এতদূর থেকে এসেছি কি বিশ্রাম নিতে

মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তিতে ১৭ নভেম্বর রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইল কলকাতা৷

বাইরের রাজ্যগুলি থেকে আসা হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে বেশিরভাগই সমাবেশ শেষে ফিরে যান৷ আবার ১৮ নভেম্বর সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত ভারত ও বাংলাদেশের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েক হাজার মানুষ থেকে যান৷ ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু করে ১৭ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আগত অংশগ্রহণকারীদের থাকার জন্য কলকাতার বিভিন্ন ধর্মশালা ভাড়া নিয়ে ক্যাম্প করা হয়৷ জাত–পাত–ধর্ম–বর্ণ-ভাষা-প্রদেশ প্রভৃতি সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মিলিত হয়েছিলেন এই ক্যাম্পগুলিতে৷

১৭ নভেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে দলের কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে অসংখ্যবার রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন৷ প্রচারকার্যের পাশাপাশি সংগৃহীত হয়েছে অর্থও৷ অসংখ্য মানুষ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন৷ অনেকে একাধিকবারও দিয়েছেন৷ সংগৃহীত এই অর্থেই ক্যাম্পগুলিতে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ ফলে খাবার ছিল অত্যন্ত সাধারণ মানের৷ সকল অংশগ্রহণকারীই এই খাবার অত্যন্ত আনন্দ ও তৃপ্তির সাথে গ্রহণ করেছেন৷

৩–৪ দিন ট্রেনে ভ্রমণ করে গভীর রাত্রে বা ভোরে ক্যাম্পে পৌঁছানো মানুষগুলির শারীরিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়৷ সকল তন্ত্রী যখন চাইছে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে তখন ক্লান্তি সরিয়ে রেখে সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের তৈরি করছিলেন সমাবেশে যোগ দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের বক্তব্য শোনার জন্য৷ দেহে মনে নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছিলেন সম্মিলিত ভাবে নিজেদের ভাষায় গান গেয়ে, মত বিনিময় করে৷ কোনও ক্লান্তি, অসুস্থতা কারও প্রাণোচ্ছলতাকে স্তিমিত করতে পারেনি৷

হরিয়ানা রাজ্য থেকে এসেছিলেন একজন বৃদ্ধ কৃষক৷ তিনি বেশ অসুস্থই ছিলেন, বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে৷ ওই রাজ্যের নেতা তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বললেন৷ কৃষক কর্মীটি বললেন, এত দূর থেকে এসেছি কি বিশ্রাম নিতে? এখন আমি সমাবেশেই যাব৷

বিনানি ধর্মশালায় ছিলেন কয়েকজন  নিরাপত্তারক্ষী ও কেয়ারটেকার৷ একজন বললেন, আমি এখানে ৫৬ বছর রয়েছি৷ এখানে সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি সহ বিভিন্ন দলের কর্মীরা নানা সময়ে থাকেন৷ ওঁদের মধ্যে আমরা দেখেছি চূড়ান্ত উচ্ছৃঙখলতা৷ ওঁরা থাকলে ধর্মশালার বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করেন৷ চলে গালিগালাজ৷ আমরা তটস্থ হয়ে থাকি৷ আর আপনাদের দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত৷ এত মানুষ এখানে এসেছেন৷ সকলেই অত্যন্ত ক্লান্ত, বিধ্বস্ত৷ অত্যন্ত সাধারণ খাবার এঁরা খাচ্ছেন, কষ্ট করে থাকছেন, কিন্তু কোথাও কোনও হট্টগোল নেই, সকলেই শান্ত৷ কারও মধ্যে কোনও রাগ নেই, নেই বিরক্তি৷ এত মানুষের থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানালেন তাঁরা৷