রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ফাঁস, আরও শক্ত করতে চায় বিজেপি সরকার

ব্রিটিশ সরকার ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমন করতে যে রাষ্ট্রদোহ আইন তৈরি করেছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর ধরে তা বহাল তবিয়তে সরকার বিরোধী প্রতিবাদকে দমন করতে কাজে লাগিয়েছে শাসকরা। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সেই আইনটিকে আরও কঠোর করতে চলেছে।

২০২২ সালে ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তথা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারাটির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এই আইনটি পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়। পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ধারায় আর কোনও মামলা নথিভুক্ত হওয়া উচিত নয় বলে জানায়। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে তারাও জামিনের আবেদন করতে পারবে বলে জানায়।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের এক বছর পর আইনটি পর্যালোচনা করে কেন্দে্রর বিজেপি সরকার গঠিত আইন কমিশন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারা বহাল রাখারই প্রস্তাব দিয়েছে। কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তির নেতৃত্বাধীন কমিশন ‘রাষ্ট্রদ্রোহের ক্ষেত্রে আইনের ব্যবহার’– এই বিষয়ের উপর যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়ালের কাছে জমা দিয়েছেন, তাতে আইনে কিছু সংশোধনীও চাওয়া হয়েছে। যেমন সরকার বিরোধী বক্তব্যে হিংসা উদ্রেকের ‘প্রবণতা’ দেখা গেলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলা যেতে পারে, হিংসাত্মক ঘটনা যে ঘটেছে তার প্রমাণের দরকার নেই। এতদিন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানোর প্রমাণেই একমাত্র শাস্তি হতে দেখা যেত, এখন শাস্তির জন্য হিংসাত্মক ঘটনার প্রবণতা বা ইচ্ছাই যথেষ্ট বিবেচিত হবে। কিন্তু প্রবণতার মতো একটা বিমূর্ত বিষয় মাপা হবে কী করে? এ ছাড়াও কমিশন কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়াতে চায়, তিন বছর থেকে বাড়িয়ে অন্তত সাত বছর। অর্থাৎ আইনটি আরও কঠোর করতে চায় কমিশন।

রাষ্ট্রদ্রোহিতা নিয়ে গত কয়েক বছরে গণপরিসরে এবং এই আইনটি নিয়ে আদালতে যা কিছু বিতর্ক হয়েছে, যে সব সংশয় ও আশঙ্কা সামনে এসেছে আইন কমিশন তার কোনও কিছুকেই আমল দেয়নি। এমনকি, আইন কমিশনের রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণেরও বিপরীত। সম্প্রতি একটি মালয়ালাম চ্যানেলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার নির্দেশ (৫ এপ্রিল ২০২৩) দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, সরকারের নিন্দা করা মানেই দেশদ্রোহিতা নয়। সরকারের নীতির সমালোচনা করলেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী বলা যাবে না। জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করে নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলা ঠিক না।

অথচ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারাটিতে বলা হয়েছে, লিখিত বা মৌখিক কোনও কথায় বা বাক্যে বা অঙ্গভঙ্গিতে বা অন্য কোনও ভাবে যদি এমন কোনও কিছু বোঝানো হয় যার দ্বারা ভারতে আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অবমাননা বা হিংসা ছড়ানো হতে পারে, তা হলে সেই ব্যক্তির শাস্তি হবে। শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। এই ধারাটি কি গণতন্ত্রের সঙ্গে মানানসই? সরকার কি সমালোচনার ঊর্ধ্বে? গণতন্ত্রের মূল কথাই তো বাকস্বাধীনতা।

রাজতন্ত্রের যুগে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করা হত। রাজার বিরুদ্ধে বলা মানেই ছিল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলা। ফলে রাজদ্রোহের শাস্তি ছিল মত্যুদণ্ড। এর বিরুদ্ধতা করে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েই এসেছে গণতান্ত্রিক শাসন, যেখানে বিরুদ্ধতার স্বরকে স্বীকৃতি দেওয়া গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের আচরণে কোথাও তার ছিটেফোঁটা আছে কি? তিনি আমেরিকায় গিয়ে ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে দাবি করে এলেন। আর এ দিকে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন কঠোর করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।

