যকর্মীর পদ অবলুপ্ত করে সেই কাজগুলো আশাকর্মীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এ ছাড়াও

বসিরহাট

জেলা, ব্লক, পঞ্চায়েত আধিকারিকরা তাদের দপ্তরের নানা কাজও আশাকর্মীদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন৷ কিন্তু কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক তো দূরের কথা, যা পাচ্ছেন তাতে ওই কর্মীর এক মাসের হাসপাতাল ও কাজে যাতায়াত খরচও চলে না, সংসার খরচ তো দূরের কথা৷

গত ৯ অক্টোবর স্বাস্থ্যভবন থেকে এক সার্কুলার জারি করে ফরম্যাটের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইটেম কমিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে তাদের বরাদ্দ অর্থও কমে যায়৷ এই অবস্থায় রাজ্যের সমস্ত জেলায় প্রান্তে–প্রত্যন্তে আশাকর্মীরা পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন৷ জেলায় জেলায় জেলায় সিএমওএইচ, বিএমওএইচ অফিস ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ, ফরম্যাট জ্বালানো – এই ধরনের আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন৷ অবশেষে সরকার আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়েছে পুরনো নিয়মে ফিরে যেতে৷ সংগঠিত আন্দোলন আজ আশাকর্মীদের মনোবল ও ভরসা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বাকি দাবিগুলি আদায়ের উদ্দেশ্যে আশাকর্মীরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে ১৮ ডিসেম্বর কলকাতায় ডাক দিয়েছেন বিশাল সমাবেশের৷