দেড় গুণ এমএসপি-র দাবি আন্দোলন ছাড়া আদায় হবে না কৃষক সম্মেলনে কমরেড সত্যবান

২৪ আগস্ট দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে সংযুক্ত কিসান মোর্চার (এসকেএম) সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া কিসান খেতমজদুর সংগঠনের (এআইকেকেএমএস) সর্বভারতীয় সভাপতি কমরেড সত্যবান। সংযুক্ত কিসান মোর্চা দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের বৃহত্তর মঞ্চ, যার মধ্যে এ আই কে কে এম এস সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। ১৩ মাস ধরে চলা ওই আন্দোলনে ৭৫০ জন কৃষক শহিদের মৃত্যুবরণ করেন। এই আন্দোলনের সামনে মাথা নত করে মোদি সরকার তিনটি কালা কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

ভারতে কৃষি সমস্যা সম্পর্কে সত্যবান বলেন, আমাদের দেশ পুঁজিপতিদের দ্বারা শাসিত। চাষির উৎপাদিত পণ্য পুঁজিপতিদের দ্বারা লুট হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা সরাসরি শোষিত হচ্ছে কারখানায়-অফিসে। সার, বীজ, চাষের যন্ত্রপাতি, কীটনাশক– সবই পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে। চাষির ফসলের উপরও পুঁজিপতিদের আধিপত্য। স্বাধীনতার পর ৭৬ বছর ধরে শ্রমিক-চাষিকে নির্মম শোষণের মধ্য দিয়ে ভারতের পুঁজিপতিরা বিশ্বে সেরা দশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এবং তারা সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অর্জন করেছে। তারা পুঁজি রপ্তানি করে বিদেশের সস্তা কাঁচা মাল ও শ্রমশক্তি লুট করছে। একইভাবে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের পুঁজি বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

কৃষি উৎপাদনের খরচ অত্যধিক বেড়ে চলেছে, কিন্তু কৃষি থেকে আয় কম। চাষি ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। লাখ লাখ চাষি আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে খেতমজুর অর্ধেক। এই পরিস্থিতিতে ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্যের দাবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের দাবি, এমএসপি আইনসিদ্ধ কর। প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, আগামী দিনে এমএসপি যদি আইনসিদ্ধ হয়ও, সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদির দাম বাড়িয়ে দিয়ে পুঁজিপতিরা তাকে অকেজো করে দেবে। অবশ্যই তখন শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমাদের দাবি, উৎপাদন খরচের দেড়গুণ এমএসপি দিতে হবে। একই সঙ্গে মাণ্ডি থেকে, কৃষি বাজার থেকে এই পুঁজিপতিদের সরাতে হবে। একমাত্র তখনই কৃষকরা প্রকৃত অর্থে এমএসপি পাবে।

তিনি বলেন, গ্রামের গরিব মানুষ এবং চাষি উভয়েরই প্রবল সমস্যা কর্মসংস্থান না হওয়া। ফলে চাকরির দাবি কৃষক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। দেশের মানুষের উপর কালা বিদ্যুৎ আইনের খড়গ ঝুলছে। একে প্রতিহত করতে হবে। সম্মেলন যে দাবি সনদ তুলে ধরেছে তাকে সমর্থন করে সত্যবান বলেন, অক্টোবরে সারা দেশে ‘দমন-পীড়ন বিরোধী দিবস’ পালন, নভেম্বরে দিল্লি অভিযান এবং এরই ধারাবাহিকতায় দেশে ধর্মঘট করার প্রস্তাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, কে মূল শত্রু? কার বিরুদ্ধে লড়াই? এর উত্তর আমাদের চাষিদের মুখে মুখে, এমনকী তাঁদের ছেলেমেয়েদের মুখেও। লড়াই আদানির বিরুদ্ধে, আম্বানির বিরুদ্ধে, কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে, পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে। মোদি তাদের মুখোশ মাত্র। এই মুখোশ টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে আমাদের। এটা ভোটের দ্বারা হবে না, শ্রমিক-কৃষক যুক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পুঁজিপতিদের শোষণরাজ খতম করতে হবে।

Check Also

বামপন্থী মনোভাবাপন্ন জনগণের প্রতি এস ইউ সি আই (সি)-র আবেদন

আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে পশ্চিমবাংলার একটা বিশিষ্ট স্থান আছে। আমরা সকলেই তার …