১৮৭০ সালে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার ‘সিডিশন’ বা রাজদ্রোহ আইন প্রণয়ন করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ, ১৮৫৯ এর নীলবিদ্রোহ এবং ১৮৬০ এর ওয়াহাবি আন্দোলন– ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর একটার পর একটা বিদ্রোহে আতঙ্কিত ব্রিটিশ গণবিক্ষোভ দমন করতে এই আইন আনে। স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে সংবিধান থেকে ‘সিডিশন’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১৯(১)-এ আর্টিকলে বাক-স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারাকে সযত্নে রেখে দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে কেদারনাথ সিং বনাম বিহার রাজ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই আইনটিকে বহাল রাখে। যদিও রায়ে বলা হয়, নিছক সরকারের সমালোচনা কখনও রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে বিবেচিত হবে না। অথচ ১৯৭৩ সালেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ১২৪-এ ধারা বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি প্রয়োগ করে বিনা ওয়ারেন্টে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকে কংগ্রেস সরকার যতদিন কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদ, উগ্রপন্থা প্রভৃতি দমনের অজুহাতে বহু ব্যক্তিকে এই আইনে গ্রেপ্তার করেছে। এই কংগ্রেসকেই এখন গণতান্ত্রিক শক্তি বলে জড়িয়ে ধরেছেন সিপিএম নেতারা।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে (২০১৫-২০২০) ৩৫৬টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ৫৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও আজ অবধি মাত্র ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা গেছে। এমনকি ১৪৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করার জন্য। ১৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করার জন্য। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার এমনই বাড়াবাড়ির স্তরে পৌঁছেছে, যাতে মনে হবে বিজেপি দলটিই বুঝি রাষ্ট্র আর এই দলের নেতারা সব রাষ্ট্রের এক একটি স্তম্ভ। আর দেশের নাগরিকরা সব বিজেপি নেতাদের প্রজা। নেতাদের অপকর্মের বিরোধিতাই রাজদ্রোহ।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেখা গেছে, শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ মামলাই ধোপে টেকেনি, বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিচারের প্রক্রিয়াটাই শাস্তি হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে, পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ জেতায় আনন্দ প্রকাশের অপরাধে তিনজন কাশ্মীরি যুবকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ৬ মাস বিচার চলার পর তারা বেকসুর মুক্তি পায়। বিচার শেষে আইনের চোখে অপরাধী না হলেও, ছ’মাস তাদের জেল খাটতে হয়।

২০১৮ সালে মণিপুরের সাংবাদিক ওয়াংখেম সমাজমাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি, আরএসএস এবং রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন বলে মণিপুর রাজ্যের বিজেপি সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে গ্রেপ্তার করে। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করে উত্তরপ্রদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন কংগ্রেস নেতা অজয় রাই এবং এমনকি উত্তরপ্রদেশেরপ্রাক্তন রাজ্যপাল আজিজ কুরেশি। ২০২০-র অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে গণধর্ষণে মৃত তরুণীর গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে, এই সিডিশন সহ বেশ কিছু দমনমূলক আইনের ধারা প্রয়োগ করে কার্যত বিনা বিচারে আটকে রেখেছিল বিজেপি সরকার। যে বিজেপি নিজেই একের পর এক দাঙ্গা লাগিয়ে বেড়াচ্ছে সেই দিল্লি দাঙ্গায় প্ররোচনার অভিযোগে এই আইনে দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখেছে জেএনইউ এর প্রতিবাদী ছাত্র উমর খলিদকে।

কংগ্রেস সরকারও পিছিয়ে নেই। ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকার এক প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার করেছে, কারণ তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ‘উত্তেজক’ লেখা লিখেছেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে মুম্বাইয়ে রবি রানা ও নবনীত রানা ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ করে গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন না তাঁরা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হনুমান চাল্লিশা গাইবার হুমকি দিয়েছিলেন। আবার তামিলনাডুতে ‘তামিল দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে একটি ‘তামিল পতাকা’ উত্তোলন করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সীমান নামক এক তামিল নেতাকে। ২০১৯-এ পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে বিস্ফোরণের ঘটনার পর সোসাল মিডিয়ায় যেসব তর্কবিতর্ক হয়েছিল তার মধ্যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হয়েছে কারণ, অভিযোগকারীদের মতে অভিযুক্তরা ‘পাকিস্তানের পক্ষে’ এবং ‘দেশবিরোধী’ মতামত প্রকাশ করেছেন। সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৩৭৫৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৮ তে ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীরা নিজেদের জমিজায়গা রক্ষার দাবিতে পাথালগড়ি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও এই আইন ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল।

পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ এই অস্ত্র প্রয়োগ করত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে। বালগঙ্গাধর তিলক, মহাত্মা গান্ধী, ভগৎ সিং সহ অসংখ্য নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। ঔপনিবেশিকতার মৌলিক চরিত্র নিপীড়নের মাধ্যমে শাসন। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের প্রতিটি ছত্রে এই চরিত্রের প্রকাশ। সরকারের প্রতি অপ্রীতি তৈরি হতে পারে, এমন কথা বলা বা লেখাই আইনত রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সে সময় নজরুলের কবিতা, শরৎচন্দ্রের পথের দাবী উপন্যাস, প্রেমচন্দের গল্প, চারণ কবি মুকুন্দদাসের গানের মতো যে কোনো রচনা, সঙ্গীত, সাধারণ সভা-সমিতির বক্তব্য সমস্ত কিছুকেই ‘সিডিশাস’ ছাপ মেরে নিষিদ্ধ করে দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট লেখক, শিল্পী, বক্তাদের গ্রেফতার করা ছিল ব্রিটিশ শাসনকালের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।

শরৎচন্দ্র তাঁর অনবদ্য শৈলীতে এই সিডিশন আইনকে তীব্র কষাঘাত করে লিখেছিলেন – ‘আজ এই দুর্ভাগা রাজ্যে সত্য বলিবার জো নাই, সত্য লিখিবার পথ নাই – তাহা সিডিশান। অথচ দেখিতে পাই, বড়লাট হইতে শুরু করিয়া কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই বলিতেছেন – সত্যকে তাঁহারা বাধা দেন না, ন্যায়-সঙ্গত সমালোচনা – এমনকি, তীব্র ও কটু হইলেও নিষেধ করেন না। তবে বত্তৃতা বা লেখা এমন হওয়া চাই, যাহাতে গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে লোকের ক্ষোভ না জন্মায়, ক্রোধের উদয় না হয়। চিত্তের কোনও প্রকার চাঞ্চল্যের লক্ষণ না দেখা দেয় – এমনি। অর্থাৎ, অত্যাচার-অবিচারের কাহিনী এমন করিয়া বলা চাই, যাহাতে প্রজাপুঞ্জের চিত্ত আনন্দে আপ্লুত হইয়া উঠে, অন্যায়ের বর্ণনায় প্রেমে বিগলিত হইয়া পড়ে এবং দেশের দুঃখ দৈন্যের ঘটনা পড়িয়া দেহ-মন যেন তাহাদের একেবারে স্নিগ্ধ হইয়া যায়। ঠিক এমনটি না ঘটিলেই তাহা রাজবিদ্রোহ।’ সাল-তারিখ না জানলে মনে হয় একেবারে আজকের ভারতে বসে লেখা।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এমন একটি স্বৈরাচারী আইন স্বাধীন ভারতে থেকে গেল কী করে? ভারত রাষ্ট্রের জন্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ব্রিটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক ভারত রাষ্ট্রটি তৈরিই হয়েছিল ভারতীয় সম্পদ লুঠ করার এবং তার বিরুদ্ধে যে কোনও প্রতিবাদ দমন করার যন্ত্র হিসাবেই। আপসের পথে ব্রিটিশদের হাত থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রটি দেশীয় পুঁজিপতিদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র। তাই ব্রিটিশ চলে গেলেও স্বাধীন ভারতে পুঁজিপতি শ্রেণির সেবক সব দলই ক্ষমতাসীন থাকার জন্য এই ব্রিটিশের তৈরি কুৎসিত কালা আইনটিকে অক্ষত রেখেই তার সুবিধা নিয়ে চলেছে।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করে এসেছি আমরা। ব্রিটিশ চলে গেছে অনেক দিন। স্বাধীন ভারতে সরকার পাল্টেছে অনেক বার। কিন্তু ‘আইনের জোরে সরকারের প্রতি ভালোবাসা’ তৈরি করার প্রয়াস পাল্টায়নি। তাই বর্তমান আইন কমিশন তাদের সুপারিশে জানিয়েছে, উপনিবেশিক যুগের আইন বলেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের সংহতির স্বার্থে ও মৌলবাদ মোকাবিলা করতে এই আইনের প্রয়োজন আছে। যেন শাসক ব্রিটিশ সেদিন দেশের সংহতির স্বার্থে ও মৌলবাদ মোকাবিলা করতেই এই আইন প্রণয়ন করেছিল! বিশ্বের বহু দেশ চরম দমনমূলক এই আইন বাতিল করেছে। ২০০৯ সালে ব্রিটেনেও রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল হয়েছে। অথচ পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসকের নিপীড়নের ধারাকেই, নানা ছলচাতুরি ও কুযুক্তির আড়ালে বহাল রাখতে চাইছে বর্তমান বিজেপি সরকার। বর্তমান ভারত রাষ্ট্র তথা ভারত সরকার ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে।