এআইডিএসও–র সদস্য সংগ্রহে বিপুল সাড়া

তোমাদের কাজ তোমরা করে যাও’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি স্কুল৷ ১৩ জুলাই জেলার এক ডিএসও কর্মীশুরুর সময়ে ওই স্কুলের গেটে দাঁড়ালেন সদস্য ফর্ম, বিদ্যাসাগরের ছবি ও বই হাতে৷ স্কুলটি মেদিনীপুর শহর ছাডিয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে৷ সিপিএমের সময় তাদের সন্ত্রাস, পরবর্তী সময়ে তৃণমুলের সন্ত্রাস ও বর্তমানে বিজেপি ও তৃণমূলের দ্বন্দ্বে দম বন্ধ করা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে সেখানে৷

বিদ্যাসাগরের দ্বি–শত জন্মবর্ষে ছাত্র আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে ৩১ আগস্ট থেকে সংগঠনের একাদশতম রাজ্য সম্মেলনকে সফল করার আহ্বান সংবলিত একটি ব্যানার স্কুলের গেটে বেঁধে দিয়ে সন্তপর্ণে শুরু হল সদস্য সংগ্রহের কাজ৷ কথা বলতে বলতে ওই স্কুলেরই একজন ছাত্র রাজি হয়ে গেল কর্মীটির সাথে দাঁড়িয়ে সদস্য সংগ্রহ করতে৷ হঠাৎ একজন অভিভাবক এসে জানালেন তিনি পরিচালন কমিটির সদস্য৷ বললেন, স্কুল গেটে দাঁডিয়ে এসব করা যাবে না৷ বচসা শুরু হল৷ তিনি অভিযোগ জানাতে গেলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে৷ এদিকে প্রার্থনার সময় হয়ে যাওয়াতে ছাত্ররা চলে গেল স্কুলের মধ্যে৷

কর্মীটি পরিস্থিতি বোঝার জন্য হাতে ছাত্র সংহতি প্রকাশনার বিদ্যাসাগরের বই ও ছবি নিয়ে ঢুকলেন প্রধান শিক্ষকের ঘরে৷ পৌঁছতেই প্রধান শিক্ষক বললেন, তোমাদের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ দায়ের হয়েছে এরপর একটু হেসে বললেন, এসব তোমাদের ভাবার দরকার নেই, তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও৷ বিদ্যাসাগরের বইটা নিয়ে বললেন, স্টাফ রুমে দেখ কোনও স্যার নেন কি না৷ তার পরে বললেন, তোমাদের আন্দোলন ফান্ডে টাকা নেবে না? সম্মতি জানালে বললেন, এখন নিলে একটু কম নিতে হবে, বাড়িতে এসো একটু বেশি করে দেব৷

স্কুল থেকে বেরিয়ে এসে দেখা গেল বিদ্যাসাগরের বই শিক্ষকরা নিয়েছেন ১০ কপি, ছাত্ররা সদস্য হয়েছে ৪৫ জন৷ গেটে বেঁধে রাখা ফ্লেক্সটা খুলতে যেতে বয়স্ক গেটকিপার বাধা দিয়ে বললেন, এমন সুন্দর একটা বিষয় আছে তুমি খুলে নিয়ে যাবে! তুমি যখন ছাত্রদের বলছিলে আমি সব শুনেছি৷ তুমি আমাকে ফ্লেক্সটা দিয়ে যাও আমি প্রতিদিন স্কুলের শুরুতে বাঁধবো আর ছুটির সময় খুলে নিয়ে যাব৷ অগত্যা রাখতেই হল৷

১৫ জুলাই৷ স্কুলের গেটে ওই কর্মীর সাথে আরও এক কর্মী গিয়েছিলেন প্রচারে৷ বাস থেকে নেমে দেখলেন সেই বয়স্ক গেটকিপার যত্ন করে বাঁধছেন সংগঠনের ফ্লেক্সটি৷ স্কুলে ছাত্র আসা শুরু হতেই সেই গেটকিপার ছাত্রদের ডেকে এনে তাদের দেখিয়ে বললেন, দাদারা কী বলছে শোনো৷

সেদিন এই স্কুল গেটে সদস্য হয় ৪৮ জন৷ ফেরার সময় গেটকিপার বললেন, আমি এই ফ্লেক্সটা সম্মেলনের পরেও বাঁধলে হবে? আমাদের কমরেডরা সম্মতি জানিয়ে বললেন, তখন আমরা অন্য আরেকটি ফ্লেক্স দিয়ে যাব৷

ওনারা যা করছেন ভালো করছেন’

ঝাড়গ্রামের একটি হাই স্কুল গেটে ডিএসও–র পক্ষ থেকে সদস্য সংগ্রহ এবং বিদ্যাসাগরের ছবি নিয়ে প্রচার হচ্ছিল৷ এমন সময় প্রাক্তন এবিটিএ নেতা এক শিক্ষক স্কুলে ঢোকেন৷ ছাত্রকর্মীদের দেখেই বুঝতে পারেন ডিএসও কিছু একটা করছে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওনার মোটর সাইকেল ভিতরে রেখে এসে গেটকিপারকে বলেন, গেটে এত ভিড় কিসের? আপনি কী করছেন? ভিড় কমান, কাউকে দাঁড়াতে দেবেন না৷ বয়স্ক গেটকিপার বলেন, গেটের দায়িত্ব আমার, আমি দেখছি৷ আপনি ভিতরে যান৷ ওনারা যা করছেন ভালো করছেন৷ স্কুলের ভিতরে যে ছাত্ররা গণ্ডগোল করে, যা আপনারা সামলাতে পারেন না, ওদের কথাগুলো শুনলে তারা আর মারামারি করবে না৷

উনি চলে যাওয়ার পর আমাদের বলেন, তোমরা যা করছ করো, গেট দেখার দায়িত্ব আমার, তোমাদের কোনও ভয় নেই৷

আমাকে আজ ৩ টাকা দিলেই হবে’

২৭ জুলাই৷ দু’জন ডিএসও কর্মী পুরুলিয়ার একটি স্কুলে সদস্য সংগ্রহ করছিল৷ স্কুল গেটে কুলফি বিক্রি করেন যিনি তিনি অনেকক্ষণ থেকে ডিএসও কর্মীদের লক্ষ করছিলেন, কথা শুনছিলেন৷ সেই সময় ১৩ জন  ছাত্র কুলফি কিনতে এল৷ কুলফির দাম ৫ টাকা৷

কুলফি বিক্রেতা সমবেত ছাত্রদের বলেন, তোমরা ২ টাকা করে দিয়ে ওদের সদস্য হও৷ আমাকে আজ ৩ টাকা দিলেই হবে৷ উপস্থিত সকল ছাত্র সদস্য হয়৷ তারপর উনি সংগঠক দু’জনকেও কুলফি খাওয়ান৷ এই ঘটনা বলতে গিয়ে ওই কর্মীদের একজন কেঁদে ফেলেন৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ১ সংখ্যা)