ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন জনগণের সম্পদে পুঁজিপতিদের পকেট ভরানো

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন’ প্রকল্প ঘোষণা করে জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদগুলি কর্পোরেট সংস্থাকে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে তারা আগামী চার বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করবে। এই প্রকল্পে দেশের কোন কোন সম্পদ বিজেপি মন্ত্রীরা কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন? বরং জিজ্ঞাসা করা ভাল, দেশের কোন সম্পদটা বিজেপি নেতারা বিক্রি করতে বাকি রাখছেন? রেল, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহণ, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, ২৫টি বিমানবন্দর, জাহাজবন্দর, স্টেডিয়াম সহ আরও বহু সম্পদ রয়েছে এই তালিকায়। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে টোল আদায় ও দেখাশোনার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। রেলের ৪০০টি স্টেশন, ৯০টি দূরপাল্লার ট্রেন, দার্জিলিং সহ পাঁচটি টয় ট্রেন, ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, কোঙ্কণ রেলওয়ে কলোনি ও রেলের স্টেডিয়াম বেসরকারি সংস্থা ব্যবহার করে মুনাফা তুলবে। হাওড়া সহ ১২টি ক্লাস্টারের ১০৯ জোড়া ট্রেন চালাবে বেসরকারি সংস্থা। এর দ্বারা কীসে কত আয় হবে তার ফিরিস্তিও সরকার প্রকাশ করেছে।

দেশের সম্পদ বিক্রির অধিকার বিজেপিকে কে দিয়েছে

বিজেপি নেতারা যে দেশের বহুমূল্য সম্পদগুলি আম্বানি আদানিদের মতো মুষ্টিমেয় একচেটিয়া পুঁজিপতির হাতে তুলে দিচ্ছেন, এই অধিকার তাঁরা কোথায় পেলেন? দেশের মানুষ কি তাঁদের এই অধিকার দিয়েছে? তা হলে বিজেপি নেতারা দেশের মানুষের সাথে এমন প্রতারণার রাস্তায় যাচ্ছেন কেন? কারণ, তাঁরা একচেটিয়া পুঁজিপতিদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, তাঁদের ক্ষমতায় বসালে তাঁরা অত্যন্ত চতুরতা এবং দক্ষতার সাথে তাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তুলে দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করবেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তির এই লাগামহীন বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষের থেকে, শ্রমিক-কর্মচারীদের থেকে প্রতিবাদ হতে পারে, এটা বুঝে সরকার একটা ডাহা মিথ্যে প্রচার করছে– তারা নাকি এই সব সম্পত্তি পুঁজিপতিদের একেবারে দিয়ে দিচ্ছে না, মালিকানা নাকি সরকারের হাতেই থাকছে, তাদের কেবল ব্যবহার করতে দিয়ে সরকার রাজস্ব আদায় করবে মাত্র। যদি রাজস্ব বাড়ানোই সত্যি বিজেপি সরকারের লক্ষ্য হত, তবে ঋণের নামে ব্যাঙ্কগুলির যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পুঁজিপতিরা গায়েব করে দিয়েছে সেগুলি উদ্ধারে তারা উদ্যোগী হত। বড় বড় শিল্পপতি-পুঁজিপতিরা যে বিপুল পরিমাণ কালো টাকার সমান্তরাল অর্থনীতি দেশে চালাচ্ছে সেই টাকা উদ্ধারে নামত। বড় বড় শিল্পপতি-পুঁজিপতিরা যে হাজার হাজার কোটি টাকা করফাঁকি দিয়ে চলেছে, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে, সে-সব আটকানোর চেষ্টা করত। দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিত। কয়লা, টু-জি স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ গেমস, রাফাল প্রভৃতি অজস্র বড় বড় দুর্নীতিতে জনগণের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে রাঘব বোয়ালেরা। এদের কাউকেই ধরার এবং শাস্তি দেওয়ার ধারকাছ দিয়েও যাচ্ছে না সরকার। বরং এমন সব দুর্নীতি এবং লুঠতরাজ অবাধে চলতে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে শিল্পপতি-পুঁজিপতিদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পারস্পরিক স্বার্থে নীতি এবং আইন প্রণয়ন ও তার রূপায়ণ বিশ্বজুড়ে এখন এমন এক সাধারণ চরিত্র নিয়েছে যাকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদরাই নাম দিয়েছে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বা স্যাঙাৎতন্ত্র। ভারতেও বিজেপির নেতৃত্বে এই স্যাঙাৎতন্ত্র জাঁকিয়ে বসেছে। ফলে রাজস্ব বাড়ানোর কথাটা এখানে অজুহাত মাত্র। আসল উদ্দেশ্য এই সব সম্পদ পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু সে কথা তো দেশের মানুষকে বলা চলে না। তাই রাজস্ব বাড়ানোর কথা বলা। কিন্তু এই বাকচাতুরিতে দেশের মানুষকে ভোলানো যাবে না। বিজেপি সরকারের এই অন্যায়, জবরদস্তি এবং প্রতারণার প্রতিবাদ মানুষ করবেই।

