লেনিনকে শ্রদ্ধা জানাতে উপচে পড়ল শহিদ মিনার ময়দান

শহিদ মিনার ময়দান। ২১ জানুয়ারি

মানব ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে যে স্বল্প সংখ্যক মহান চরিত্র চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন, মার্ক্স-এঙ্গেলসের সুযোগ্য ছাত্র ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন তাদের অন্যতম। বলছিলেন, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। ২১ জানুয়ারি কলকাতার শহিদ মিনার ময়দান উপচে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়া লক্ষ মানুষের সমাবেশ তখন গভীর মনোযোগী। সকলেই বুঝে নিতে চাইছেন উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের তাৎপর্য।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ

কয়েকদিন ধরে চলছে টিপটিপ বৃষ্টি, ঠাণ্ডা হাওয়া। চাষিদের চিন্তা ফসল কতটা নষ্ট হবে তা নিয়ে। অনেকেরই ভাবনা– সমাবেশ সফল হবে তো? চারিদিকে যে উন্মাদনার পরিবেশ রামমন্দির নিয়ে তার মধ্যে মানুষ কি আসবেন? দেখা গেল আশঙ্কা একেবারেই অমূলক– সভা শুরু হয়ে গেছে, তবু মাঠে মানুষ আসার বিরাম নেই। মিছিল ঢুকেই চলেছে। কেউ এসেছেন ট্রেনে, এলাকা থেকে চাঁদা তুলে বাস, ম্যাটাডোর ভাড়া করে এসেছেন অনেকেই। আসতে যে তাঁদের হবেই! লেনিন যে জড়িয়ে আছেন মেহনতি মানুষের জীবনের প্রতিটি ছন্দে, জীবনসংগ্রামের প্রতিটি ওঠাপড়ায়। বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মেহনতি মানুষের নিত্যদিনের জীবনযন্ত্রণা, কান্না-হাসি, তাদের চোখের জল মোছানোর কঠিন সংগ্রাম থেকে তাদের জীবনের শান্তির কোমল স্বপ্ন– এ সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছেন লেনিন। তাই তো তাঁকে স্মরণ করতে, শ্রদ্ধা জানাতে মাঠ জুড়ে এত মানুষের জমায়েত। এ সমাবেশ ঘোষণা করছে এক অমোঘ প্রত্যয়।

এই মহা সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন, একেবারে দিন আনা-দিন খাওয়া খেতমজুর, গ্রাম্য গৃহবধূ, ঠিকা শ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, মোটর ভ্যান চালক, পরিচারিকার কাজ করা শ্রমজীবী মহিলা, আইসিডিএস-আশার মতো স্কিমের কর্মী থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ছাত্র, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনজীবী, সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রের অফিস কর্মচারী মধ্যবিত্ত। এই সমাবেশে আসার জন্য দলের কর্মী-সমর্থকরা বিগত কয়েক মাস ধরে আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু থেকে শুরু করে একেবারে রাস্তার পথচলতি মানুষের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন লেনিনের কথা। তাদের থেকে তিল তিল করে সংগ্রহ করেছেন অর্থ সাহায্য। এই সমাবেশে মাখা আছে তাঁদের সকলের শ্রম, ঘাম, স্বপ্ন। লেনিনের মহান আদর্শের আকর্ষণ তো আছেই, অন্যদিকে সে ডাক পৌঁছেছে লেনিনের যথার্থ উত্তরসাধক শিবদাস ঘোষের হাতে গড়া ভারতের একমাত্র সাম্যবাদী দল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর হাত ধরে। না এসে থাকা যায় কি!

কমসোমল বাহিনীর গার্ড অফ অনার

মঞ্চের কাছাকাছি বাঁশের বেড়া ঘেঁষে এসে দাঁড়ালেন এক যুবক। পিঠ থেকে নামিয়ে রাখলেন তাঁর বিরাট বোঝা। কমরেড প্রভাস ঘোষ তখন বলছেন, ভোটে সরকার পরিবর্তন হয়, রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না, তা হয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। সেই বিপ্লব করেছিলেন কমরেড লেনিন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে মানুষের উপর মানুষের শোষণ ছিল না। দারিদ্র ছিল না, ভিখারি ছিল না, পতিতাবৃত্তি ছিল না। শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন ছিল বিনামূল্যে। যুবক শুনছেন এক নতুন দুনিয়ার কাহিনী। বসে পড়লেন সামনের লাল কার্পেটের উপর। এ যে তাঁর নিজের জীবনের স্বপ্ন। এমন সমাজ কবে তৈরি হবে! সমাবেশে যোগ দিতে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছেন পারুলরা, কেউ আশা কর্মী, কেউ আইসিডিএস কেউ বা গ্রামীণ খেতমজুর, গরিব চাষি। এসেছেন, রাজেশ রূপকরা, গ্রামীণ কর্মঠ যুবক কয়লা খাদানে, পাথর খাদানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন কাটে। তাঁরা বলছেন, আমরা গত ৫ আগস্ট স্মরণীয় ব্রিগেড সমাবেশে এসেছিলাম। দেখেছিলাম, জনসমুদ্রে দুর্যোগ হার মেনেছিল। এবারেও এসেছি, হার মেনেছে দুর্যোগ।

মঞ্চের লাল পতাকা মাথা উঁচু করে উড়ছে। মেহনতি মানুষের বিজয় ঘোষণার গর্ব তার পরতে পরতে। মাঝে ঢেউ খেলে গেছে আকাশছোঁয়া পতাকা, তার মাঝখান থেকে এগিয়ে আসছেন যেন কমরেড লেনিন।

শুরু হল সভার কাজ। পূর্ব ঘোষিত সভাপতি দলের পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য অসুস্থ, তাই দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু। মহান নেতার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করলেন সভাপতি এবং প্রধান বক্তা দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। লেনিন স্মরণে সঙ্গীত পরিবেশনের পর এগিয়ে এল কিশোর কমিউনিস্ট বাহিনী কমসোমল। একদিন লেনিনই সোভিয়েত ইউনিয়নের বুকে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘কমসোমল’। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদকে ভারতের মাটিতে যিনি বিশেষীকৃত রূপ দিয়েছেন সেই কমরেড শিবদাস ঘোষ এ দেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কমসোমল। কমসোমল সদস্যদের হাতে ধরা রক্তপতাকা বিপ্লবী হিসাবে গড়ে ওঠার সংগ্রামের শপথ ঘোষণা করে গেল।

প্রথমেই বক্তব্য রাখলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেরালা রাজ্য সম্পাদক কমরেড জয়সন জোসেফ। তিনি বলেন, মানবজাতির মুক্তি সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় রচনা করেছেন লেনিন। বিশ্বের সমস্ত শান্তিকামী মানুষকে আজ স্বীকার করতেই হবে, সমাজতান্ত্রিক শিবির থাকলে এ ভাবে প্যালেস্টাইনের ১০ হাজার শিশু সহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে খুন করতে পারত না ইজরায়েলি শাসকরা। ১১ কোটি রাষ্ট্রহীন উদ্বাস্তু দেখতে হত না এই পৃথিবীকে। এই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র দুনিয়াতে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান লেনিন। তিনি বলেন আজ বিজেপি একচেটিয়া মালিকদের কর্পোরেট কোম্পানির স্বার্থবাহী নীতি নিয়ে চলছে। বেকারত্ব এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বহু যুবক আজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে ছুটছে। তারা মানবপাচার চক্রের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, বিজেপি যেমন কর্পোরেটদের স্বার্থে মানুষের ওপর শোষণ চালাচ্ছে, একইভাবে কেরালার সিপিএম পরিচালিত রাজ্য সরকারও আদানি-আম্বানিদের মতো একচেটিয়া মালিকদের স্বার্থে নানা পদক্ষেপ করছে।

 

পলিটবুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য স্মরণ করেন, এই শহিদ মিনার ময়দানেই মহান লেনিনের জন্মশতবর্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি কমরেড শিবদাস ঘোষ। তিনি বলেন, লেনিনের নাম চেতনা জাগায়, অনুপ্রাণিত করে। বিজেপির রামমন্দির, তৃণমূলের মন্দির-গির্জা-গুরুদ্বার-মসজিদে ঘোরা, কংগ্রেসের ন্যায়যাত্রা সবই ভোটের স্বার্থে। তিনি বলেন, লেনিনের শিক্ষা ভুলে গিয়ে বামপন্থী নামধারী একদল বামপন্থার মর্যাদাকে লাঞ্ছিত করে চলেছে।

