কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে স্কুল প্রতিবাদে ছাত্ররা রাস্তায়

১ মার্চ কলকাতায় বেথুন স্কুলের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল এআইডিএসও-র

নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়নি। কত দিনে তা শেষ হবে তা-ও কারও জানা নেই। অথচ মার্চের শুরুতেই রাজ্যে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গেল। রাজ্যের বেশ কিছু স্কুল-কলেজকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে এবং তার জন্য সেগুলি খালি করে দিতে হবে। বিভিন্ন জেলায় ৩০টি ও কলকাতায় সাতটি স্কুলকে এবং কয়েকটি কলেজকে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এমন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজগুলির অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। শিক্ষকরাও সরকারি এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। সকলেরই বক্তব্য, এখনও নির্বাচন ঘোষণা হয়নি, এখনই যদি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয় তবে সব মিলিয়ে প্রায় মাস তিনেক স্কুল বন্ধ থাকবে। তারপরে পড়বে গরমের ছুটি। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বহু স্কুল বন্ধ ছিল, কিছু স্কুল আংশিক বন্ধ ছিল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যও বহু স্কুলে ছুটি ছিল। আবার যদি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকে তবে ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস শেষ হবে কী করে? ছাত্রছাত্রীরা আরও পিছিয়ে পড়বে। নির্বাচন কমিশন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবলেন না!

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এআইডিএসও। তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছে, মিছিল করেছে। স্কুল বন্ধের নোটিস প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।

সরকারি স্কুলগুলির ভেঙে পড়া পরিকাঠামোর কথা কারও অজানা নেই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, পাশফেল নেই। শিক্ষকদের শিক্ষা-বহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত অংশ তাঁদের সন্তানদের সরকারি স্কুলের পরিবর্তে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে চলে গেছে। ফলে ছাত্রছাত্রীর অভাবের অজুহাতে সরকার নিজেই ৮২০৭টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এই যখন পরিস্থিতি তখন রাজ্য সরকারকে কোনও কড়া প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না। তারা এ কথা বলতে পারল না যে, সরকার পড়াশোনার ক্ষতি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্কুলে রাখার অনুমতি দেবে না। রাজ্য জুড়ে, বিশেষত কলকাতা শহরে অজস্র কমিউনিটি হল, গেস্ট হাউস, স্টেডিয়াম রয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের বহু প্রতিষ্ঠানেও জায়গা আছে। চাইলেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সেগুলিতে রাখার ব্যবস্থা করা যেত। তা করা হল না কেন? তবে কি ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারি শিক্ষা কাঠামোটিকে ভেঙে ফেলাই উদ্দেশ্য? রাজ্য সরকারের মনোভাব দেখে এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না বহু অভিভাবক। আর কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যও অন্য কিছু নয়। হলে তারাও স্কুলে কোপ না বসিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথাই ভাবত। এ আই ডি এস ও নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা নির্বাচন কমিশনে এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেবেন সেনাদের স্কুলে না রেখে অবিলম্বে তাঁদের রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য। অভিভাবকরা ছাত্রদের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেছেন, আরও জোরালো প্রতিবাদ করুন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।

সমস্যাটা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়। আজ সেনা রাখার জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হচ্ছে, আগামী কাল অন্য অজুহাতে তা বন্ধ হবে। এমন নজির ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গবাসী দেখেছে। আসল সমস্যা শিক্ষা সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির। সেই দৃষ্টিভঙ্গি যে শিক্ষার অনুকূল নয়, তা আজ কে না জানে! তাই বাহিনীকে দ্রুত সরানোর দাবিতে সমস্ত অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক সংগঠন সকলকেই সোচ্চার হতে হবে।