বেসরকারিকরণের শুরু কংগ্রেস শাসনেই

দেশের এইসব সম্পদ, যার প্রকৃত মালিক দেশের জনগণ, বিজেপি সরকার পুঁজিপতিদের হাতে যে নির্বিচারে আজ তুলে দিচ্ছে, তার শুরুটা গত শতকের নয়ের দশকের গোড়ায় কংগ্রেসের নেতৃত্বের হাত ধরেই। উদারিকরণের নামে এই বেসরকারিকরণ নরসিমা রাও সরকারের সময়েই শুরু হয়। এই উদারিকরণ যে শুধুমাত্র বৃহৎ পুঁজিপতিদের জন্যই উদার এবং জনগণের জন্য চরম সর্বনাশা, তা উদারিকরণ শুরুর তিন দশক পর আজ দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। স্বাধীনতার প্রথম চার দশকে সাধারণ মানুষের ছিটে-ফোঁটা যতটুকু জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছিল, গত তিন দশকের উদারিকরণের জোয়ারে তা কোথায় তলিয়ে গিয়েছে। ধনী দরিদ্রে বৈষম্য বেড়েছে রকেট গতিতে। একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে, সাধারণ মানুষ দারিদ্রের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দেশের এক শতাংশ পুঁজিপতি আজ দেশের মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশের মালিক। ২০২০-র তথ্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকের নিরিখে ১০৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৯৪। অথচ বিগত তিন দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অংশ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির সুফল ১ শতাংশ একচেটিয়া পুঁজির মালিকরাই লুঠ করছে। ৯৯ ভাগ সাধারণ দেশবাসী বঞ্চিত হয়ে চলেছে। তাদেরই শোষণ করে, লুঠ করে পুঁজিপতিদের ভাণ্ডারে জমা হয়েছে সব সম্পদ।

ভারত একটি শোষণমূলক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র

কিন্তু এটা সম্ভব হচ্ছে কী করে? মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি দেশের ৯৯ ভাগ মানুষকে এমন করে বঞ্চিত করতে, শোষণ করতে, জাতীয় সম্পত্তি এমন করে লুঠ করতে পারছে কী করে? আর কেনই বা নির্বাচিত একটি সরকার সে কাজে পুঁজিপতিদের এমন নির্লজ্জ ভাবে সহায়তা করে চলেছে? এর সঠিক উত্তর পেতে হলে, রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্রটি ঠিক ভাবে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে, যতই বলা হোক ‘রাষ্ট্র সবার’, বাস্তবে এটি একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। যার অর্থ, পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করাই রাষ্ট্রর কাজ এবং সরকারের চরিত্রও পুঁজিপতি শ্রেণির রাজনৈতিক ম্যানেজারের। অর্থাৎ পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থরক্ষার সব রকমের ব্যবস্থা করাই তার কাজ। পুঁজিবাদী এই রাষ্ট্র পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষার জন্যই আইন, তাদের নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের, সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ দমন করে শান্তি বজায় রাখার জন্যই পুলিশ এবং প্রশাসন। মানুষ যতই ভোট দিয়ে সরকার বদলাক, রাষ্ট্রের পুঁজিবাদী চরিত্রটি বদলায় না।

জাতীয়করণ এবং উদারিকরণ দুই-ই পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে

স্বাধীনতার পর যখন সব ভারি শিল্পগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় গড়ে উঠতে থাকল তখন কংগ্রেস নেতারা জনগণের সামনে প্রচার করলেন যে এগুলি সবই সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ, এর উদ্দেশ্য জনগণের জীবনের মানোন্নয়ন করা। অদ্ভূত ব্যাপার, ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সভাপতির ভাষণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র ভবিষ্যৎ ভারতকে সমাজতান্ত্রিক পথে গড়ে তুলতে হবে বলে ঘোষণা করায় যে পুঁজিপতি শ্রেণি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে সভাপতি হিসাবে কাজ চালাতে দেয়নি, তাঁকে কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য করেছিল, সেই পুঁজিপতিরাই স্বাধীন ভারতে সমাজতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড নীরবে মেনে নিল! বাস্তবে সেদিনের শিল্প-কারখানার রাষ্ট্রীয় পরিচালনার মধ্যে সমাজতন্ত্রের ছিটেফোঁটা সম্পর্কও ছিল না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার মানে সমাজতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড নয়। সমাজতন্ত্র মানে পুঁজিবাদের উচ্ছেদ। পুঁজিপতি শ্রেণির মালিকানার উচ্ছেদ। জনগণের মালিকানা কায়েম। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে কোনও পদক্ষেপ, কোনও কর্মকাণ্ড সমাজতান্ত্রিক হতে পারে না। এ-সব কর্মকাণ্ডের সাথে সমাজতন্ত্রের যে সত্যিই কোনও সম্পর্ক নেই, তা বুঝতে কিন্তু দেশের শিল্পপতি-পুঁজিপতিদের কোনও অসুবিধা হয়নি। তাই সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার অনুকরণে নেহেরুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাই হোক বা পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্ক, বিমা, খনির জাতীয়করণই হোক, কিংবা রাষ্ট্রীয় মালিকানার শিল্প-কারখানাই হোক, পুঁজিপতিরা সেগুলিকে দুহাত তুলে সমর্থন করেছে। কারণ সদ্য স্বাধীন দেশে ভারী শিল্পের জন্য, যেমন খনিজ দ্রব্য, ইস্পাত, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি যেগুলিতে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি, ঝুঁকি বেশি এবং যেগুলি বেসরকারি শিল্পের উপকরণ, পরিকাঠামো এবং কাঁচামাল তৈরি করে এবং বিনিয়োগের সুফল পেতে সময় লাগে, সেগুলির যে বিপুল ব্যয় তার থেকে সরকার পুঁজিপতি শ্রেণিকে রেহাই দিয়ে জনগণের করের টাকায় সেগুলি গড়ে তোলে। পুঁজিপতিরা সরকারি সহায়তায় গড়ে তোলে সেই সব শিল্প, যেগুলি স্থাপনের খরচ অপেক্ষাকৃত কম এবং মুনাফা আসে দ্রুত। সরকার আমদানি ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম চালু করে, উঁচু হারে কর বসায়, যাতে বিদেশি সস্তা পণ্যের সাথে দেশীয় শিল্পপতিদের অসম প্রতিযোগিতায় নামতে না হয়। এই ভাবে স্বাধীনতার পর চার দশক ধরে ভারতীয় পুঁজিপতিরা সরকারি ছত্রছায়ায় তাদের পুঁজির বিকাশ ঘটায় এবং বিপুল পুঁজির অধিকারী হয়। কিন্তু এই পুঁজি তারা বিনিয়োগ করবে কোথায়? তাদেরই শোষণে জর্জরিত সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তত দিনে তলানিতে।

নয়ের দশকের গোড়ায় বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সাময়িক বিপর্যয়ের ফলে সমাজতন্ত্রের মুখোশের আড়াল আর দরকার ছিল না পুঁজিপতি শ্রেণির। এই অবস্থায় পুঁজিপতিরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলে। দেশের মধ্যে পুঁজিবাদ তথা পুঁজিপতি শ্রেণির বেড়ে ওঠার এই প্রক্রিয়াটিকে জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করতে তারা এবং তাদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যমগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে লাইসেন্স রাজ, পারমিট রাজ ইত্যাদি বলে নিন্দা করতে থাকে। বাস্তবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের নীতি পুঁজির বিকাশের যে লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল সেই লক্ষ্য তত দিনে পূরণ হয়ে গিয়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী পুঁজিমালিকদের আরও শক্তি সঞ্চয়ের পথে এই নীতি তখন বাধা। স্বাভাবিক ভাবেই সেই নীতি প্রত্যাহারের দাবি তোলে তারা। বাস্তবে নয়া উদারিকরণ নীতির সাথে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এস ইউ সি আই (সি) সেদিনই এর প্রকৃত চরিত্র দেশের জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছিল।

মনিটাইজেশন প্রকল্প সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করবে

এই রকম পরিস্থিতিতেই নয়ের দশকের গোড়ায় বিশ্বায়ন-উদারিকরণের নামে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ঢালাও বেসরকারিকরণ শুরু হয়। ফল হিসাবে আম্বানি-আদানিদের মতো শিল্পপতিদের রকেট গতিতে উত্থান ঘটে। দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ এবং সম্পত্তির দখল নিয়ে নেয় তারা। উৎপাদনের বিরাট অংশে এই সব শিল্পপতিদের একচেটিয়া দখলদারি কায়েম হওয়ায় তাদের বিপুল মুনাফার খেসারত হিসাবে সাধারণ মানুষের উপর চাপতে থাকে বিপুল মূল্যবৃদ্ধির বোঝা।

মনিটারি পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে নতুন করে যে সব রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ এই সব মালিকদের হাতে যাচ্ছে সেগুলিতে অতি দ্রুত ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিষেবা ব্যয়ের বৃদ্ধি ঘটবে। ট্রেন, মেট্রোর ভাড়া বাড়বে, সড়ক পরিবহণের ব্যয় বাড়বে, তেল-বিদ্যুতের দাম বাড়বে, ফোনের খরচ সহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে ব্যয় করতে হবে আগের থেকে অনেক বেশি। মূল্যবৃদ্ধি আরও ব্যাপক আকার নেবে। চাকরির ক্ষেত্রে ছাঁটাই আরও তীব্র হবে। বিজেপি নেতাদের এই প্রকল্প পুঁজিপতি-কর্পোরেটদের বিপুল মুনাফা এনে দিলেও সাধারণ মানুষের জীবনে চরম সর্বনাশ নামিয়ে আনবে। সমাজের একটা বড় অংশ এই সব পরিষেবাগুলি থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে। দেশে সব কিছু থাকলেও এর কোনও কিছুতেই তাদের কোনও অধিকার থাকবে না।

বিজেপি সরকারের এতবড় একটা সর্বনাশা সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা অত্যন্ত লজ্জাজনক। মুখে বিরোধিতার কথা বললেও ভোটবাজ এই সব দলগুলি কেউই নীতিগত ভাবে বেসরকারিকরণের বিরোধী নয়। যারা যেখানে সরকার চালিয়েছে বা চালাচ্ছে সেখানেই তারা সবাই এই নীতিকে কার্যকর করেছে। দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া দলগুলি– জাতীয় বা আঞ্চলিক যা-ই হোক, তাদের কথা না হয় বোঝা যায়, কিন্তু বামপন্থী নাম নিয়ে চলা সিপিএম-সিপিআইও সরকার চালাতে একই নীতি নিয়ে চলেছে। সিপিএম নেতারা সেদিন জনগণকে ধোঁকা দিতে ঘোষণা করেছিলেন, বিশ্বায়নের সুফল নিতে হবে। কী সেই সুফল সাধারণ মানুষ আজ জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছে।

ব্যাপক গণআন্দোলনই পারে এই সর্বনাশকে প্রতিহত করতে

বামনামধারী এই দলগুলি যদি এ ভাবে বিশ্বায়ন-উদারিকরণে সামিল না হত, যদি দেশের কোটি কোটি শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলত তবে এত সহজে পুঁজিপতিরা এই নীতিকে কার্যকর করতে পারত না। আজও যদি এই সর্বনাশা বেসরকারিকরণের নীতিকে প্রতিহত করতে হয় তবে শোষিত-বঞ্চিত জনসাধারণকে সংগঠিত করে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) সর্বশক্তি দিয়ে সেই আন্দোলন গড়ে তোলার কাজই করে যাচ্ছে। সর্বত্র সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে সংগঠিত করে গড়ে তুলছে ‘নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ’। আজ যারাই বিজেপি সরকারের এই সর্বনাশা পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন তাদেরই এই প্রতিবাদে সামিল হতে হবে।