মহান নেতার শিক্ষা থেকে

 

‘‘এ কথা এখন প্রায় সকলেই স্বীকার করেন যে, সমাজের বর্তমান কাঠামোটা আজকের শাসকশ্রেণি বুর্জোয়াদেরই সৃষ্টি। বুর্জোয়াশ্রেণির যে বিশেষ উৎপাদন পদ্ধতি, যা মার্ক্সের সময় থেকে পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি বলে পরিচিত, তা সামন্তী ব্যবস্থার সাথে অর্থাৎ সামন্তী ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তিবিশেষ, একটা সমগ্র সামাজিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় সংস্থা যেসব বিশেষ সুবিধা পেয়ে এসেছে, তার সাথে এবং বংশগত সম্পর্কের অধীনস্ত যে সামন্ততান্ত্রিক সামাজিক কাঠামো, তার সাথে (সেই পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি) খাপ খাচ্ছিল না। বুর্জোয়াশ্রেণি সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙেছে এবং তার ধ্বংসস্তূপের উপর গড়ে তুলেছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা– যে সমাজব্যবস্থা হচ্ছে অবাধ প্রতিযোগিতার রাজত্ব, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইনের চোখে সমানাধিকারের রাজত্ব, সমস্ত পণ্যমালিক ও পুঁজিবাদের আশীর্বাদপুষ্ট বাকি সকলের রাজত্ব। এরপর থেকেই পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারল।

বাষ্প, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্র তৈরির যন্ত্র যখন থেকে পুরনো ধরনের কারখানাকে আধুনিক শিল্পে রূপান্তরিত করে দিল, তখন থেকে বুর্জোয়াশ্রেণির পরিচালনায় উৎপাদন শক্তি এমন দ্রুততায় ও এমন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কথা আগে কেউ কখনও শোনেনি। কিন্তু, পুঁজিবাদের বিকাশের সময় যেমন তার প্রভাবে পুরনো ধরনের উৎপাদন ও হস্তশিল্প আরও বিকশিত হয়ে গিল্ডের সামন্তী শৃঙ্খলের সঙ্গে সংঘাতে এসেছিল, ঠিক তেমনি আজকের আধুনিক শিল্পও তার আরও পরিপূর্ণ বিকাশের পর্যায়ে, সংঘাতে আসছে সেইসব সীমার সঙ্গে, যে সীমার মধ্যে পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি তাকে আবদ্ধ করে রেখেছে।

নয়া উৎপাদিকা শক্তি ইতিমধ্যেই উৎপাদন শক্তিকে ব্যবহার করার পুঁজিবাদী পদ্ধতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এবং উৎপাদিকা শক্তির সাথে উৎপাদন পদ্ধতির এই যে বিরোধ তা মানুষের মনের কল্পনায় সৃষ্ট আদিম পাপ ও স্বর্গীয় ন্যায়ের মধ্যে বিরোধের মতো কোনও বিরোধ নয়। আমাদের জানার বাইরে, এমনকি যারা এই সংঘাত সৃষ্টি করেছে, সেই সব মানুষদের অভিপ্রায় ও কর্ম নিরপেক্ষভাবেই, বাস্তব সত্য ঘটনা হিসাবে এই সংঘাত অবস্থান করছে। আধুনিক সমাজতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে চিন্তার ক্ষেত্রে এই বাস্তব সংঘাতেরই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। যে শ্রেণি এই সংঘাতে পীড়িত হচ্ছে, সর্বাগ্রে সেই শ্রমিক শ্রেণির মননজগতে এই সংঘাতের আদর্শ প্রতিফলন হচ্ছে সমাজতন্ত্র।”

সমাজতন্ত্রঃ কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক– ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস