গ্রাহক প্রতিরোধে স্মার্ট মিটার লাগাতে পারল না কোম্পানি

বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থবিরোধী স্মার্ট মিটার লাগানোর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ রাজ্যের তৃণমূল সরকার অতি উৎসাহে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ৩৭ লক্ষ মিটার কেনার ব্যবস্থা করেছে। আসাম, ওড়িশা, জম্মু-কাশ্মীর, মধ্যপ্রদেশ, বিহার সহ বেশ কিছু রাজ্যে স্মার্ট মিটার বিরোধী গ্রাহক আন্দোলনের খবর এখন সকলেই জানেন।

সর্বত্রই অত্যধিক বিল, টাকা শেষ হলেই যখন তখন লাইন চলে যাওয়া, ব্যবহার না করেও বিশাল অঙ্কের খারাপ বা বন্ধ মিটারের বিলের সংশোধন না হওয়া এবং সর্বোপরি চাহিদা যখন যেমন বাড়বে দাম তেমন তেমন বাড়ার আক্রমণে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে এই রাজ্যে ও জেলায় জেলায় প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে অল বেঙ্গল ইলেক্ট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবেকা)। এই মিটার লাগাতে গেলে জেলাগুলোতে ক্ষুদ্রশিল্পের গ্রাহকরা কোথাও ব্যক্তিগতভাবে, কোথাও গ্রাহক প্রতিরোধ কমিটি থেকে বাধা দেওয়ায় বণ্টন কোম্পানির লোকজনকে মিটার না লাগিয়ে ফিরতে হচ্ছে।

গত অক্টোবরে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কেওটশা সিসিসি (কাস্টমার কেয়ার সেন্টার)-এর বাগজোলা বাজারে প্রথমে গ্রাহকদের আপত্তিতে মিটার লাগাতে না পেরে ফিরে যায় কোম্পানির লোকজন। স্টেশন ম্যানেজার এই কারণে পাঁচজন গ্রাহকের লাইন কাটার হুমকি দিয়ে চিঠি দেন। অ্যাবেকার পক্ষ থেকে এলাকায় এর প্রতিবাদে মাইক প্রচার করে গ্রাহকদের সংগঠিত করে বিদ্যুৎ অফিসে চিঠি প্রত্যাহারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয়। স্টেশন ম্যানেজার আর কাউকে এরকম চিঠি দেবেন না বলে আশ্বাস দিতে বাধ্য হন।

৭ ডিসেম্বর হুগলি জেলায় আরামবাগ সিসিসি-র উল্লাসপুরে একটি গ্রিল কারখানায় স্মার্ট মিটার নিয়ে কোম্পানির লোকেরা গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে মিটার ঘর ভেঙে ডিজিটাল মিটারের লাইন কেটে দেয়। খবর পেয়ে ওই গ্রাহক ও এলাকার অন্যান্য সাধারণ গ্রাহকরা দলবদ্ধভাবে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে কোম্পানির গাড়ি আটকে দেয়। শেষপর্যন্ত পুরনো মিটারেই পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কোম্পানি বাধ্য হয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড় সিসিসি-র রসুলপুরে ক্ষুদ্রশিল্প গ্রাহকদের স্মার্ট মিটার লাগাতে এসেও গ্রাহক-প্রতিরোধে কোম্পানির লোকেরা মিটার না লাগিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

হাওড়া গ্রামীণ জেলার অমরাগোড়ী, বীরশিবপুর, পাঁচলা, উলুঘাটা সহ সাতটি সিসিসিতে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে স্মার্ট মিটার লাগাতে এসেছিল কোম্পানি। কেউ কেউ কারখানা বন্ধ করে রেখেছিল, বাকিরা প্রবল আপত্তি জানিয়ে কোম্পানির লোকেদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।

হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া সিসিসি-র টিন্না ও কালনা রোডের জনৈক গ্রাহক অমূল্য মণ্ডল এবং অরুণ দে প্রবল আপত্তি জানিয়ে তাদের ক্ষুদ্রশিল্পে স্মার্ট মিটার লাগাতে দেননি।

৮ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরের তোলাপাড়ায় হাস্কিং মেশিনের মালিক অজয় সিংহের দোকানে স্মার্ট মিটার লাগাতে আসেন বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারীরা। তিনি বাড়িতে না থাকায় বাড়ির মহিলারা মিটার লাগাতে বাধা দেন। জোর করে লাগানোর চেষ্টা করেন কর্মচারীরা। খবর পেয়ে রাজাবাজার এলাকার ক্ষুদ্রশিল্প তথা অ্যাবেকার নেতা সৌমেন সাহা উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করায় বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারীরা পিছু হটতে বাধ্য হন।