২০২৩ঃ বিশ্ব জুড়ে শ্রমজীবী মানুষ আন্দোলনে

গ্রেট ব্রিটেন

পুঁজিবাদ যত সঙ্কটগ্রস্ত হচ্ছে, পুঁজিপতি শ্রেণি ততই সেই সঙ্কটের বোঝা শ্রমজীবী মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন পৃথিবী জুড়েই হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ বাড়ছে জনগণের মধ্যে। আর সেই ক্ষোভ সর্বত্রই বিক্ষোভের আকারে ফেটে পড়ছে। বাদ যাচ্ছে না তথাকথিত উন্নত দেশগুলিও। ২০২৩ সাক্ষী আছে দেশে দেশে এমন অসংখ্য বিক্ষোভ আন্দোলনের। প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত নেতৃত্বের এবং সঠিক রাস্তার। সংগ্রামী বামপন্থাই যে সেই রাস্তা তা-ও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।

ফ্রান্সঃ অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করার প্রতিবাদে উত্তাল হয় ফ্রান্সের রাজপথ। ১৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ-রেল-শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের দশ লাখেরও বেশি কর্মচারী ধর্মঘট পালন করেন, রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। ২৩ মার্চ বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা বেতন বৃদ্ধি ও কাজের নিরাপত্তার দাবিতে শুরু করেন সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট। দেশজুড়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ৫০০০ মেগাওয়াট কমে যায় এই কর্মবিরতির প্রভাবে।

গ্রেট ব্রিটেনঃ বিদ্যুৎ ও রেল দপ্তরের কর্মী, নার্সিং ও প্যারামেডিকেল পেশার সাথে যারা যুক্ত, দমকল কর্মী এবং শিক্ষক– এই ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ধর্মঘট করাকে বেআইনি ঘোষণা করে নতুন আইন আনে সরকার। ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই অগণতান্ত্রিক আইনের প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনের শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ ধর্মঘট পালন করেন।

৮ মার্চ পরিবহন দপ্তরের দশ হাজার কর্মী সহ ছাত্র ও শিক্ষকদের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত হয় লন্ডন শহরের বুকে।

১৩ থেকে ১৫ মার্চ নবীন ডাক্তাররা বেতন বৃদ্ধি ও কাজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং কাজের চাপ কমানোর দাবিতে ৭২ ঘন্টা ধর্মঘট পালন করেন।

১৫ মার্চ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পেনশন কমানোর প্রতিবাদে চল্লিশ হাজারেরও বেশি প্রমিক যোগ দিলেন ‘মার্চ টু লন্ডন’ পদযাত্রায়।

মার্চের ১৫ এবং ১৬ তারিখ লন্ডনের সাংবাদিকরা ধর্মঘট করেন।

১৫ থেকে ১৮ মার্চ, পরিবহন দপ্তরের কর্মী এবং গাড়ি চালকরা পেনশনের দাবিতে এবং ছাঁটাই ও কাজের পরিবেশের ক্রমাবনতির প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেন।

জার্মানিঃ ‘জয়েন্ট ফোরাম’ সংগঠনের শ্রমিকরা মার্চ এবং এপ্রিল মাসে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দফায় দফায় ধর্মঘট করেন।

মার্চের শুরুতে অনির্দিষ্টকাল ব্যাপী ধর্মঘটের মধ্যে দিয়ে ডাকবিভাগের এক লক্ষ ষাট হাজার কর্মী ১১থেকে ২০ শতাংশবেতন বৃদ্ধির দাবি আদায়ে সফল হন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ ১৫ সেপ্টেম্বরথেকে অটোমোবাইলক্ষেত্রের ১৩০০০ কর্মীবেতন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের ন্যায্য সুযোগ সুবিধা ফিরিয়ে আনা এবংপেনসনের দাবিতে ধর্মঘট করেন।

কানাডাঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, জীবনযাত্রা এবং কাজের পরিবেশের মানোন্নয়নের দাবিতে চল্লিশ হাজার সরকারি কর্মীর এক বিরাট মিছিল মন্ট্রিল অভিমুখে যায়।

ঘানাঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির ক্রম অবনতির প্রতিবাদে সেপ্টেম্বরে বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

গ্রিসঃ ২ মার্চ, রেলের অনুপযুক্ত পরিকাঠামো এবং অপ্রতুল কর্মীসংখ্যার প্রতিবাদে রেলকর্মীরা ধর্মঘট করেন। দৈনিক কাজের সময় বাড়িয়ে ১৩ ঘন্টা করার প্রতিবাদে ২১ সেপ্টেম্বর গ্রিস জুড়ে ধর্মঘট পালন করেন সরকারি কর্মীরা।

বেলজিয়ামঃ ধর্মঘটের অধিকারকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রস্তাবিত বিল এনেছে বেলজিয়াম সরকার। এর প্রতিবাদে ১০ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ দেখান ৫ অক্টোবর।