প্রধান বক্তা কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, প্রচলিত ধারণা ছিল ধনী-গরিবের বৈষম্য চিরকাল ছিল, চিরকাল থাকবে। মার্ক্স দেখালেন এই চিন্তা ভুল। একদিন সমাজে বৈষম্য ছিল না, চিরকাল তা থাকবেও না। মার্ক্সের এই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিলেন লেনিন, রাশিয়ার বুকে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। লেনিন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটা নতুন সমাজ একটা নতুন সভ্যতা। সেই সভ্যতাকে দেখেই তার রূপকার লেনিন এবং তাঁর সুযোগ্য উত্তরসাধক স্ট্যালিনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, রম্যাঁ রল্যাঁ, বার্নার্ড শ-এর মতো মনীষীরা।

কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, সমাজতন্ত্র দাঁড়িয়ে ছিল ৮০ বছর। এই ব্যবস্থা মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দারিদ্র, নারীর ওপর চলা নির্যাতনের অবসান ঘটিয়েছিল। আজ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সাময়িক বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে এই মহান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অনুপস্থিতিতে বিশ্বের মেহনতি জনগণের ওপর প্রবল অত্যাচার নামিয়ে আনছে। দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণির অর্জিত অধিকারগুলি কেড়ে নিচ্ছে বুর্জোয়া শাসকরা। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি চাই, লেনিন দেখিয়েছিলেন একটা সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের রাস্তা কী। লেনিনের সংগ্রামের ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরে কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, এই সংগ্রাম সহজ ছিল না। একটা নতুন সভ্যতার জন্ম দিতে গিয়ে লেনিন দর্শন, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সংগঠন সব দিকে মার্ক্সবাদের ভাণ্ডারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লেনিনকে তীব্র লড়াই চালাতে হয়েছে। আজকের যুগটা যে সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগ, তা লেনিনই দেখিয়েছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদের রূপ তত্ত্বের আকারে তুলে ধরেন। এই বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদই যে যুদ্ধের জন্ম দেয় তা দেখিয়েছেন লেনিন।

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির প্রশ্নে কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, বিজেপির রাজত্বে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, ধনী গরিবের বৈষম্য ভয়াবহ হারে বেড়েছে। মধ্যবিত্তরা ক্রমাগত দারিদ্রের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে বিজেপির মানুষকে নতুন কিছু বলার নেই তাই তারা কখনও পুলওয়ামার নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে ভোটের কাজে লাগায় কখনও রামমন্দিরের হিড়িক তোলে। তিনি বলেন, ২২ তারিখ নব রামায়ণ লেখা হবে! রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘কবি তব মনোভূমি রামের জন্মস্থান’। অর্থাৎ কবির মনেই জন্ম রামের। বিবেকানন্দও রামকে ঐতিহাসিক চরিত্র বলেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাবরি মসজিদ তৈরির সময় তুলসীদাস জীবিত ছিলেন, তিনিও রামমন্দির ভাঙার কথা লিখলেন না কেন?

মঞ্চে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

কংগ্রেসের রাজনীতির প্রসঙ্গে কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, কংগ্রেসও রামমন্দির নিয়ে হিড়িক তুলেছে। তারাই বাবরি মসজিদের তালা খুলেছিল। কংগ্রেসও দাঙ্গা লাগিয়েছে, ভোটের স্বার্থে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে। বিজেপি কংগ্রেসের রামকে হাইজ্যাক করে ভোটের প্রতিযোগিতায় এখন এগিয়ে গেছে। মানুষকে ভাবতে হবে, রাম নাম করলেই কি তাঁদের মূল সমস্যাগুলো মিটে যাবে? আসলে এই সব নেতারা সবাই মিথ্যাবাদী, ভণ্ড, প্রতারক। ভোটের জন্য এরা সাম্প্রদায়িক মাদকতা ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষায় কমরেড শিবদাস ঘোষ ভারতের পরিস্থিতিকে সঠিক উপলব্ধি করে বলেছিলেন, এ দেশে পুঁজিবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই একমাত্র শোষণমুক্তি সম্ভব। সিপিআই, সিপিএম লেনিনের এই শিক্ষাকে না বুঝে ভারতের বিপ্লবের রাস্তাকেই বুঝতে ভুল করে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্লোগান তুলেছে। লেনিন দেখিয়েছেন, কমিউনিস্টরা পার্লামেন্টে যায়, নির্বাচনে যায় জনগণকে এর মোহ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। কিন্তু এ দেশে বৃহৎ বামপন্থী বলে পরিচিত সিপিআই-সিপিএম সেই শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে পার্লামেন্টারি রাজনীতিতেই ডুবে রয়েছে। কমরেড প্রভাস ঘোষ উল্লেখ করেন, লেনিনের শিক্ষার ভিত্তিতে কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছিলেন, একটা কমিউনিস্ট পার্টি ভোটে জিতে সরকারে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা অন্য বুর্জোয়া দলের মতো সরকার চালাবে না। তাদের সরকার গণআন্দোলন গড়ে তোলার পরিস্থিতি তৈরি করবে। যা ১৯৬৭ এবং ’৬৯-এর পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকারে থাকার সময় এস ইউ সি আই (সি) করে দেখিয়েছে।

কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, সিপিআই সিপিএম দীর্ঘ দিন ধরে যে অবাম রাজনীতির চর্চা করেছে, রাজনীতিতে যুক্তিহীনতা, গায়ের জোর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তাদের ৩৪ বছরের সরকার গণআন্দোলনের কোমর ভাঙতে চেয়েছে। এই সমস্ত কার্যকলাপ বিজেপি-আরএসএস-এর জমি তৈরিতে সাহায্য করেছে। তারা এখন মার্ক্সকেও মালা দেন গান্ধীজিকেও মালা দেন। তাদের একটা সমাবেশে লাল ঝান্ডার বদলে কোন ঝান্ডা উড়েছে মানুষ দেখেছে। পুরোপুরি জাতীয়তাবাদী পার্টিতে পরিণত হতে চাইছে তারা।

রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা সিপিএমের কায়দাতেই সরকার চালাচ্ছে। তাদের একাধিক মন্ত্রী-নেতা চুরির অভিযোগে জেলে বন্দি। সিপিএম আমলে চুরি একটু আড়ালে হতো এখন একেবারে খোলাখুলি চলছে। সিপিএম যত মদের দোকান খুলেছিল, তৃণমূল তার বহু গুণ বেশি খুলছে। দোকানদার ব্যবসায়ীরা বলেন আগে একজনকে তোলা দিতে হত, এখন দশজনকে দিতে হয়। তৃণমূল একই ভাবে গণআন্দোলনের ওপর হামলা করছে। ছাত্র-যুব, সরকারি কর্মচারী সকলের ওপর আক্রমণ করছে।

কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, শাসক দলগুলো মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তারা কিছু সামান্য সুবিধা ভিক্ষার মতো ছুঁড়ে দিয়ে মানুষের ভোট কিনতে চায়। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির প্রতিযোগিতা লেগে গিয়েছিল কে কত টাকা সুবিধার কথা ঘোষণা করতে পারে তা নিয়ে। তৃণমূলও একই কাজ করছে। তিনি বলেন, এই সময় দরকার ছিল এবং সুযোগও ছিল বামপন্থী ঐক্য গড়ে তুলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার। আমরাও চাই বামপন্থী ঐক্য। কিন্তু তার জন্য বামপন্থার লাইনেই তো চলতে হবে! তিনি ঘটনা তুলে দেখান কীভাবে এস ইউ আই (সি)-কে না জানিয়েই সিপিএম ৬ পার্টির ঐক্য ভেঙে দিয়েছে। চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি। কারণ তারা কংগ্রেসের সাথে ইন্ডিয়া জোটে গিয়ে ভোটের সুবিধা খুঁজছে। কিন্তু এনডিএ এবং ইন্ডিয়া দুটোই বুর্জোয়া জোট। আমরা চাই বিজেপি হারুক। কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্বে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা নতুন কী করবে? চাই বামপন্থার ভিত্তিতে আন্দোলনের ঐক্য। তাতে জনগণ জয়ী হবে।

কমরেড প্রভাস ঘোষ জনগণের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, দুটি পথ আছে– একটি ধ্বংসের, অন্যটি বাঁচার। যদি ভাবেন যা চলছে তাই চলতে থাকুক তা হলে এই দল ওই দলের পিছনে ছুটুন। না হলে এস ইউ সি আই (সি) যে রাস্তা দেখাচ্ছে তার পতাকাতলে সামিল হোন। আমরা শুধু মিটিং মিছিল করি না, চরিত্র গঠনের সংগ্রাম এই দলেই আছে। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এই দলকে সমর্থন করুন। আপনাদের সন্তানদের দিন, যাতে তারা এই দলের কর্মী হয়। তাতে তাদের উন্নত চরিত্র গঠিত হবে।

সভার সভাপতি কমরেড সৌমেন বসু ঘোষণা করেন, ব্যাপক বামপন্থী ঐক্য গড়ে না উঠলে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেব। আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের সুরের অনুরণনের মধ্য দিয়ে সভা শেষ হয়।